বগুড়ায় শেষ সময়ে জমে উঠেছে অভিজাত বিপনীগুলোতে ঈদের কেনাকেটা
জমে উঠেছে বগুড়ার ঈদ মার্কেট। শেষ মূহুর্তে তীব্র গরম অসহনীয় হয়ে উঠার কারণে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও পোষাকের প্রতি সৌখিন মানুষেরা ছুটছেন বগুড়ার অভিজাত বিপনী-বিতানগুলোতে। বিশেষ করে রানার প্লাজাসহ জলেশ্বরীতলার এসি মার্কেটগুলোতে এখন উপচেপরা ভিড়। ক্রেতারা তাদের পছন্দের কাপড় কিনছেন বিভিন্ন দোকান আর ব্যান্ডের শো-রুমগুলো ঘুরে ঘুরে। তবে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বগুড়ার এই অভিজাত ঈদ মার্কেটগুলোতে পুরুষদের চাইতে নারী ক্রেতার সংখ্যাই বেশী।
কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রথম ব্যতিক্রম দেখা গেল বগুড়ায় ভারতীয় সিরিয়ালের কোন কাপড়ের প্রতি ক্রেতাদের কোন আকর্ষণ নেই। তীব্র গরমে সবাই ঝুঁকেছেন দেশীয় সুতি কাপড়ের প্রতি তেমনি ছেলেরাও এইবার ঈদে জিন্স প্যান্টের বদলে বেশী কিনছেন গ্যাবাটিনের এক্সপোর্ট কোয়ালিটির এবং ইন্ডিয়ান প্যান্টগুলো। বগুড়ার অভিজাত মার্কেট হিসেবে এইবার সবচেয়ে বেশী ভিড় লক্ষ্য করা গেছে শহরের রানার প্লাজাতে। মার্কেটের বিভিন্ন ফ্লোরে আলাদা আলাদাভাবে রয়েছে নারীদের বিভিন্ন ডিজাইনের পোষাক, পুরুষদের জন্য বিভিন্ন ব্যান্ডের শোরুম, শিশুদের পোষাক, জুতা-স্যান্ডেল এর সমারোহ এবং ফুড কোড।
মার্কেটের দোতলায় নারীদের আধুনিক পোষাকের শোরুম নকশী ফ্যাশন এর মালিক জিসান আহম্মেদ এবং বাঙালী ফ্যাশানের পরিচালক নারী উদ্যেক্তা সামিয়া সাবরিন পিংকির সাথে কথা বললে এই বছর ঈদের মার্কেট প্রসঙ্গে তারা জানান, নারী ক্রেতার সংখ্যা গত কয়েক বছরের তুলনায় এইবার অনেক ভাল। বিদেশী নানা পোষাকের কালেকশন থাকলেও ক্রেতারা দেশীয় সুতি থ্রি-পিচ ও সুতি শাড়ি নিতেই বেশী আগ্রহী। তাছাড়া এইবার ঈদে নারী পোষাকের মধ্যে সবচেয়ে বেশী চলছে পাকিস্তানি পোষাক সারারা ও গারারা। এছাড়াও ইন্ডিয়ান ফুলকাড়ি, দেশীয় হাতের কাজের থ্রি-পিচ, ভারতের জয়পুর এর কাতান, বেনারস থ্রি-পিচ, ইন্ডিয়ান বুটিকস্ পোষাকের চাহিদাও এবার বেশ চোখে পড়ার মতো। অভিজাত বিপনী-বিতান হিসেবে নিত্যনতুন এই পোষাকের দাম ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার পর্যন্ত।
আবার এই মার্কেটেই অবস্থিত আড়ং শোরুমে রয়েছে তাদের নিজস্ব পণ্য যার মধ্যে এবার বগুড়ায় সবচেয়ে চাহিদা বেশী শিশুদের পোষাক। এছাড়াও শাড়ির মধ্যে কটন, সিল্ক ও মসলিন কাপড় কিনছেন এই শহরের উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও ধনী শ্রেণীর ক্রেতারা এখান থেকে যার মূল্য ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আবার রানার প্লাজা ও জলেশ্বরীতলার সকল শোরুম ঘুরে ঘুরে দেখা যায় প্রতিবারের মতো এবারও ছেলেদের জন্য রয়েছে নানা ব্যান্ডের নানা ডিজাইনের পোষাক। ভারতীয় ও থাইল্যান্ডের গেঞ্জী রয়েছে এবারের বাজারে যার মূল্য ৩ হাজার টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত, রয়েছে ভারতীয় টিস্যু কাপড়ের প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জী যার মূল্য ২ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে দেশীয় গার্মেন্টেসের পোষাকের চাহিদা বেশী পুরুষদের ক্ষেত্রেও।
