পত্নীতলায় খাল পুনঃ খননে সুবিধা পাচ্ছে হাজারো কৃষক | Daily Chandni Bazar পত্নীতলায় খাল পুনঃ খননে সুবিধা পাচ্ছে হাজারো কৃষক | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ৫ আগস্ট, ২০১৯ ১৭:৫৩
পত্নীতলায় খাল পুনঃ খননে সুবিধা পাচ্ছে হাজারো কৃষক
ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি নওগাঁঃ

পত্নীতলায় খাল পুনঃ খননে সুবিধা পাচ্ছে হাজারো কৃষক

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলায় পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ‘কাঁটাবাড়ি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড’ (এলসিএস) এলজিইডি’র মাধ্যমে খাল পুনঃ খনন করায় সুবিধা ভোগ করছেন হাজারো কৃষক ও সমিতির সদস্যরা। 
পত্নীতলা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে ‘কাঁটাবাড়ি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড’ এর জন্য ৫১ লাখ ৫২ হাজার ৪৯৫ টাকা বরাদ্দ করা হয়।

এ প্রকল্পের পত্নীতলা ইউনিয়নের শম্ভুপুর বিলের শূন্য হতে কাঁটাবাড়ির উপর দিয়ে আত্রাই নদী পর্যন্ত ২ হাজার ৮শ মিটারে ব্যয় ৩৭ লাখ ৮৪ হাজার ৭৯৯ টাকা, ১২শ মিটার বাঁধ নির্মানে ব্যয় ১১ লাখ ২৪ হাজার ৩৩৯ টাকা, তিনটি বাঁশের সাঁকো নির্মানে ব্যয় ১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৬৫ টাকা এবং তিনটি রেফারেন্স লাইন বাবদ ৭৫ হাজার ৮শ’ ৯২ টাকা ব্যয় হয়েছে। কাজটি করেন উপজেলার ‘কাঁটাবাড়ি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে একটি সংগঠন।
জানা গেছে, উপজেলার শুম্ভুপুর বিলে ইশাপুর, মথুরাপুর, শুম্ভুপুর, কাঁটাবাড়ি, হাড়পুর ও আজমতপুরসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষের প্রায় ৫শ হেক্টরের মতো জমি আছে। এছাড়া শুম্ভুপুর বিলে জমি আছে প্রায় সাড়ে ৪শ বিঘা। এক সময় এ বিলে বোরো আবাদ হতো। এরপর আমনের আবাদ করা হতো।

বোরো মৌসুমের সময় যদি বৃষ্টি হয় তাহলে পানিতে পাকা ধান ডুবে যেত। এতে কৃষকদের ক্ষতি হতো। খাল খননের পর বিলের পানি সহজেই নিষ্কাশন হচ্ছে। এখন আমন ধানের আবাদও করা হচ্ছে। এই খালের পানি দিয়ে রবিশস্যের আবাদ করা হচ্ছে। ভূগর্ভস্তরের পানি চাপ কমেছে। স্বল্প খরচে কৃষকরা এ খালের পানি দিয়ে আবাদ করছেন। এতে উপকৃত হচ্ছেন কয়েকটি গ্রামের হাজারো কৃষক। অপরদিকে এ প্রকল্প থেকে খালের দক্ষিণ পাশে কাঁটাবাড়ি অংশে ঝুঁকিপূর্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। এতে করে বন্যার সময় বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কোন আশঙ্কা থাকবে না।

কাঁটাবাড়ি গ্রামের কৃষক আব্বাস আলী বলেন, কাঁটাবাড়ি খালের পানি দিয়ে তিনি ৬ বিঘা জমির বোরো আবাদ করেছেন। শ্যালো মেশিন দিয়ে আবাদ করতে গিয়ে খরচ বেশি পড়তো। কিন্তু খালের পানি দিয়ে আবাদ করে কিছুটা খরচ কম হয়েছে। আত্রাই নদীর পানি কাঁটাবাড়ি খাল দিয়ে শুম্ভুপুর বিলে যেন প্রবেশ করতে না পারে নদীর মুখে একটি স্লুইচগেটের ব্যবস্থা আছে। বেশি পানি হলে স্লইচগেট দিয়ে বের করে দেয়া হয়। এছাড়া পরিমাণ মতো পানি ক্যানেলে রেখে আমরা সারা বছর আবাদ করতে পারি।

সমিতির সদস্য হাড়পুর গ্রামের ইয়াকুব আলী, সুকুমার দাস ও কোষাধ্যক্ষ খাদেমুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় এলাকাবাসী ও আমাদের সমিতির সদস্যদের প্রায় ৫শ হেক্টরের মতো জমি আছে। এ খালের পানি দিয়ে রবি মৌসুমের আবাদ করা হয়। এছাড়া শুম্ভুপুর বিলে যে সাড়ে চার’শ বিঘা জমি আছে সেখানে শুধু বোরো আবাদ হতো। বোরো মৌসুমের সময় যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে পানিতে ডুবে কৃষকদের ফসলের ক্ষতি হতো। অন্যান্য সময় পানিতে তলিয়ে থাকত। কিন্তু এখন বৃষ্টি হলে বিলের পানি সহজেই নিষ্কাশন হচ্ছে। এছাড়া যে বাঁশের সাকো করা হয়েছে তা দিয়ে সহজেই পারাপার হওয়া যায়। আর আগে খাল পার হতে অনেক দুর ঘুরে আসতে হতো।

কাঁটাবাড়ি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সভাপতি মিজানুর রহমান ও সাধারন সম্পাদক আজিজুল হক বলেন, সমিতির সদস্য সংখ্যা হচ্ছে ৬০৩ জন। সমিতির সদস্য ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সুবিধার্থে একটি খাল খননের জন্য উপজেলা এলজিইডিতে একটা আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে আমাদের সমিতির নামে একটি প্রকল্প আসে। যেখানে খাল খনন, ব্রীজ ও রেফান্সে লাইন করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর পত্নীতলা উপজেলা প্রকৌশলী সৈকত দাস বলেন, গত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে উক্ত খাল পুনঃ খননের জন্য ৫১ লাখ ৫২ হাজার ৪৯৫ টাকা বরাদ্দ করা হয়। বরাদ্দের ভিত্তিত্বে ১৮টি এলসিএস গ্রুপ কাজ করেন। ভূর্গস্থের পানির চাপ কমাতে খাল পূর্নঃ খনন করা হয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, খাল পুনঃ খননে স্ক্যাবেটর দিয়ে ৭০ শতাংশ এবং সুবিধাভোগী শ্রমিকদের দিয়ে ৩০ শতাংশ কাজ করা হয়েছে। এ খাল থেকে সমিতির সদস্য ও স্থানীয় কৃষকরা তাদের জমিতে ফসল ফলানোর কাজে ব্যবহার করছেন। এছাড়া সমিতির সদস্যরা যদি মনে করেন ‘মাছ চাষ ও হাঁস পালন’ করতে পারেন। এতে করে সমিতির সদস্যের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন হবে। তবে একটি পক্ষ আমাদের কাছে সুবিধা না পেয়ে কাজের বিষয় নিয়ে গুজব রটিয়েছে।