প্রকাশিত : ৫ এপ্রিল, ২০১৯ ১৮:১০

ট্রাম্প ও আমেরিকার সমালোচনা করে তদন্তের মুখোমুখি ম্যারাডোনা

অনলাইন ডেস্ক
ট্রাম্প ও আমেরিকার সমালোচনা করে তদন্তের মুখোমুখি ম্যারাডোনা

আর্জেন্টিনার মহাতারকা দিয়াগো ম্যারাডোনা মানেই বিতর্ক এবং বিতর্ক। এই শব্দটি যেন তার সমার্থক হয়ে গেছে। এতদিন মাদক, নারী, ফুটবলসহ নানা বিষয়ে বিতর্কিত হয়েছেন তিনি। এবার জড়ালেন রাজনৈতিক বিতর্কে। ভেনেজুয়েলার বামপন্থী রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরোর প্রশংসা করায় ছিয়াশির বিশ্বকাপজয়ী তদন্তের মুখে পড়েছেন। সেই সঙ্গে একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানোর তীব্র প্রতিবাদ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুণ্ডুপাত করতেও ছাড়েননি  ম্যারাডোনা।

আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি এখন মেক্সিকোর দ্বিতীয় ডিভিশন ক্লাব দোরাদোস দে সিনালোয়ার কোচ। তার ক্লাব রবিবার তাম্পিকো মাদেরোকে ৩-২ গোলে হারানোর পরে ম্যারাডোনা সাংবাদিক সম্মেলনে এসে মন্তব্য করেন, 'এই জয় আমি নিকোলাস মাদুরো আর ভেনেজুয়েলার মানুষকে উৎসর্গ করছি। যারা এই মুহূর্তে অসম্ভব কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।'

এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মেক্সিকোর ফুটবল ফেডারেশন ম্যারাডোনার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। তার বিরুদ্ধে ফেডারেশনের একাধিক নৈতিক আচরণ বিধি ভাঙার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু ম্যারাডোনা সে সব বিধির পরোয়া করেননি। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একেবারে সরাসরি বলেছেন, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের দুনিয়ার হর্তাকর্তা মনে করে। দাবি করে, বিশ্বের সব চেয়ে শক্তিশালী বোমা ওদের কাছে আছে। আর যে কোনো সময় তা যে কোনো জায়গায় ফেলে আসতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন আমাদের সঙ্গে সেটা কিছুতেই হতে দেব না।'

একটা মামুলি ফুটবল ম্যাচ নিয়ে কথা বলতে এসে ম্যারাডোনা কার্যত রাজনৈতিক নেতার মতো বক্তব্য রাখেন। ভেনেজুয়েলার বামপন্থী নেতা মাদুরোর সঙ্গে তার খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সে দেশে গিয়ে ম্যারাডোনা বন্ধুর হয়ে নির্বাচনী প্রচারেও অংশ নিয়েছিলেন। যে নির্বাচনকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলে দিয়েছে অবৈধ এবং অনৈতিক। এই মুহূর্তে ভেনেজুয়েলা তীব্র রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

মাদুরোর বিরুদ্ধে সক্রিয় ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যে পঞ্চাশের বেশি দেশকে ঐক্যবদ্ধ করে বিরোধী নেতা খুয়ান গুয়ায়দোকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। যা মানেনি রাশিয়া, তুরস্ক, চিনের মতো দেশ। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকেই ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মনে করছে। এমনকি সে দেশে সেনা অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টাও করছে বলে অভিযোগ। যে কারণে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মাদুরো পুনর্নিবাচিত হলেও সেই নির্বাচনকে বলা হচ্ছে অবৈধ।

ম্যারাডোনার সঙ্গে দক্ষিণ আমেরিকার অন্য বামপন্থী নেতাদের চিরকালই খুবই ভালো সম্পর্ক। এক সময় তিনি কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট  ফিদেল কাস্ত্রোকে নিজের 'দ্বিতীয় পিতা' বলে মন্তব্য করেছিলেন। হাভানায় তার নিয়মিত যাতায়াতও ছিল। এক সময় চিকিৎসার জন্য সেখানে তিনি দীর্ঘ দিন ছিলেন। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তিনি প্রবল সমালোচক।

ট্রাম্পের সঙ্গে ম্যারাডোনা একবার তুলনা করেছিলেন সোনালি চুলের জনপ্রিয় পুতুল-চরিত্র চিরোলিতার। সত্তরের দশকে আর্জেন্টিনার এক টিভি অনুষ্ঠানে এই পুতুল-চরিত্র দারুণ জনপ্রিয় ছিল। ম্যারাডোনা অতীতে একবার মন্তব্য করেন, 'যতই চেষ্টা করুক, ওদের ওই চিরোলিতারও (ট্রাম্পের) আমাদের কিনে নেওয়ার ক্ষমতা নেই।'

এদিকে মেক্সিকোর ফুটবল ফেডারেশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি ম্যারাডোনার মন্তব্যের তদন্ত শুরু করেছে। ফেডারেশনের একটি ধারায় বলা আছে, ফুটবলের সঙ্গে জড়িত সবাইকে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিষয়ে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। তদন্তে 'দোষী' প্রমাণিত হলে ছিয়াশির বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার সেরা ফুটবলার নির্বাসিত হতে পারেন। অথবা হতে পারে আর্থিক জরিমানা।

উপরে