বগুড়ায় জুলাই মাসের ১২ তারিখ থেকে যমুনা ও বাঙালি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় কমপক্ষে সব মিলিয়ে ১৯টি ইউনিয়নের প্রায় দেড়শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। লোকসংখ্যাও প্রায় দেড় লাখ। জেলার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলায় বন্যায় এ পর্যন্ত প্রায় ৬৬ হাজার ৬৩৫ কৃষি পরিবার ক্ষতি হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। প্রায় ৩ সহ¯্র পরিবার বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। সরকারিভাবে প্রচুর পরিমানে ত্রাণ পৌঁছানোর কাজ চলমান রয়েছে। তবে এখন বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যার পানি কমতে থাকায় বানভাসিদের মাঝে স্বস্থি ফিরে এসেছে।
গত ২১ জুলাই বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করে। বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি কমতে থাকলেও একই দিন আবার বেড়েছে বাঙালি নদীর পানি। বগুড়ার সোনাতলায় বাঙালী নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ৪টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৬টি এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ কাটাখালি নদীর বউ বাজার এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় সোনাতলায় বাঙালী নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে সোনাতলা পৌরসভা, সদর ইউনিয়ন, মধুপুর, বালুয়াহাট, জোড়গাছা, পাকুল্লা ও তেকানীচুকাইনগর ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
যমুনা নদীর পানি কমতে থাকায় সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলায় নতুন করে কোন এলাকা নিমজ্জিত হয়নি। পানি কমার সংবাদে দুই উপজেলায় বানভাসীদের মাঝে কিছুটা স্বস্থি ফিরে এলেও দুর্ভোগ কমেনি।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার মধুপুর ইউপি পরিষদ সুত্রে জানা যায়, এক রাতে তার ইউনিয়নের ৫৩শ’ পরিবারের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এলাকার বিভিন্ন রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এমনকি বাঙালী নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সোনাতলা পৌরসভা ও সদর ইউনিয়নের পুরোটাই বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যার পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ওই এলাকার কৃষক শ্রেণীর মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ আহমেদ জানান, বাঙালী নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে যেসব ফসলের ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে তা নিরুপনের কাজ চলছে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, রোববার সকালে যমুনা নদীর পানি কমেছে প্রায় ৩৭ সেন্টিমিটার। পানি কমার পরেও বিপদসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার এবং বাঙালী নদীতে পানি বেড়ে বিপদসীমার ৫০.৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যে কারণে সোনাতলা উপজেলায় নতুন কিছু এলাকায় পানি উঠেছে। আর সারিয়াকান্দি উপজেলায় নতুন করে কোন এলাকায় পানি প্রবেশ করেনি।
বগুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুজ্জামান জানান, গত এক সপ্তাহে ১ লাখ ৮৫০ পিস পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যালেট বিতরণ করা হায়েছে। বন্যার্তদের বিশুদ্ধ পানির জন্য ডুবে যাওয়া টিউবওয়েলগুলো উঁচুকরণের ব্যবস্থার পাশাপাশি নতুন করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধি-দপ্তরের উপ-পরিচালক নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, বন্যায় জেলার তিন উপজেলায় ১৫ হাজার ৫৬৩ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হওযাছে আউস ও আমনবীজতলা। পাট উৎপাদন অঞ্চল তিন উপজেলায় পাট চাষ হয়েছিল ১০হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু বন্যায় ক্ষতি হয়েছে ৭ হাজার ৫০২ হেক্টর জমির পাট। বন্যায় বগুড়ার যমুনা তীরবর্তি ৩ টি উপজেলা সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনটের মোট ৬৬ হাজার ৬৩৫ কৃষি পরিবার ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে।
বগুড়া জেলা প্রশাসকের ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তা আজাহার আলী মন্ডল জানান, গত ১৯ জুলাই পর্যন্ত ত্রান হিসাবে সারিয়াকান্দি উপজেলায় ২৫১ মেট্রিক টন চাল, ১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। যমুনা তীরবর্তি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, সাড়ে ৪৫ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। ধুনট উপজেলায় ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খবার ৩৩৭ মেট্রিকটন চাল বিতরন করা হয়েছে। বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।