জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠছে টিকেট বিহীন নারী পুরুষ | Daily Chandni Bazar জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠছে টিকেট বিহীন নারী পুরুষ | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১৯ আগস্ট, ২০১৯ ২১:৫০
জয়পুরহাটে রেল ষ্টেশনে ঢাকাগামী যাত্রীদের উপচে পড়া ভীর
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠছে টিকেট বিহীন নারী পুরুষ
সুমন কুমার সাহা,ব্যুরো প্রধান,জয়পুরহাটঃ

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠছে টিকেট বিহীন নারী পুরুষ

জয়পুরহাটসহ আক্কেলপুর ও পাঁচবিবি রেল ষ্টেশনে গত ৩ দিন থেকে ঈদ পরবর্তী ঢাকা গামী যাত্রীদের উপচেয়ে পড়া ভীর লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর এই সুযোগে ষ্টেশনে আগত ঢাকাগামী বেশীরভাগ যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিনা টিকেটে মই দিয়ে ছাদে উঠে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন । এতে মোটা অংকের লোকসানে পড়ছে রেল কতৃপক্ষ। 
 
রেল ষ্টেশন সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি রেলষ্টেশন থেকে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা, আক্কেলপুর রেলষ্টেশন থেকে নওগাঁর বদলগাছি,জয়পুরহাটের রেলষ্টেশন থেকে পাঁচটি উপজেলার যাত্রীরা ছাড়াও  ধামইরহাট  উপজেলার প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ ট্রেনে ঢাকায় চলাচল করে থাকে।  
 
ঢাকা থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত নিলসাগর এক্সপ্রেস এবং ঢাকা থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত একতা এক্সপ্রেস ও দ্রুতযান এক্সপ্রেক্স ট্রেনের যাত্রা বিরতির জন্য জয়পুরহাটসহ আক্কেলপুর,পাঁচবিবি রেলষ্টেশনগুলোতে স্টপেজ রয়েছে। 
 
জয়পুরহাটসহ আক্কেলপুর,পাঁচবিব রেলষ্টেশনগুলোতে এই তিন ট্রেনের মধ্যে নিলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকার জন্য ৮০ টি,একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে ৮৫ এবং দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে ৭৭ টি সিটের বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে জয়পুরহাট রেলষ্টশনে টিকেটের যা বরাদ্দ তার অর্ধেক টিকেট মোবাইল অ্যাপসে দেওয়া হয়। 
 
এই তিন ট্রেনে ঈদের আগে গড়ে প্রতিদিন সিট সহ টিকিট বিক্রি হতো ৬০০ থেকে ৬৫০ টি। ঈদের আগে গত ৫ আগস্ট তিন ট্রেনে সিটসহ টিকিট বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু উপায় না পেয়ে যাত্রীরা সিট ছাড়াও টিকেট কেটে নেয়। 
তবে ঢাকাগামী যাত্রীদের অভিমত ষ্টেশনগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় আসন সংখ্যা সীমিত তাই সিটবিহীন ট্রেনে টাকা দিয়ে টিকেট কেটে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে টাকা ছাড়া দাঁড়িয়ে যাওয়া অনেক ভাল।
 
সরেজমিনে গত রবিবার ও সোমবার আক্কেলপুর ষ্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল ৯ টার মধ্যে অনেকেই ষ্টেশনে আসে ঢাকা অভিমুখে যাত্রার জন্য। সকাল ১০ টা থেকে ১১ টার মধ্যে ষ্টেশনের যাত্রী ছাউনী পরিপূর্ণ গাদাগাদি অবস্থায় হাটা চলাও ছিল দূঃসাধ্য। দুপুর হতে হতে পুরো ষ্টেশন ঢাকা সহ বিভিন্ন গনÍব্যে যাওয়ার জন্য যাত্রীতে ভরে যায়,এযেন আষাঢ়ের বৃষ্টিতে টইটুম্বুর। তবে ঢাকাগামী যাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশী। ষ্টেশনের উত্তর থেকে দক্ষিণ পার্শ্ব পর্যন্ত প্রায় ১৫-২০ টি মই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্থানীয় লোকজন।লক্ষ করে দেখলাম তারা ট্রেনের যাত্রীদের ১০/২০ যার কাছে যেমন টাকা নিয়ে মই দিয়ে ছাদে উঠিয়ে দিচ্ছেন। একই চিত্র জয়পুরহাট ও পাঁচবিবি রেলষ্টেশনেও।যারা ছাদে উঠছেন তাদের বেশীরভাগই টিকিট বিহীন যাত্রী। ছাদে নারী পুরুষ উভয়েই উঠছেন নিজ কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য।
 
