ফুটবল বিশ্বকাপের বাকি আর মাত্র একমাস
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারছাড়া অন্য কোনো দেশে যদি বিশ্বকাপের আয়োজক হতো, তাহলে এতদিনে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের নাম জানার প্রায় চারমাস পার হয়ে যেতো; কিন্তু বিশ্বকাপের ইতিহাসে এবারই শুধু ব্যতিক্রম হলো। মধ্যপ্রাচ্যের তীব্র গরম যেন বিশ্বকাপের ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে না পারে, সে জন্য সূচিতে পরিবর্তন আনা হলো। গ্রীষ্মের পরিবর্তে কাতার বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে শীতকালে।
দেখতে দেখতে বছর, মাস, সপ্তাহ, দিন পেরিয়ে সময় চলে গেলো অনেকটা। পরিবর্তিত সূচিতে বিশ্বকাপ শুরু হতে আর বাকি মাত্র এক মাস। আজ ২০ অক্টোবর। ঠিক নভেম্বরের ২০ তারিখ শুরু হয়ে যাবে দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ ফিফা বিশ্বকাপ। দোহার আল বাইত স্টেডিয়ামে সেদিন বেজে উঠবে কিক অফের বাঁশি।
মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব বিশ্বে এই প্রথমবারের মত কোনো বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আরবীয় পেট্রোডলারের ভর্তি ছোট্ট দেশ, কাতারই হচ্ছে সৌভাগ্যবান সেই দেশ। বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার মর্যাদা ছিনিযে আনতে তাদের সঙ্গী নানা বিতর্ক। বলা হয়ে থাকে, দুর্নীতি করে সাবেক ফিফা সভাপতি সেপ ব্ল্যাটার কাতারকে আয়োজক হওয়ার যোগ্যতা এনে দিয়েছিলেন।
আবার কাতারের বিরুদ্ধে বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সবচেয়ে বড় অভিযোগ, দেশটিতে বিশ্বকাপের অবকাঠানো নির্মাণ করতে গিয়ে কয়েক শত শ্রমিককে অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। অনেককে প্রাণ দিতে হয়েছে। বিদেশি শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনাও বুঝিয়ে দেয়া হয়নি।
মানবাধিকার লঙ্ঘণের প্রতিবাদ এখনও চলছে ইউরোপের দেশগুলোতে। বিশেষ করে ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসসহ প্রায় বড় বড় শহরগুলো ঘোষণা করেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘণের প্রতিবাদে তারা জায়ান্ট স্ক্রিনে বিশ্বকাপের খেলা দেখাবে না।
তবুও সব বাধা, সব বিপত্তি এবং নানা রকম চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে এসে বিশ্বকাপের জন্য এখন পুরোপুরি প্রস্তুত কাতার। দেশটির আটটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের খেলাগুলো। ২০ নভেম্বর শুরু হবে, শেষ হবে ১৮ ডিসেম্বর। প্রায় এক মাস সার বিশ্ব বুঁদ হয়ে থাকবে বিশ্বের সেরা সেরা ফুটবলারদের সবুজ মাঠে পায়ের কারুকাজ দেখায়।
মাত্র এক মাসের কাউন্টডাউন অনুষ্ঠানে ভিডিও মেসেজের মাধ্যমে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফ্যান্তিনো বলেন, ‘আমরা সব সময়ই বলে এসেছি যে, কাতার ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপের আয়োজন করতে যাচ্ছে। আপনি যদি এখন দেশটির দিকে তাকান এবং স্টেডিয়ামগুলোর ডিজাইন, ট্রেনিং গ্রাউন্ড, বড় বড় স্থাপনা- সবকিছুই প্রস্তুত এবং সবাইকে সেখানে স্বাগতম।’
তিনি আরো বলেন, ‘পুরো বিশ্বই আজ অভিভূত। কাতারও পুরোপুরি প্রস্তুত বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য। মঞ্চও প্রস্তুত। আমরা সবাই মিলে মাঠ এবং মাঠের বাইরে ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপই উপহার দেবো।’
এরই মধ্যে বিশ্বকাপের জন্য প্রায় ২৮ লাখ ৯০ হাজার টিকিট বিক্রি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কাতার কর্তৃপক্ষ। সে সঙ্গে বিশ্বকা উপলক্ষে এত বিশাল পরিমান সমর্থক এবং পর্যটকের ভিড় সামাল দেয়ার জন্য আয়োজক কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, আরও ৩০ হাজার রুম বিশ্বকাপের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে।
৮টি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে মোট ২৪টি ম্যাচ। কাতার বলছে, বিশ্বকাপ চলাকালীন কোনো সমস্যাই হবে না থাকার জন্য। প্রতি রুম একদিনে ৮০ ডলার করে রুম বুক করা যাবে এবং এক রুমে অন্তত ২জন করে থাকা যাবে। তিনটি অপশন রাখা হচ্ছে- হোটেল, অ্যাপার্টমেন্ট এবং ফ্যান ভিলেজ।
বিশ্বকাপের জন্য হসপিটালিটি টিকিট রাখা হয়েছিল ২ লাখ ৪০ হাজার। এরমধ্যে সব টিকিটই বিক্রি হয়ে গেছে এবং ৬৩ ভাগই হচ্ছে বিদেশি।
মাত্র একমাস বাকি। টুর্নামেন্ট আয়োজক কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, যারা কাতার ভ্রমণ করতে খেলা দেখার জন্য, তাদেরকে অবশ্যই হায়া কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে এবং এখনই রুম বুক করতে হবে। শুধু তাই নয়, আল বিদা পার্কে ফিফা ফ্যান ফেস্টিভ্যালে একসঙ্গে ৪০ হাজার মানুষকে খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করবে আয়োজকরা। বিশাল জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখা যাবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। খেলা দেখানোর সঙ্গে বিশ্বের সেরা সেরা আর্টিস্টদের দিয়ে বিনোদনের ব্যবস্থাও করা হবে।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন