বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা এলাকায় ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগরকে পাখিদের অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তুলতে গাছে গাছে হাঁড়ি বেঁধে দেওয়া হয়েছে। গত রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গাছে হাড়ি বাঁধা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক।
এর আগে প্রতিমন্ত্রী দুর্গাসার দিঘির চারপাশ ঘুরে দেখেন। তিনি দুর্গাসাগরকে পর্যটনের একটি বড় স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রেখে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করতে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের আশ্বাস দেন।
পরে প্রতিমন্ত্রী পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দুর্গাসাগর দিঘির চারপাশের গাছে হাঁড়ি বেঁধে পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তোলার কাজের উদ্বোধন করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান, বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজিত হালদার।
বরিশাল শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে বরিশাল-স্বরূপকাঠি আঞ্চলিক সড়কের পাশে মাধবপাশা ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের মাধবপাশা গ্রামে ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর দিঘি অবস্থিত। দিঘিটির জলাভূমির আয়তন ২৭ একর। এর চারপাশে রয়েছে বিভিন্ন বৃক্ষশোভিত বন। সব মিলিয়ে দুর্গাসাগরের আয়তন ৪৫ দশমিক ৪২ একর। দিঘির মাঝখানে রয়েছে গাছগাছালিতে ছাওয়া দৃষ্টিনন্দন দ্বীপ। এই দিঘিতে প্রতিবছর শীতে হাজারো পরিযায়ী পাখির সমাগম ঘটে। পাখির কলরবে মুখর থাকে এই এলাকা।
কিন্তু ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরে গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাখির আগমন কমতে থাকে। এ ছাড়া দিঘিটির অল্প দূরত্বে বরিশাল বিমানবন্দর অবস্থিত। উড়োজাহাজের ওঠানামা এবং বিকট শব্দে ক্রমেই পাখির আগমন লোপ পায়। তবু শীতে এখনো এখানে কমবেশি পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে।
ঐতিহাসিকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৭৮০ সালে চন্দ্রদ্বীপের পঞ্চদশ রাজা শিব নারায়ণ এই বিশাল জলাধার খনন করেন। তাঁর স্ত্রী দুর্গামতির নামানুসারে খনন করা হয় দুর্গাসাগর দিঘি। পরে দীর্ঘদিন অযত্ন-অবহেলায় পড়ে ছিল এই দিঘি। ১৯৭৪ সালে সরকারি উদ্যোগে দিঘিটি পুনঃসংস্কার করা হয়।
জেলা প্রশাসক বলেন, দুর্গাসাগরকে পাখির অভয়াশ্রম ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এরই মধ্যে পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চলতি মাসেই দুর্গাসাগর উন্নয়নে বড় একটি প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।