সতীর্থরা তাঁর নাম দিয়েছেন দ্য গলফার। এই যে ছয় বছর, প্রায় আধা যুগ একটা ক্লাবে খেলার পরও সতীর্থদের লিখতে হলো, বন্ধুরা লেখা গেল না আগের বাক্যে; এর দায়ও তাঁর। গ্যারেথ বেল যে মাদ্রিদে আসার পর বন্ধুই বানাননি! মাঠের বাইরে দোস্তিগিরি করার চেয়ে বেল যে গলফ খেলে সময় কাটাতে বেশি ভালোবাসেন!
তখনকার বিশ্ব রেকর্ড গড়ে টটেনহাম থেকে এসেছিলেন বেল। প্রত্যাশার ঘণ্টাটা ঠিকমতো বাজাতে পেরেছেন কি না, এ নিয়ে এখনো রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের ক্যালকুলেটর নিয়ে বসে পড়তে দেখা যায়। তবে একটা বিষয় নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই, যস্মিন দেশে যদাচার আপ্তবাক্যটা বেল মানেননি। মাদ্রিদে এসেও এখনো তিনি মাদ্রিদের মানুষ হয়ে উঠতে পারেননি। আর এ নিয়েই সতীর্থ থিবো কর্তোয়া রীতিমতো সমালোচনাই করলেন বেলের।
রিয়াল মাদ্রিদের বেলজিয়ান গোলরক্ষক কর্তোয়া এমনভাবে মাদ্রিদে বাস করেন, যেন তিনি মাদ্রিদেই জন্মেছেন, বেড়ে উঠেছেন। চেলসি থেকে ধারে অ্যাটলেটিকোর হয়ে খেলতে এসে এই শহরটাকে যে ভালোবেসে ফেলেছিলেন। চেলসি আবার ডেকে পাঠানোর আগে তিন মৌসুম কাটিয়ে গেছেন। আবারও মাদ্রিদে ফিরেছেন, এবার রিয়ালের জার্সিতে। এর পেছনে অন্যতম অনুঘটক ছিল এই শহরের প্রতি তাঁর ভালোবাসা।
কিন্তু ৬ বছর এখানে থেকেও মাদ্রিদের সংস্কৃতির ছিটেফোঁটাও বেলের মধ্যে নেই দেখে অবাক কর্তোয়া। সম্প্রতি রিয়ালের খেলোয়াড়েরা এক নৈশভোজে মিলিত হয়েছিলেন। সবাই সেই অনুষ্ঠানে এসে হাজির হলেও বেল ও টনি ক্রুস আসেননি। মাদ্রিদের লোকেরা দেরিতে রাতের খাবার খেয়ে দেরিতে ঘুমিয়ে অভ্যস্ত। রাত ১১টায় মাদ্রিদে রাতের খাবারের সময়টা আবার বেলের ঘুমিয়ে পড়ার সময়।
কর্তোয়া বলেছেন, ‘আমাকে দেখলে মনে হবে আমি যেন মাদ্রিদেই জন্মেছি, বেড়ে উঠেছি। আমি দেরিতে খাই, দেরিতে ঘুমোতে যাই। কদিন আগে পুরো দল নৈশ ভোজে মিলিত হয়েছিল, কিন্তু বেল আর টনি আসেনি। তাদের কথা, নৈশভোজের জন্য সময়টা বেশি দেরি হয়ে যায়। আমরা সাড়ে নয়টার দিকে মিলিত হয়েছি, এরপর সোয়া দশটায় খাবার শুরু। মাঝরাতে সবাই মিলে কফিও খেলাম। সে রাতে আমি।একটার দিকে ঘুমোতে গেছি পরদিন বেলা ১১টায় অনুশীলনে হাজির হয়েছি। এর মধ্যে যথেষ্টই ঘুমিয়েছি। কিন্তু বেল বলেছিল, ‘আমি তোমাদের সঙ্গে খেতে যাচ্ছি না। আমাকে রাত ১১টার মধ্যে ঘুমোতেই হবে। ও শেষ পর্যন্ত এলই না।’
সতীর্থদের সঙ্গে বেলের সম্পর্কটা এখনো পেশাদার গণ্ডিতেই। কিন্তু দলের মধ্যে একটা আবেগীয় বন্ধনও তো লাগে। বেল সম্ভবত এই ধারণায় বিশ্বাস করেন না। এ কারণে আধা যুগ স্পেনে কাটিয়েও দেশটির ভাষাও শেখেননি। একে সতীর্থেরা বিপাকে পড়ে যান। বাকিদের প্রায় সবাই যে ইংরেজিতে সড়ো-গড়ো নন। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন মার্সেলো। ড্রেসিংরুমে মার্সেলো বেলের সবচেয়ে কাছের সতীর্থ। বেলের সঙ্গে নিজের কথোপকথনের অভিজ্ঞতা মার্সেলো বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘কিকো ক্যাসিয়া অন্য ক্লাবে চলে গেছে। আমি ওর খুব কাছের ছিলাম। ড্রেসিংরুমে আমরা পাশাপাশি বসতাম। এখন আমার পাশে কেউ নেই। বেল আছে, কিন্তু ও তো কথাই বলে না। ও শুধু ইংরেজিতে কথা বলে। ফলে বুঝতেই পারছেন ওর সঙ্গে আমার কথাবার্তা কেমন হয়। হেয়, হাই, হ্যালো, গুডবাই...!