তবে এবারের ঈদে নারী ও শিশুদের পোষাকের ভাল চাহিদা থাকলেও পুরুষদের পোষাকের ক্রেতা কম বলে বলছেন অনেক ব্যবসায়ীরা। একই চিত্র জলেশ্বরীতলাতেও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জলেশ্বরীতলার বিভিন্ন শোরুমে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও গত বারের তুলনায় এবার ব্যবসা খারাপ বলে বলছেন বিভিন্ন ব্যান্ডের শোরুমের পরিচালকরা। আবার বিভিন্ন অফারের নামে ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশী টাকাও নেয়া হচ্ছে বলে জানান সাধারণ ক্রেতাদের অনেকে। অনেকে বলছেন নির্দিষ্ট পোষাকে ২০% ডিসকাউন্ট লেখা থাকলেও দাম বেশী রেখে তা ডিসকাউন্ট দেখিয়ে কমিয়ে ক্রেতাদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন সাধারণ ক্রেতাদের অনেকে। জলেশ্বরীতলা ব্যান্ডের শোরুমগুলোর মধ্যে সবসময় ক্রেতাদের পদচারণা থাকে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফড়িং, ডিমান্ড, ইজি, এসটেসি, টপমার্ট, ইনফিনিটি, আমব্রেলা, এলিট ক্লাব, হ্যান্ডিবাজার, পারপেল, ক্যাটস্ আই ইত্যাদি। নানা কালেকশন রাখলেও বগুড়ার বাইরের ক্রেতা এবার শহরে কম আসায় ঈদ মার্কেটে এর বিরুপ প্রতিক্রিয়া পরেছে বলে জানায় তারা। আবার গ্রামগঞ্জে ধানের দামের দরপতনের প্রভাবে আগে যারা এই অভিজাত বিপনী-বিতানগুলোতে আসতো তারা এবার নিউমার্কেট এবং হকার্স মার্কেট থেকেই সীমিত পরিসরে কেনাকাটা করেছে বলে মন্তব্য করছে অনেক ব্যবসায়ীরা।
তবে ঈদের ছুটি ঘোষণার পর বাকি শেষ সময়ের মার্কেটে ভাল বেচাকেনার আশা করছেন অভিজাত বিপনীবিতানগুলোর এই ব্যবসায়ীরা। রানার প্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুসাহেব ইসলাম সাকিব এইবার ঈদ মার্কেট বিষয়ে বলেন, প্রতি বছরের তুলনায় এইবার ক্রেতা অনেকটাই কম। এসি মার্কেট হওয়ায় গরমে অনেকে শুধু ঘুরতে আসলেও সত্যিকারের ক্রেতা কম। বিভিন্ন পণ্যে অফার, বিকাশ পেমেন্টে ডিসকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটায় ছাড় সহ নানা অফারও রয়েছে ঈদ মার্কেটে। সাথে ক্রেতাদের সুবিধার্থে সকল ব্যবস্থায় মার্কেটের পক্ষ থেকে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস.এম বদিউজ্জামান ঈদ মার্কেটে সাধারণ ক্রেতাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানান, ঈদ মার্কেটে এখন পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি মর্মে তিনি বলেন ঈদ মার্কেটকে ঘিরে পুুলিশের পক্ষে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মার্কেটে বিশেষ পিকেট পার্টি, বিশেষ টহল পার্টির পাশাপাশি পোষাকে এবং সাদা পোষাকে যেকোন ধরনের অপরাধকে রুখে দিতে পুলিশ সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে। শেষ পর্যন্ত নির্বিঘ্নে সকলে ঈদ উদযাপন করতে পারবে বলেও আশা করছেন জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা।