জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বারিধারার ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’ বাসভবন পাহারা দিচ্ছেন দলের নেতা-কর্মীরা। এইচ এম এরশাদের অসুস্থতার অযুহাতে দলের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলে যখন তখন কেউ যেনো কোনো স্বাক্ষর নিয়ে ফায়দা লুটতে না পারেন সেজন্য পর্যায়ক্রমে দলের একটি অংশ পাহারা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এইচ এম এরশাদ নেতাকর্মীদের প্রাণ। নেতাকর্মীরা তাদের প্রিয় নেতাকে একটু দেখার জন্য, খোঁজ নেওয়ার জন্য কখনো প্রেসিডেন্ট পার্কে, কখনো হাসপাতালে ছুটে চলেছেন। জিএম কাদের বলেন, পার্টির চেয়ারম্যানের বাসভবনে নেতাকর্মীদের ভিড় থাকবে এটাই স্বাভাবিক। জানা যায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পাটির গত দুই সপ্তাহের গৃহবিবাদের উত্তাপ পড়েছে তৃণমূলে। এরশাদ ২২ মার্চ গভীর রাতে জি এম কাদেরকে কো- চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর থেকে জাপায় নতুন করে সংকট সৃষ্টি হয়। দল চালাতে ব্যর্থ, সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে পার্টির কো-চেয়ারম্যান পদ ও পরের দিন বিরোধীদলের উপনেতা থেকে বাদ দেন জি এম কাদেরকে। এতে পার্টির একটি অংশ খুশি হলেও বেঁকে বসে বৃহত্তর রংপুরের নেতা-কর্মীরা। দুই সপ্তাহ না পেরোতেই রংপুরের নেতাদের চাপের মুখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বৃহস্পতিবার রাতে পুনরায় কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয় জি এম কাদেরকে। শনিবার সকালে অপর এক সাংগঠনিক নির্দেশে এরশাদ তার অবর্তমানে পার্টির চেয়ারম্যান হবেন জি এম কাদের এমন এক নির্দেশনা গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এরশাদের এ সর্বশেষ নির্দেশনা যাতে আর কেউ পরিবর্তন করতে না পারে সেজন্য শতাধিক নেতা-কর্মী দিনভর এরশাদের বাসভবন প্রেসিডেন্ট পার্কে অবস্থান করছেন। এমন পরিস্থিতিতে ঝামেলা এড়াতে সিনিয়র নেতারাও এরশাদের বাসভবন এড়িয়ে চলছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, জাতীয় পার্টি এইচ এম এরশাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলে। সাম্প্রতিক সময়ে জাপার নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন মহলে জাপার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও পার্টির নেতা-কর্মীরা চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থাশীল। জাপার যুগ্ম-মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয় বলেন, বিগত দুই সপ্তাহ ধরে পার্টির মাঝে ঘাপটি মারা কুচক্রীরা পার্টিকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করছে। যারা ষড়যন্ত্র করছেন তারা একসময় বিএনপি থেকে এ পার্টিতে এসেছে। এদের মাঝে কেউ কেউ এরশাদের বুকে ছুরিকাঘাত করে চলে গিয়ে আবার ফিরে এসেছেন। সরকারের কাছে অনুরোধ, সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যেন জাপাকে ভাঙার মিশনে কেউ লিপ্ত না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। কারণ অনেকে জাপাকে ভেঙে বিএনপি-জামায়াত জোটের মিশন বাস্তবায়ন করতে চায়। জানা যায়, দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা না বলে জি এম কাদেরকে সরানো আবার পুনর্বহালে ক্ষুব্ধ একটি অংশ। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে এরশাদের বাসভবন ও বনানী কার্যালয়ে পার্টির তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মীর উপস্থিতি বেড়ে গেছে। তারা জটলা বেঁধে উত্তপ্ত স্লোগান দিচ্ছেন। সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে কোনো নেতা এরশাদের বাসভবনে এলে তাদের প্রতিহত করা হবে বলেও হুমকি দেন তারা।