জেনে নিন ফুটবল বিশ্বকাপের ৩২ দলের ডাকনাম
বিশ্ব খেলাধুলার সবচেয়ে জমজমাট আসর ফুটবল বিশ্বকাপ। যেখানে মাঠের লড়াই যেমন উত্তেজনা ছড়ায় তেমনি মাঠের বাইরে নানান দেশ শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কেও মেলে পরিষ্কার ধারণা। মাসব্যাপী এই আসরটি পরিণত হয় সত্যিকারের এক উৎসবে।
এবারের কাতার বিশ্বকাপে বরাবরের মতো খেলবে ৩২টি দল। এই সবগুলো দলেরই রয়েছে ডাকনাম বা আদুরে নাম। সেসব নামের পেছনেও আবার রয়েছে স্পষ্ট ঘটনা বা ইতিহাস। আবার কোনো কোনো দলের রয়েছে একাধিক আদুরে নাম। যেগুলো ধরেই ডাকে ভক্তরা।
বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দল ব্রাজিলের রয়েছে ছয়টি আদুরে নাম। এছাড়া পতাকা ও জার্সির কালারের জন্য আর্জেন্টিনার ডাকনাম হয়েছে লা আলবিসেলেস্তে। নৌপথে সুশোভিত ইতিহাসের কারণে পর্তুগালকে ডাকা হয় দ্য নেভিগেটরস নামে।
এমনভাবে ৩২টি দলেরই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ডাকনাম। একনজরে দেখে নেওয়া যাক সেগুলো:
অস্ট্রেলিয়া- সকারু
দেশটির সিডনিভিত্তিক সাংবাদিক টনি হরস্টেড চেয়েছিলেন আইকনিক ক্যাঙ্গারুর সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখতে। সেখান থেকে সকার ও ক্যাঙ্গারু শব্দ দুইটি মিলে হয়েছে সকারু।
ইরান- টিম মেলি
পার্সিয়ান ভাষায় টিম মেলির অর্থ হলো জাতীয় দল। এছাড়া শিরান-এ ইরান (ইরানিয়ান সিংহ), শিরদেলান (সিংহের হৃদয়) ও প্রিন্স অব পার্সিয়া নামেও ডাকা হয় ইরান দলকে।
জাপান- সামুরাই ব্লু
ঐতিহাসিক সামুরাই প্রেক্ষাপট থেকে জাপানকে সামুরাই ব্লু বলা হয়।
কাতার- দ্য মেরুন
নিজেদের হোম জার্সির রঙের ভিত্তিতে কাতার দলকে দ্য মেরুন নামে ডাকা হয়।
সৌদি আরব- আল আখদার
সৌদি আরবেরও বেশ কয়েকটি নাম রয়েছে। আল আখদার অর্থ হলো সবুজের দল। এছাড়া আস সুকুর আল আখদার (সবুজ বাজপাখি) এবং আস সুকুর আল আরাবিয়া (আরবের বাজপাখি) নামেও ডাকা হয় তাদের।
দক্ষিণ কোরিয়া- তাইগুক ওয়ারিয়র্স
দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকায় থাকা তাইগুক প্রতীক অনুসারে তাদের তাইগুক ওয়ারিয়র্স বলা হয়। এছাড়া ভক্তরা দক্ষিণ কোরিয়া দলকে দ্য রেডস এবং লায়ন্স অব এশিয়া নামেও ডেকে থাকে।
ক্যামেরুন- ল্য লায়ন্স ইন্ডোম্পটেবলস
ক্যামেরুনের ল্য লায়ন্স ইন্ডোম্পটেবলস দুর্দমনীয় সিংহ।
ঘানা- ব্ল্যাক স্টারস
দেশের পতাকার মাঝে থাকা কালো তারার অনুসারে ব্ল্যাক স্টারস নামে ডাকা হয় ঘানাকে।
মরোক্কো- দ্য অ্যাটলাস লায়ন্স
দেশটির জাতীয় পশু বারবারি সিংহ থেকেই মূলত তাদের অ্যাটলাস লায়ন্স নামে ডাকা হয়। এই প্রাণীটি এখন বিলুপ্ত। তবে একসময় মরোক্কোয় পাওয়া যেতো।
সেনেগাল- লায়ন্স অব তেরাঙ্গা
সেনেগালিজ সংস্কৃতিতে তেরাঙ্গা শব্দের অর্থ ভালো আতিথেয়তা। এটি থেকেই তেরাঙ্গা লায়ন্স নামে ডাকা হয় তাদের।
তিউনিশিয়া- ঈগলস অব কারথেজ
তিউনিশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জনগোষ্ঠী ছিল কারথেজ। আর তিউনিশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের লোগোতে রয়েছে ঈগল। সেখান থেকে তাদেরকে ঈগলস অব কারথেজ বলা হয়।
কানাডা- দ্য রেডস
দেশটির হোম জার্সির রঙ অনুযায়ী তাদের দ্য রেডস নামে ডাকা হয়। এছাড়া পতাকায় থাকা ম্যাপল লিফের কারণে অনেক সময় ম্যাপল লিফস নামেও বলা হয় তাদের।
