ইংল্যান্ড-ইরান ‘যুদ্ধ’ প্রথমবার
উদ্বোধনী দিনে একটি মাত্র খেলা ছিল। বরাবরের রীতি মেনে এবারও স্বাগতিক হিসেবে কাতার খেলেছে উদ্বোধনী ম্যাচ। প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডর।
তবে আজ ২১ নভেম্বর রয়েছে ৩টি ম্যাচ। এর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় খেলাটি হবে কাতারের রাজধানী দোহার খলিফা স্টেডিয়ামে।
আজ সন্ধ্যায় মুখোমুখি হবে ইউরোপ তথা বিশ্ব ফুটবলের পরিচিত নাম, প্রতিষ্ঠিত শক্তি সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড আর এশিয়ান ফুটবলের পরাশক্তি ইরান। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় কাতারের খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শুরু হবে ‘বি’ গ্রুপের এ ম্যাচটি।
সেই ১৯৫০ সালে ব্রাজিলে বসা বিশ্বকাপের চতুর্থ আসর থেকে শুরু। এর মধ্যে ১৯৭৪, ১৯৭৮ এবং ১৯৯৪ সালেই কেবল বিশ্বকাপের মূলপর্বে অংশ নিতে পারেনি ইংল্যন্ড।
এছাড়া এবার নিয়ে ১৯ বারের মত বিশ্বকাপের মূলপর্বে ইংলিশরা। তবে সর্বশেষ টানা ৬ আসরে মূলপর্বে খেললেও একবারের জন্য ফাইনাল খেলতে পারেনি থ্রি লায়ন্সরা।
১৯৯০ সালের ৩২ বছর পর সর্বশেষ আসরে সেরা চারে ছিল ইংলিশরা। ২০১৮ সালে রাশিয়ায় সর্বশেষ বিশ্বকাপ ফুটবলের সেমিতে উঠেছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু দুর্দান্ত ফর্মে থেকেও ফাইনাল খেলার স্বপ্নপূরণ হয়নি। ক্রোয়েশিয়ার কাছে ১-২ গোলে হেরে যায় ইংলিশরা।
সেমির যুদ্ধে হার মানা ইংল্যান্ড শেষ পর্যন্ত তৃতীয়ও হতে পারেনি। বেলজিয়ামের কাছে ২- ০ গোলে হেরে চতুর্থ স্থান নিয়েই ফিরে যায় দেশে। এবার কি আরও বড় কিছু হবে?
যদিও দলটির সাম্প্রতিক পরফরম্যান্স ভালো না। সর্বশেষ ৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয়ের দেখা মেলেনি। শুধু তাই নয়, সৃষ্টি ও সৃজনশীলতায় ঘাটতি চোখে পড়েছে। ফরোয়ার্ডরা গোল খরায় ভুগেছেন।
নিজ মাটিতে হাঙ্গেরির কাছে ৪-০ গোলে হার ইংল্যান্ডের সাম্প্রতিক সময়ের খারাপ ফর্মের প্রামাণ্য দলিল হয়ে আছে। তবে বিশ্বকাপের আগে অন্যতম ফেবারিট জার্মানির সাথে ৩-৩ গোলে ড্র করা ম্যাচটি হতে পারে মূলপর্বে ইংলিশদের ভালো খেলার রসদ। খুব স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বকাপে জয় দিয়ে শুরু করতে চাইবেন হ্যারি কেইনরা।
অন্যদিকে প্রতিপক্ষ ইরান বরাবরই এশীয় ফুটবলের প্রতিষ্ঠিত শক্তি। সেই ১৯৭৮ সাল দিয়ে শুরু। এবার নিয়ে ষষ্ঠবারের মত বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে ইরানিরা। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত অবশ্য গ্রুপপর্বের প্রাচীর টপকাতে পারেনি তারা। পাঁচবারের অংশগ্রহণে জয় মাত্র দুটি।
বিশ্বকাপে ইরানের প্রথম জয় আজ থেকে ২৮ বছর আগে, ১৯৯৪ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১- ০ গোলে জিতেছিল ইরানিরা। এর দীর্ঘ ২ যুগ পর ২০১৮ সালে রাশিয়ার মাটিতে আফ্রিকার প্রতিষ্ঠিত শক্তি মরক্কোকে ১-০ গোলে হারানোর কৃতিত্ব দেখায় ইরান।
আজ বিশ্বকাপের মূল পর্বে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগে সর্বশেষ ২২ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ইরান মাত্র ৩টিতে পরাজিত হয়েছে। তার মানে তারা বেশ ভালো ছন্দেই আছে।
বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড আর ইরানের প্রথম দেখা এবারই। শুধু বিশ্বকাপের কথা বলা কেন, আন্তর্জাতিক ফুটবলেও দুই দেশ আগে কখনও মুখোমুখি হয়নি। তাই দুুই দলের জন্যই এবার হবে নতুন অভিজ্ঞতা।
খুব স্বাভবিকভাবেই আজকের প্রথম ম্যাচে ইরানের বিপক্ষে ইংলিশ কোচের আশা ভরসার প্রতীক হয়ে আছেন তুখোড় স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন। ৭৫ ম্যাচে ৫১ গোল করা এ ফরোয়ার্ড গত বিশ্বকাপেও ৬ গোল দিয়ে ‘গোল্ডেন বুট’ পেয়েছিলেন। এছাড়া ১৯ বছর বয়সী মিডফিল্ডার জুড বেলিংহ্যামও ইংলিশদের অন্যতম চালিকাশক্তি।
অন্যদিকে রেটিং-র্যাংকিংয়ে এশিয়ান দলগুলোর ভেতরে বরাবরই ওপরের দিকে অবস্থান ইরানের। দল হিসেবেও সাজানো গোছানো। তবে এবার ইরান এমন এক সময় বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে যখন দেশটির অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খল অবস্থা। রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা চরমে।
অবশ্য উইঙ্গার আলী রেজা জাহানবক্স সব প্রতিকূলতা ও অস্থিরতা ছাপিয়ে দেশের জন্য খেলতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তার কথা, আমরা সবাই দেশের জার্সি পরে খেলার কথাই ভাবছি। আমাদের লক্ষ্য প্রথমবার গ্রুপপর্বের বাধা টপকে দ্বিতীয় পর্যায়ে পা রাখা।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন