প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর, ২০২৫ ২৩:৫৪

নবান্ন উপলক্ষে বগুড়ায় বিশাল মাছের মেলা

উপজেলা সংবাদদাতা, দুপচাঁচিয়া, বগুড়া
নবান্ন উপলক্ষে বগুড়ায় বিশাল মাছের মেলা

নতুন ধান ঘরে তোলার মধ্য দিয়ে কৃষকের ঘরে ঘরে যখন নবান্নের আনন্দ, তখনই কৃষিমুখী মানুষের মাঝে বইতে থাকে উৎসবের হাওয়া। “নতুন ধান্যে হবে নবান্ন” কবির এ অকাট্য বাক্যের ধারাবাহিকতায় দুপচাঁচিয়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নানা আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করেছেন নবান্ন উৎসব। আর এ উৎসবকে কেন্দ্র করে এলাকায় বসেছে বৃহৎ ঐতিহ্যবাহী বড় মাছের মেলা। উপজেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির আয়োজনে গত ১৭ নভেম্বর সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দিনব্যাপী দুপচাঁচিয়া সিও অফিস বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বসে এই বিশাল মাছের মেলা। নবান্নের আগের দিন সন্ধ্যা থেকেই বিভিন্ন উপজেলা  ও জেলা থেকে পিকআপ, ট্রাক ও ভটভটিতে করে সারি সারি জ্যান্ত বড় মাছ নামানো শুরু হয় মেলায়। দূর থেকে ভেসে আসে মানুষের গমগম শব্দ, আর কাছাকাছি গেলে শোনা যায় মাছ বিক্রেতাদের ডাকডাকালি। রাতভর ও পরদিন সকাল থেকে দিনব্যাপী চলে মাছ কেনাবেচা।
এবারের মেলায় বিভিন্ন প্রজাতির বড়ছোট বহু ধরনের মাছ উঠেছিল। বেচাকেনাও হয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। ব্যবসায়ীদের হিসাব অনুযায়ী, এ মেলায় প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর মাছের আমদানি বেশি হওয়ায় দামও ছিল তুলনামূলক ক্রেতাদের নাগালে। মেলায় ২২ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ১,৪০০ টাকা কেজি এবং ১৭ কেজি ওজনের ব্রিগেড মাছ ১,০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রির ডাক শোনা গেছে।
মাছ কিনতে আসা ক্রেতা সনাতন শাহ বলেন, “এবার নবান্নের মেলায় প্রচুর মাছ এসেছে, দামও মোটামুটি সহনীয়। আমি ৬ কেজি ওজনের কাতলা মাছ কিনেছি ৫৫০ টাকা কেজি দরে, আর ব্রিগেড মাছ ৫০০ টাকা কেজিতে।”
আরেক ক্রেতা পৌর এলাকার শিবলু জানান, “মনে হচ্ছে দাম একটু বেশি। আমি ৮ কেজি ওজনের কাতলা মাছ কিনেছি ৬৫০ টাকা কেজিতে।” 
মাছের মেলার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে কথা হয় সিও অফিস বাসস্ট্যান্ড মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিসমিল্লাহ মৎস্য আড়ৎ-এর পরিচালক উমর ফারুকের সঙ্গে। তিনি বলেন, “এ বাজারে ৫টি আড়ৎ রয়েছে। অনেক দিন ধরেই নবান্ন উপলক্ষে এখানে বড় মাছের মেলা বসে। রুই, কাতলা, চিতল, ব্রিগেট, সিলভার, কার্ফু,পাঙ্গাশসহ বিভিন্ন প্রজাতির বড় মাছ এখানে ওঠে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করি।”
সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আলম মৎস্য আড়ৎ-এর পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক আলম বলেন, “প্রতিবছরই আমাদের ঐতিহ্যবাহী এই মাছের মেলার পরিধি বাড়ছে। এ বছর মাছের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি হওয়ায় দাম ছিল সহনীয়। তবে পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে আমরা ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা দিতে পারিনি।” তিনি আরও বলেন, “উপজেলা ও পৌর প্রশাসন যদি একটি উপযুক্ত আড়তের জায়গা বরাদ্দ করে দিতেন, তবে আমরা আরও সুশৃঙ্খলভাবে মেলা পরিচালনা করতে পারতাম। একই সঙ্গে বহু বছরের ঐতিহ্য অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব হতো।”
নবান্ন উৎসবকে ঘিরে দুপচাঁচিয়ার এই মাছের মেলা শুধু বেচাকেনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি এখানে বসবাসকারী মানুষের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উৎসবের অন্যতম বহিঃপ্রকাশ এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।

 

উপরে