সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর সরকারি খাদ্যগুদামে ন্যায্য মূল্যে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের পর মিল মালিকদের নিকট হতে চাল সংগ্রহ অভিযানে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে খাদ্য বিভাগের লোকজন ও মিল মালিকরা। প্রকৃত কৃষকদের আড়াল করে স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও দালাল সিন্ডিকেট খাদ্য গুদামের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গুদামে নিম্নমানের চাল সরবরাহ করছে।
এতে উপজেলার কৃষকরা সরকারি গুদামে চাল বিক্রি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া হতদরিদ্রদের ভিজিএফ/ভিজিডির চাউল দুস্থদের না দিয়ে কালোবাজারিদের কাছে বিক্রি করছে প্রভাবশালী একটি মহল। সেই দুস্থদের চাউল তাদের কাছে না পৌছে কালোবাজারিদের হাত দিয়ে চলে যাচ্ছে উপজেলার নরিনা ইউনিয়নের প্রভাবশালী চাতাল মালিক হাফিজের এম.এইস অটো রাইস মিলে। সেই চাউল রাইস মিল থেকে ছেঁটে/পরিষ্কার করে আবারও পৌছে যাচ্ছে শাহজাদপুর উপজেলা সরকারি খাদ্য গুদামে। এর ফলে স্থানীয় প্রকৃত কৃষকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত সোমবার বিকালে নরিনায় হাফিজের রাইস মিলের পার্শ্ব রাস্তা দিয়ে টলিতে ৩০ কেজি ওজনের প্রায় ১৫০বস্তা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দুস্থদের মাঝে বিতরণের চাউল হাফিজের রাইস মিলের ভিতরে সরাসরি ঢুকে পড়ে। উপস্থিত স্থানীয় সাংবাদিকরা গাড়ির চালককে চাউল এর ব্যপারে জিজ্ঞাসা করলে চালক জানান এগুলো নরিনা ইউনিয় পরিষদ এর চাউল হাফিজ এর মালিকাধীন এম. এইচ. অটো রাইস মিলে দেওয়ার জন্য নিয়ে এসেছি।
এর কিছুক্ষন পরেই আরও একটি চাউল এর বস্তা ভর্তি টলি সাংবাদিকদের নজরে আসে। সেখানে গাড়ীর চালক মোঃ হাসান এর সাথে কথা বলে জানা যায়, এ চাউল ভাঙ্গুড়ার হাট-উধুনিয়া থেকে নিয়ে আসা হয়েছে হাফিজের রাইস মিলে সরবারহ করার জন্য।
সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করার সময় মিল মালিক হফিজ সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয় ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে এবং সে বলে “দুই কোটি টাকা দিয়ে শুটার মেশিন কিনে ব্যবসা করছি , আপনাদের(সাংবাদিক) এ চাউলের ব্যপারে জানার কোন অধিকার নাই। আপনারা বেশি বারাবারি করবেন না, এ চাউলের কারবার উপর মহল ম্যানেজ করেই করি।”
উল্লেখ্য গত ১০ জুন সোমবার বিকেলে সরকারি চাউল চোরাচালান হচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শাহজাদপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের একটি দল নরিনা ইউনিয়নের দূর্গাদহ বিশ্ব রোডের পাশে ট্রাক থেকে নছিমনে খালাসের সময় উপস্থিত হয়।
নসিমন চালক ও খালাশিদের জিজ্ঞাসা করলে বিভ্রান্তকর কথা বলতে থাকে তারা। তাদের কথায় সন্দেহ হলে চাউলের বস্তাগুলো পরীক্ষা করে দেখা যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত চাউলের বস্তা।তৎক্ষনাৎ শাহজাদপুর উজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুসেইন খানকে মুঠোফোনে অবহিত করলে তিনি প্রতিনিধি পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে ফোন কেটে দেন।পরে দীর্ঘক্ষণ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রতিনিধি না আসায় তাকে পূনরায় বারংবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। একই ভাবে গতকাল সোমবার ঘটনাস্থল থেকে তাকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বেপারে উপজেলা এল,এস,ডি. গোডাউনের ওসিলিটি মোঃ ইয়াকুব আলী জানান, সরকারি গোডাউন থেকে বের হয়ে যাওয়া চাউল পুনঃরায় গোডাউনে নেওয়ার কোন সুযোগ নাই, চাউল মেশিনের মাধ্যমে পরিক্ষা করেই গোডাউনে মজুদ করা হয়। তবে আমরা নরিনা হাফিজের রাইস মিলের চাউলের প্রতি বিশেষ নজর রাখবো।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ফিরোজ মাহমুদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, স্থানীয় প্রশাসনকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হবে।