বগুড়ায় নেই পর্যাপ্ত বিনোদন কেন্দ্র, ঈদে পর্যটন স্পটগুলোতে উপচে পড়া ভিড়

ঈদের মতো উৎসবের সময় বগুড়ার পর্যটন স্পটগুলো স্থানীয় ও বাইরের দর্শনার্থীদের কাছে একটি বড় আকর্ষণ হয়ে ওঠে। ঐতিহাসিক মহাস্থানগড় ও নতুন করে জনপ্রিয়তা পাওয়া বগুড়ার "মিনি জাফলং" এর মতো স্থানগুলো ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত বিনোদন কেন্দ্রের অভাবে এই স্পটগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা দর্শনার্থীদের ভ্রমন অভিজ্ঞতাকে ম্লান করে দেয়।
বগুড়ার শিবগঞ্জের মহাস্থানগড়, শহরের অদূরে মোমো ইন ইকো পার্ক অ্যান্ড রিসোর্ট, নাজ গার্ডেন, সারিরিয়াকান্দি ও শেরপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা যায়, মহাস্থানগড়ে গোকূল মেধ, বেহুলার বাসর ঘর, শাহ সুলতানের মাজার, ভাসু বিহার, গোবিন্দ ভিটাসহ আরো অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলতে বিপুল সংখ্যক বিনোদনপ্রেমী ভীর করেছিল। বগুড়া শহরের অদূরে অবস্থিত এই আধুনিক বিনোদন কেন্দ্রে ছিল পর্যটকে ভরপুর। সারিয়াকান্দির যমুনা নদীর তীরে কালিতলা হার্ড পয়েন্ট এবং প্রেম যমুনার ঘাট ছিল প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের কলাহলে উচ্ছ্বাসিত। শেরপুর উপজেলার জোড়গাছা ব্রিজের নিচে বাঙালি নদীর সংস্কারে পলি জমে যাওয়ার ফলে স্বচ্ছ পানির প্রবাহ সৃষ্টি হয়েছে। নদীর তলদেশে বালুর স্তর ও ছোট ছোট কুচি পাথর তৈরি হওয়ায় দেখতে কিছুটা সিলেটের জাফলং ন্যায় তাই স্থানীয়রা একে নাম দিয়েছে ''বগুড়ার মিনি জাফলং''। এখানে পর্যটকদের পদচারনায় তিল ধারনের জায়গা ছিল না। এছারাও খেরুয়া মসজিদ, স্যাটকম পার্ক, মকটেল আইল্যান্ড, ঝাঁজর, শেরপুর—ধুনট গামী রাস্তার বোয়ালকান্দিতে ক্যানেল চায়ের বাড়ী ও দুপাশের নয়নভরা সৌন্দর্য দেখতে ঘুরতে আসা মানুষে ছিল পথপূর্ণ।
শেরপুর শহরের অদূরে সুঘাটে বাঙালি নদীতে ড্রেজিং এর ফলে সৃষ্ট ''বগুড়ার মিনি জাফলং'' এ ঘুরতে আসা আলমগির হোসেন, সাকিল অনিক ও সাইফুল জানান, নামের সঙ্গে খানিকটা সিলেটের জাফলংয়ের মিল আছে। নদীর পানি পরিষ্কার তবে এখানে বিভিন্ন কারখানার বর্জ ফেলায় তা পানির সাথে মিশে পানিকে দুষিত করছে। বিষাক্ত পানিতে নেমে অনেকেরই চুলকানিসহ নানাবিধ চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানতে পারছি। সেক্ষেত্রে পানিতে না নামাই বেশি ভালো। আমরা চাই নদীর সৌন্দর্য যেন নষ্ট না হয়। স্থানীয় প্রশাসনসহ সবাইকে পরিবেশ বাঁচানোর দায়িত্ব নিতে হবে।
রাজশাহী থেকে মহাস্থানগড়ে ঘুরতে আসা সুমাইয়া আক্তার বলেন, পরিবারের সঙ্গে এসেছি, সবাই খুব উপভোগ করেছে। গোকুল মেধ আর জিয়ৎকুণ্ড দেখে মনে হয়েছে এখানে কত গল্প লুকিয়ে আছে। বেহুলার বাসর ঘরের গল্প শুনে রোমাঞ্চিত হয়েছি। বইয়ের পড়া মৌর্য, গুপ্ত, পাল আমলের নিদর্শন দেখে বাস্তব ইতিহাস জানতে পারলাম।
মোমো ইন ইকো পার্কে রংপুর থেকে আসা মোহাম্মদ আলী বলেন, বগুড়ায় এটা অনেক সুন্দর একটা জায়গা এখানে বিশাল এলাকা জুরে ইকো পার্ক, সুইমিং পুল, লেকের পাশের সবুজ পরিবেশ আর বিলাসবহুল রুম দেখে মুগ্ধ হয়েছি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের ছুটিতে এসেছিলাম, সবাই খুব উপভোগ করেছে। খাবারের মানও দারুণ। তবে ছুটির সময় একটু ভিড় বেশিই ছিল।
স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং পর্যটন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঈদ ও অন্যান্য ছুটির দিনে পর্যটকদের ভিড় সামলাতে এবং তাদের জন্য আরও উপভোগ্য ভ্রমন অভিজ্ঞতা তৈরি করতে, শহরের পর্যটন স্পটগুলোর উন্নয়ন এবং আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন খুবই জরুরি। বিশেষত, থিম পার্ক, শপিং মল, শিশুদের খেলার জায়গা, পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও খাবারের ব্যবস্থা এবং ইকো পার্কসহ আরও বিনোদনমূলক স্পট পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সাহায্য করতে পারে।