প্রথমবারের মতো নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০১৮-এর বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খেতাব অর্জন করে নিয়েছে বাংলাদেশ।
সারা বিশ্বের এক হাজার ৩৯৫টি দলকে পেছনে ফেলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোনয়ন পাওয়া দল ‘টিম অলিক’। বেসিসের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য দেওয়া হয়।
লুনার ভিআর প্রজেক্ট, যার মাধ্যমে ঘরে বসেই চাঁদের অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে। আর এ প্রজেক্টের জন্যই বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খেতাব অর্জন করল টিম অলিক। টিম অলিকের এই লুনার ভিআর প্রজেক্টটি মূলত একটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অ্যাপ্লিকেশন। যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী চাঁদ ভ্রমণের একটি অভিজ্ঞতা পাবেন। নাসা প্রদত্ত বিভিন্ন রিসোর্স থেকে থ্রিডি মডেল ও তথ্য সংগ্রহ করে নাসা অ্যাপোলো-১১ মিশনের ল্যান্ডিং এরিয়া ভ্রমণ, চাঁদ থেকে সূর্যগ্রহণ দেখা ও চাঁদকে একটি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আবর্তন করা, এই তিনটি ভিন্ন পরিবেশকে ভার্চুয়ালভাবে তৈরি করেছে টিম অলিক।
বেস্ট ইউজ অব ডাটা ক্যাটাগরিতে শীর্ষ চারে স্থান করে নেওয়া ক্যালিফোর্নিয়া, কুয়ালালামপুর ও জাপানের দলকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খেতাব পান তাঁরা।
এর আগে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক ফলাফলে বিশ্বের ৭৯টি দেশের প্রায় দুই হাজার ৭২৯টি দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের দুটি ক্যাটাগরির শীর্ষ চারে উঠে আসে বাংলাদেশ।
নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০১৮-তে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাংসদ ও বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম প্রমুখ।
মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের তরুণদের হাত ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মিত হচ্ছে। তরুণদের নিয়ে গড়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল টিম অলিক বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খেতাব অর্জন করেছে। বাংলাদেশের বেসিস, বেসিস স্টুডেন্টস ফোরামের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের দল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমি টিম অলিক ও বেসিসকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এ অর্জন ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার আরেকটি অনন্য দৃষ্টান্ত।’
এ অর্জন সম্পর্কে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ‘এ বছর আমাদের লক্ষ্যই ছিল গত তিন আসরের তুলনায় ভালো করার। প্রথমবারের মতো নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-এর বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খেতাব অর্জন নিঃসন্দেহে বড় অর্জন। আমরা বেসিস থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে যাত্রা অব্যাহত রেখেছি, এ অর্জন আমাদের প্রচেষ্টার পথে আরেকটি বড় মাইলফলক। আমি বাংলাদেশের নাম বিশ্বদরবারে আরো উঁচুতে আসীন করার জন্য টিম অলিককে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০১৮-এর আহ্বায়ক দিদারুল আলম বলেন, ‘আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এ অর্জন গোটা বাংলাদেশের। টিম অলিক বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। অক্লান্ত এ পরিশ্রমের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে, বিশেষ করে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল হাসান অপু, প্রধান বিচারক (বাংলাদেশ) মাহদী-উজ-জামান ও প্রকল্প সমন্বয়ক মো. ওয়াসেক সাজ্জাদকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
টিম অলিকের দলনেতা আবু সাবিক মাহদি বলেন, ‘প্রথমবার নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আমি আমাদের মডারেটর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী ও বেসিসের প্রতি কৃতজ্ঞ। এখন আমাদের প্রতি বাংলাদেশের সবার অনেক প্রত্যাশা। আমরা বাংলাদেশকে আরো উঁচুতে আসীন করতে চাই।’
বেসিস স্টুডেন্টস ফোরামের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সহায়তায় আয়োজিত নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এবার দুই হাজার প্রকল্প থেকে বাছাই করে সেরা ৪০টি প্রকল্প নাসার জন্য মনোনীত করা হয়। বাংলাদেশের নয়টি শহরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা) আয়োজিত হয় এটি।
ছয়টি ক্যাটাগরির ছয়টি চ্যাম্পিয়ন দল নাসায় যাওয়ার এবং শিক্ষানবিশ হিসেবে কিছুদিন কাজ করার সুযোগ পাবে।