কোস্টারিকা- লস টিকোস
কোস্টারিকাকে অনেক সময় স্প্যানিশ ভাষায় সংক্ষিপ্ত আকারে টিকোস বলা হয়। সেখান থেকেই তাদের নাম হয়েছে লস টিলোস। এছাড়া ল্য সেলে (দ্য সিলেকশন) ও ল্য ট্রাইকালার (দ্য ট্রাইকালার) নামেও ডাকা হয় তাদের।
মেক্সিকো- এল ট্রি
জাতীয় পতাকায় থাকা তিনটি রঙের কারণে তাদের এল ট্রি নামে ডাকা হয়।
আর্জেন্টিনা- লা আলবিসেলেস্তে
আর্জেন্টিনার জার্সি ও পতাকায় রয়েছে সাদা ও আকাশি রঙ। সেটি থেকেই তাদের লা আলবিসেলেস্তে বলা হয়।
ব্রাজিল- সেলেকাও
পর্তুগিজ ভাষায় সেলেকাও অর্থ বাছাইকৃত খেলোয়াড়রা। ব্রাজিলিয়ানরা সব ফুটবল দলকেই সেলেকাও বলে থাকে। তবে জাতীয় দলকে আলাদা করতে দ্য সেলেকাও বলা হয়।
ইকুয়েডর- লা ট্রি
মেক্সিকোর মতোই জাতীয় পতাকায় থাকা তিন রঙের কারণে ইকুয়েডরকে লা ট্রি নামে ডাকা হয়।
উরুগুয়ে- লা সেলেসেতে
লা সেলেস্তে শব্দের অর্থ আকাশি নীল। তাদের জার্সির সঙ্গে মিল রেখে এই লা সেলেস্তে নামকরণ।
বেলজিয়াম- ডাই রোটেন টফেল
বেলজিয়াম দলকে ডাই রোটেন টফেল নামে যার অর্থ দ্য রেড ডেভিলস বা লাল শয়তারের দল। যা ১৯০৬ সালে দেশটির সাবেক কোচ পিয়েরে ওয়ালকিরসের অনুপ্রেরণায় দেওয়া হয়েছে।
ক্রোয়েশিয়া- কোকাস্তি
জাতীয় থাকা চেক ডিজাইনের কারণে ক্রোয়েশিয়ার জাতীয় দলকে কোকাস্তি বলা হয়।
ডেনমার্ক- ডা রড ভাইড
ড্যানিশ ভাষায় ডা রড ভাইড অর্থ হলো রেড এন্ড হোয়াইটস অর্থাৎ লাল ও সাদার দল। এটি তাদের মূল জার্সির রঙ।
ইংল্যান্ড- থ্রি লায়ন্স
ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের লোগোতে থাকা তিনটি সিংহের কারণে তাদের থ্রি লায়ন্স বলা হয়।
ফ্রান্স- লা ব্লুজ
জার্সির রঙের কারণে ফ্রান্স দলকে লা ব্লুজ বলা হয়।
জার্মানি- ন্যাশনালেলফ
জার্মান ভাষায় ন্যাশনালেলফ শব্দের অর্থ জাতীয় একাদশ। এছাড়া তাদের ডিএফবি এলেভেনও বলা হয়। ডাই ম্যানশাফটও তাদের আরেকটি নাম।
নেদারল্যান্ডস- অরেঞ্জ
জাতীয় দলের জার্সি এবং দেশের ফুটবল ফেডারেশনের লোগোর রঙ অনুসারে তাদের অরেঞ্জ নামে ডাকা হয়।
পোল্যান্ড- বিয়ালো জেরোনি
পোলিশ ভাষায় বিয়ালো জেরোনির অর্থ হলো সাদা ও লাল। যা তাদের মূল জার্সির রঙ।
পর্তুগাল- ওস ন্যাভেগেডোরস
নৌপথে সুশোভিত ইতিহাসের কারণে পর্তুগালকে ডাকা হয় ওস ন্যাভেগেডোরস বা দ্য নেভিগেটরস নামে।
সার্বিয়া- ওরলোভি
ওরলোভি শব্দের অর্থ দ্য ঈগলস। সার্বিয়ার জাতীয় প্রতীক দুই মাথার সাদা ঈগল অনুসারে তাদের এই নামে ডাকা হয়।
স্পেন- লা রোজা
স্প্যানিশ ভাষায় লা রোজা অর্থ হলো লাল বিশেষ। এছাড়া লা ফুরিয়া রোজা নামেও ডাকা হয় তাদের।
সুইজারল্যান্ড- রসোক্রোসিয়াতি
রসোক্রোসিয়াতি অর্থ হলো রেড ক্রস। এছাড়া নাটি (যার অর্থ জাতীয় দল) নামেও ডাকা হয় সুইজারল্যান্ড দলকে।
ওয়েলস- দ্য ড্রাগন্স
জাতীয় পতাকায় মুখ দিয়ে আগুন ছাড়তে থাকা ড্রাগনের অনুসারেই তাদের দ্য ড্রাগন্স বলা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র- স্টার স্ট্রাইপ্স
জাতীয় পতাকায় থাকা তারার স্ট্রাইপ থেকেই তাদের এই নাম এসেছে। এছাড়া দ্য ইয়াঙ্ক নামেও পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র দলটি।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন