হিন্দু ছেলে মুসলিম মেয়ের প্রেমকাহিনি সিরিয়াল বা সিনেমায় নতুন কিছু নয়। কয়েক বছর আগে এমন বিষয় নিয়ে সিরিয়ালে ঝড় তুলেছিল কেয়া পাতার নৌকো। সেই প্রেমকাহিনি আবারও ফিরেছে 'নকশিকাঁথাতে'। গত বছরের ১২ নভেম্বর জি বাংলা চ্যানেলে অন এয়ারে আসে নকশিকাঁথা ৷ যেখানে অনেকদিন বাদে মুখ্যচরিত্রে দেখা যাচ্ছে মানালি দে;এর আগে তিনি বউ কথা কও, মহানায়ক, সখী, ভুতু প্রভৃতি সিরিয়ালে অভিনয় করে দর্শকদের মন জিতে নিয়েছেন। তাঁর বিপরীতে যশের চরিত্রে অভিনয় করছেন সুমন দে। তিনিও টেলিভিশনের পরিচিত মুখ ৷ সিরিয়ালটির কাহিনী,চিত্রনাট্য,সংলাপ ও সৃজনশীল পরিচালনা করেছেন প্রখ্যাত লেখিকা লীনা গঙ্গোপাধ্যায় ৷
যার প্রতিটি গল্পই বাংলার দর্শকদের পুরো আবিষ্ট করে রাখে ৷ চারপাশে ধর্মীয় রাজনীতির জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি, ‘লাভ জেহাদ’ কিংবা ‘ঘরওয়াপসি’-জনিত কারণে নৃশংস হত্যা-কাগজ খুললেই শ্বদন্ত বের করে বসে থাকে এসব খবর। এরকম এক টালমাটাল পরিস্থিতিতে হিন্দু-মুসলিম প্রেম নিয়ে গল্প। আনকোরা তো বটেই, রীতিমতো সাহসীও এক পদক্ষেপ। কী বলছেন লেখক? লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে,এটাই প্রথম নয়, এরকম এক্সপেরিমেন্ট তিনি আগেও করেছেন। সেটাও ছিল ‘জি বাংলা’-তেই প্রফুল্ল রায়ের কাহিনি অবলম্বনে তৈরি ‘কেয়াপাতার নৌকো’ এবং তা চূড়ান্ত হিট হয়।
বাংলায় হিন্দু-মুসলিম উভয় শ্রেণির দর্শক থাকলেও ধারাবাহিকে সংখ্যালঘু নিয়ে কাজ কম। তাই এরকম একটা কাজ করার প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন। সিরিয়ালগুলিতে এমন ক’টা নাম, ক’টা চরিত্র বা পার্শ্বচরিত্র রয়েছে যারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করে? অথচ বাংলার মাটিতে দুই সম্প্রদায় পাশাপাশি বাস। দু’পক্ষই সিরিয়াল দেখে। তাই হিন্দুদের মতোই মুসলমানদের কথাও ধারাবাহিকগুলোয় আসা উচিত নয় কি? ব্যাপারটা তো জলের মতো সোজা। অথচ আসে না। কোথাও সংখ্যাগুরুদের ব্যাক অফ মাইন্ডে কাজ করে যে শুধু তাদের নিয়ে কথা বলা হবে ধারাবাহিকগুলোয়।এবার গল্পে আসা যাক- গোঁড়া মুসলিম পরিবারের মেয়ে শবনম। সে চায় পড়াশোনা শেষ করে চিকিৎসক হতে। কিন্তু পরিবার তার অমতেই বিয়ে ঠিক করে। বিয়ের রাতে পালিয়ে যায় শবনম।
পালাতে গিয়ে বাবা এবং বাড়ির লোকের হাতে ধরা পড়ে যায়। সেখানে যশ এসে তাকে উদ্ধার করে এবং শবনমের বাবার সামনেই হাত কেটে রক্ত দিয়ে সিঁদুর পরায়। এদিকে চিকিৎসক যশের সঙ্গে রোহিনীর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।রোহিনীর চরিত্রে অভিনয় করছেন স্নেহা ভৌমিক ৷ যশ শবনমের কলেজেরই সিনিয়র। যশের পরিবার গ্রামের প্রাচীন ব্রাহ্মণ পরিবার হিসেবে সুপরিচিত। তার বাড়ির অনেক সদস্যই শবনমকে পছন্দ করেন, কিন্তু যশের মা মুসলিম মেয়ে শবনমকে পছন্দ করেন না। এরই মধ্যে তাদের বাড়িতে ধুমধাম করে দুর্গাপুজো হয়। সেই পুজোতেও শবনমকে কেন্দ্র করে অশান্তির সৃষ্টি হয়। নানারকম ঝামেলা আর অশান্তি অনেকদিন ধরেই চলছে। তবুও শেষপর্যন্ত স্থির হয়েছে যশোজিৎ ও রোহিনীর বিয়ের দিন।
এদিকে বিয়ের দিন এগিয়ে এল কিন্তু মন ভালো নেই যশোজিৎর। সবরকমের নিয়ম আচার নিষ্ঠাভরেই পালন করছে সে, কিন্তু কোথাও গিয়ে যেন মন থেকে মেনে নিতে পারছে না। আর এটা রোহিনীও খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছে। সেদিন রাতে শবনমকে সে উদ্ধার করেছিল, সেইমুহূর্তে হাতের রক্ত দিয়ে শবনমের সিঁথিতে সে যে সিঁদুর পরিয়েছিল তাও মিথ্যে নয়। অন্যদিকে রোহিনীর সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের প্রেম।তবে রোহিনী যেনতেন প্রকারে যশোজিৎকে স্বামী হিসেবে পেতে চাইছে। সেটাই তার একমাত্র লক্ষ্য। আর শবনমকে পদে পদে অপমানিত করে যশের চোখে তাকে খারাপ করে দেওয়ার চেষ্টাও নিরন্তর চালিয়ে যাচ্ছে। বিয়ের দিন রোহিনীর বন্ধুরা পরিকল্পনামাফিক ফলের রসের নাম করে শবনমকে মদ খাইয়ে দেয়।
শবনম বিশ্বাস করে তা খেয়েও ফেলে। এরপর মাত্রাজ্ঞান হারিয়ে সে উল্টোপাল্টা আচরণ শুরু করে। এমনকী যশোজিতের গলায় মালাও পরিয়ে দিয়ে যায়। অনেক্ষণ ধরে এসব দেখে চুপ ছিল যশোজিৎ। কিন্তু শেষপর্যন্ত আর সহ্য করতে না পেরে চড় কষিয়ে দেয় শবনমের গালে। আর উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে দেখে মনে মনে খুশি হয় রোহিনী। সত্যিই কি এবার সম্পর্কে চিড় ধরল শবনম-যশোর? বিয়ের পর্ব ভালোয় ভালোয় মিটলেও অশান্তি ঘনিয়ে আসে তাদের ফুলসজ্জার দিন। সেদিনও রোহিনীর চক্রান্তেই শবনমের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে যশোজিৎ। শবনমকে জানিয়ে দেয় রোহিনীকেই সে ভালোবাসে। এবার কি তাহলে সত্যিই শেষ হয়ে গেল শবনম আর যশোজিৎ-এর সব সম্পর্ক? আর কি কোনও দিন শবনমের কাছে ফিরবে যশোজিৎ?
জানতে হলে দেখতে থাকুন ভারতীয় চ্যানেল জি বাংলায় প্রতি সোম থেকে শুক্র রাত দশটায় (বাংলাদেশ সময়) প্রচারিত হচ্ছে নকশিকাঁথা ৷ এতে আরো অভিনয় করেছেন সন্তু মুখার্জি,চিত্রা সেন,মাধবী মুখার্জি.অনুশ্রী দাস,জয়জিৎ ব্যানার্জি,দেবলীনা মুখার্জি,রাজশ্রী ভৌমিক,রাহুল চক্রবর্তী,রঘুবীর প্রমুখ ৷ মেগা ধারাবাহিকটি প্রযোজনা করেছেন শৈবাল ব্যানার্জি এবং নির্মাণ করেছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ম্যাজিক মোমেন্টস মোশন পিকচারস্ লিমিটেড ৷