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই তিনটি রেলষ্টেনে বগুড়া জেলার দূপচাঁচিয়া, জয়পুরহাটের পাঁচটি উপজেলা এবং নওগাঁ জেলার বদলগাছি, ধামইরহাট উপজেলার বেশির ভাগ যাত্রীরা নিরাপদ,আরামদায়ক ও ঝুকিমুক্ত হওয়ায় এই ৩টি রুট ব্যবহার করে থাকেন। বিশেষ করে দুই ঈদে সব চেয়ে যাত্রীসংখ্যা বেশী থাকে।কিন্তু প্রশাসনের বিশেষ করে রেলপুলিশ,জিআরপি ও অন্যান্য সংস্খার উপস্খিতি নজরে এলেও সাধারন যাত্রীদের নিরাপত্তায় ততটা তৎপরতা ছিলনা। যেকারনে যাত্রীদের পকেটমারের উৎপাত,বখাটেদের ইফটিজিং সহ নানা বিপাকে পরতে হয়েছে।যাত্রীর অসম্ভব চাপ থাকায় স্টেশন কতৃপক্ষকে সবসময় বেতিব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।জয়পুরহাট প্লাটফর্মে নাম না জানা অনেক যাত্রীদের সাথে স্টেশন কতৃপক্ষের সহযোগিতার তথা জানতে চাইলে কেউ বলেছে অতীতের চাইতে ভাল আবার অনেকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন। একটি কথা সবার মুখে শোনা গেছে যে, সিসি টিভি ক্যামেরা স্টেশন গুলোতে যুক্ত করলে সকলের জন্য মক্সগল হতো। 
 
আক্কেলপুর উপজেলা ভদ্রকালী গ্রামের ঢাকাগামী যাত্রী আলমগীর হোসেন, জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামের আহসান হাবীব জানান, তারা দুই জন বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন এবার গ্রামের বাড়ীতে ঈদ করতে এসেছিলেন। অনেক কষ্টে লাইনে দাঁড়িয়ে সিটযুক্ত টিকিট কেটেছে তারা। ষ্টেশনে যত ভীর ট্রেনে উঠে সিট পর্যন্ত পৌঁছানোই দায়। ঢাকা থেকে বাড়ি আসার সময় দেখেছি ট্রেনে ভীর থাকার কারনে ট্রেনের ভিতরে টিকিট কেউ চেক করে না। তারপরেও দেশকে ভালবেসে টিকিট কেটে এই ভীরের মধ্যেই ঢাকা যাচ্ছে তারা।
 
ট্রেনের ছাঁদে থাকা পাঁচবিবি উপজেলার শিমুলতলী গ্রামের মরিয়ম আক্তার বলেন, ট্রেনের মধ্যে যে ভীর টিকেট কেটে কোন লাভ নেই। তার কারন সব টিকেট আগেই শেষ হয়ে গেছে। তাই বিনা টিকিটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১০ টাকা দিয়ে মই দিয়ে ছাঁদে উঠে নিজ কর্মস্থল ঢাকায় যাচ্ছি।
 
অতিরিক্ত ভীরের কারনে ট্রেনে উঠতে নাপারা রুমা পারভীন আক্ষেপের সুরে বলেন, আমি দ্রুতযান ট্রেনের টিকিট কেটে ভীরের কারনে উঠতে পারিনি অথচ যারা বিনা টিকেটে যাচ্ছে, ষ্টেশনে তাদের চেক করার কোন লোক নেই। 
 
আক্কেলপুর উপজেলার উত্তর রোয়াইর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন বলেন, ষ্টেশনে আজ অনেক লোক ছিল ঢাকায় যাওয়ার জন্য। আমি লাইনে দাড়িয়ে টিকেট কেটে ট্রেনে উঠতে পারলাম না। ষ্টেশনে টিকিট চেক করার যদি লোক থাকতো তাহলে সবাই টিকেট কাটত। যারা টিকেট কাটেনি তারা ঠিকিই ট্রেনে উঠে চলে গেল। 
 
নাম না প্রকাশ করার শর্তে আক্কেলপুর রেল ষ্টেশনের স্থানীয় এক দোকানদার বলেন,ঢাকাগামী যাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশ লোকই ঈ মৌসুমে ট্রেনের টিকিট কাটে না। 
জয়পুরহাট রেল ষ্টেশনের ষ্টেশন মাষ্টার হাবিবুর রহমান বলেন,ষ্টেশনে ট্রেনের টিকেট বিক্রি আগের চেয়ে অনেক বেশী হচ্ছে। যেসকল যাত্রীরা ঢাকায় গিয়েছেন তারা সকলেই টিকিট কেটেই গেছেন। ট্রেনের ছাঁদে মই দিয়ে উঠা বা ছাঁদে ভ্রমন আইনত দন্ডনীয় অপরাধ যেহেতু ঈদের মৌসুম তাই সব ষ্টেশন থেকেই মই দিয়ে ট্রেনের ছাঁদে লোকজন উঠে ঢাকায় যাচ্ছেন।মাইকে ঘোষনা দিয়ে বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও কেউ ছাদ থেকে নামছে না।