বগুড়ায় শ্রাবনের বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমন চাষে ঝুঁকে পড়েছে চাষিরা | Daily Chandni Bazar বগুড়ায় শ্রাবনের বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমন চাষে ঝুঁকে পড়েছে চাষিরা | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১৯ আগস্ট, ২০১৯ ০৪:৫৬
বগুড়ায় শ্রাবনের বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমন চাষে ঝুঁকে পড়েছে চাষিরা
চাল পাওয়া যাবে পৌনে ৫ লাখ মেট্রিক টন
এইচ আলিম

বগুড়ায় শ্রাবনের বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমন চাষে ঝুঁকে পড়েছে চাষিরা

ছবি: সংগৃহীত

ঝুমবৃষ্টি আর বন্যার পর চাষমুখি হচ্ছে বগুড়ার চাষিরা। চলতি শ্রাবনের বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমন ধান চাষে ঝুঁকে পড়েছে চাষিরা। বন্যায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাষিরা পানি নামার সাথে সাথে চাষে কর্মমুখি হয়ে উঠেছে। জেলার কৃষি কর্মকর্তারা চাল আকারে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ফলন পাওয়ার আশা করছেন। আর ভাল উৎপাদন পাওয়ার আশায় আমন চাষিরা প্রস্তুতি নিয়েছে। জেলার চাষিরা বন্যা আর শ্রাবণের বৃষ্টির পানিতেই আমন চাষ প্রায় শেষ করে এনেছে। 

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, উত্তরের জেলাগুলোর মধ্যে বগুড়া একটি কৃষি প্রধান এলাকা। ধান, পাট, সবজি, মরিচ, ভুট্টা, আলু, সরিষার জন্য বগুড়া কৃষি ক্ষেত্রে বরাবরই অবদান রাখছে। তবে সবজির পর আলু উৎপাদনের মত বগুড়ায় উল্লেখ্যযোগ্য উৎপাদন হয়ে থাকে ধান। জেলার সিংহ ভাগ চাষিদের কাছে আমন ধান চাষ লাভজনক হয়ে আছে। চাষিরা এই চাষের মধ্যে দিয়ে তাদের আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকে। কৃষি বিভাগের মতে জেলায় ২০১৭ সালে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রায় ১ লাখ ৭৮ হাজার হেক্টর। কিন্তু মাঝে ব্যাপক বন্যার কারণে শেষ পর্যন্ত আমনের চাষ দাঁড়ায় প্রায় দেড় লাখ হেক্টর। এই পরিমান জমিতে ফলন পাওয়া যায় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন। পরের বছর ২০১৮ সালে এসে ভাল ফলন পাওয়া যায় বগুড়ায়।

গত বছর জেলায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কম থাকায় চাষের জমিও ছিল বেশি। এবছর ২০১৯ সালে ইতিমধ্যে প্রথম ধাপের বন্যায় জেলায় আমনের বীজতলা ও আমান চাষ করা জমি ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর। ৭টি উপজেলা বন্যা দেখা দেয়ায় এই ক্ষতি হয়েছে। জেলার কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন জেলায় কমপক্ষে ১১ হাজার আমন চাষি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জেলায় এবছর ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ হেক্টর আমন চাষ করা হবে। আর ফলন হিসেবে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় পৌনে ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল। ইতিমধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর চাষ হয়েছে। যেটুকু বাকি রয়েছে সেটিও কয়েকদিনের মধ্যে হয়ে যাবে। বন্যার পানি নেমে গেলে চাষের লক্ষ্যমাত্র অর্জন হবে। 

জানা যায়, জুলাই মাসের শুরুতে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বেড়ে প্রথম বন্যা দেখা দেয়। এরপর জেলার ধুনট, সোনাতলা, গাবতলী, শাজাহানপুর, শিবগঞ্জ, শেরপুর উপজেলায় পর্যায়ক্রমে বন্যা দেখা দেয়। বাঙালি নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট বন্যায় বগুড়া সদরের কয়েকটি এলাকায় এবার বন্যার পানি দেখা যায়। বন্যায় বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি সাধিত হয়। পাট, আউশ, আমন, শাকসবজি, আখসহ অন্যান্য ফসল মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার হেক্টর ফসলের জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার চাষিরা বলছেন, চলতি বন্যার পানি কমে গেলে আবারো বীজ, চারা, সার দিয়ে আমন চাষ করতে দিগুণ খরচ গুনতে হবে। সময়মত আমন চাষ না হলে ভাল ফলনও সে ক্ষেত্রে না পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের বিনামূল্যে বীজ বিতরণ করা হবে। যেন তারা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে।

বগুড়া সদরের মাটিডালি, সাবগ্রাম, শ্যামবাড়িয়া, দ্বিতীয় বাইপাস সড়ক, বারপুর ফুলবাড়ি এলাকাসহ বেশ কিছু এলাকায় আমন চাষিদের মাঝে ব্যস্ততা দেখা গেছে। উল্লেখিত এলাকার আমন চাষিরা বীজ সংগ্রহ করে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতেই আমন চাষ শুরু করেছে। জেলার উচুঁ বা বন্যা কবলিত হয়নি এসব এলাকার চাষিরা সেচ দিয়ে আমন চাষ করেছে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, আশা করছি এবছর ভাল ফলন পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ হেক্টরের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন আমন চাষ হয়েছে। কয়েকটি এলাকায় বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে চাষিরা। কৃষকরা পুরোদামে চাষে নেমেছে। চাল আকারে ভাল ফলন প্রত্যাশা রয়েছে।