বগুড়ায় এক জমি থেকে ৪ টি ভিন্ন ফসল চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের | Daily Chandni Bazar বগুড়ায় এক জমি থেকে ৪ টি ভিন্ন ফসল চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৯:৩৩
বগুড়ায় এক জমি থেকে ৪ টি ভিন্ন ফসল চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের
এইচ আলিম

বগুড়ায় এক জমি থেকে ৪ টি ভিন্ন ফসল চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের

বগুড়ায় কৃষির সাথে আরো এক ধাপ সাফল্য যোগ হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা গবেষণা করে এক জমি থেকেই ৪টি ভিন্ন ফসল চাষের কৌশল বের করে সফলতার মুখ দেখেছে। সফলতা পাওয়ায় ৪ টি ভিন্ন ফসল চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের মাঝে।

কম সময়ে ৪টি ফলনেরই অধিক ফলন পওয়ায় জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে চার ফসল চাষের পদ্ধতি। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন ব্রী-৪৮ ধান ও ব্রী-৮২ চাষবাস শুরু করলে একই জমিতে ৪টি ফলন পাওয়া যাচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন, যতদিন যাচ্ছে ব্রী-৪৮ ধান ও ব্রী-৮২ ধানের সাথে ৪ ফসল চাষের প্রতি ঝুঁকছে চাষিরা। কৃষকরা এই পদ্ধতি অবলম্বন করে ধান চাষে দিনদিন আগ্রহী হয়ে উঠছে।

বগুড়া কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনস্থ সরেজমিন গবেষণা বিভাগের কৃষি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা বলছেন, ফসল নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণে চার ফসল ভিত্তিক ফসল বিন্যাস উদ্ভাবন ও বিতরণ কর্মসূচির আওয়াতায় ব্রী-৪৮ ধান ও ব্রী-৮২ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে তারা কাজ করে চলেছেন। বেশি ফলন পাওয়ার উপায়, চাষ পদ্ধতি বিষয়ে কৃষক ট্রেনিং থেকে শুরু করে তারা কৃষকদের ধান স্পর্কে ধারণা প্রদান করছেন। এই ধানের সাথে চাষিদের একই জমিতে বছরে ৪টি ফসল পাওয়াও উপায়ও বলে দিচ্ছেন। 
কৃষি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা বলছেন, সময় কম এবং ব্রী-৪৮ ধান চাষে ভাল ফলন পাওয়া যায়। ব্রী-৪৮ ধান চাষ পদ্ধতি নিয়ে একটি আলাদা প্যাটান দাঁড় করানো হয়েছে। এই প্যাটানে চাষবাস করলে একটি জমি থেকে বছরে ৪ টি ফলন পাওয়া যাবে।

এই প্যাটানের মধ্যে রয়েছে প্রথমটি সরিষা চাষ করা। ৮০ দিনে সরিষা কাটার পর বোরো চাষ করা হবে ফেব্রুযারি ১৫ তারিখ পর্যন্ত। মে মাসের প্রথশ দিকে বোরো কাটার পর মে মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে আউশ বা ব্রী-৪৮ জাত রোপন করলে ফলন তোলা যাবে ১৫ আগস্টের মধ্যে। এরপর যথারীতি আমন চাষ করা যাবে। আর অপর একটি প্যাটান বা পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা এই পদ্ধতিতে রয়েছে প্রথমে আলু এরপর মিষ্টি কুমড়া, এরপর আউশের সময়ে ব্রী-৪৮ এবং আমন ধান চাষ করে ফলন পাওয়া। এ জমি থেকেই বছরে চারটি ফলন পাওয়ার বিষয়ে কাজগুলো গবেষণার মাধ্যমে কাগজে কলমে দেখাচ্ছেন সরজমিন বিভাগের কৃষি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। তারা দাবী করেছেন বিঘা প্রতি ব্রী-৪৮ ধান চাষে সার, বীজ, নিড়ানী, পানি অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হবে।

বিঘায় ফলন পাওয়া যাবে ২০ থেকে ২২ মন করে। যা ৬০০ টাকা মন ধরে বিক্রি করলে এক বিঘা থেকে বিক্রি দাঁড়াবে ১৩ হাজার টাকা। ১১০ দিনে ফলন ঘরে তোলা যায়। এই ধানের চাল মাঝারি মোটা হয়ে থাকে। ভাত হয় ঝরঝরে। হেক্টর প্রতি ফলল পাওয়া যায় সাড়ে ৫ টনের মত। ২০০৮ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক চাষের অনুমোদন পায়। তারপর থেকে দেশে এই ধান কমবেশি বিভিন্ন স্থানে চাষ বাস হয়ে আসছে।

বগুড়া কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনস্থ সরজমিন গবেষণা বিভাগের বৈজ্ঞানিক সহকারি আবু মাসুদ জানান, বগুড়ার এই বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা হলেন শহিদুল আলম। তারা সকলে মিলে কৃষকদের চাষ পদ্ধতি দেখান। হাতে কলমে বা সরজমিনে দেখানোর পর চাষিদের এই দান চাষে উৎসাহিত করা হয়। এপর্যন্ত অনেক চাষিকে এই ধান চাষে আগ্রহী করা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন বিষয়ে দেখানো হয়েছে। গাবতলী উপজেলার দাড়াইল এলাকায় কৃষকদের সাথে যৌথভাবে এই ধান চাষ করে বগুড়া এলাকায় সফলতা পাওয়া গেছে। জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ব্রী-৪৮ অনুমোদন পওায়ার আমরা শুধু একটি পদ্ধতি কৃষকদের মাঝে দেয়া হয়েছে। যা দিয়ে চাষিরা বছরে ৪টি ফলন পাবে। ব্রী-৪৮ ধান ও ব্রী ৮২ যেহেতু কম সময়ে হচ্ছে। তাই জমি ফেলে না রেখে চাষমুখি হলে কৃষকের লাভ এবং আয় দুটিই হচ্ছে। 

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, গত কয়েক বছর ধরে বগুড়ায় ব্রী-৪৮ ধান চাষ বাস হচ্ছে। আগে তেমন একটা চাষবাস হতো না। এখন এই ধান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে চাষিরা। চলতি মৌসুমে জেলায় ১৮ হাজার ২২ হেক্টর জমিতে ব্রী-৪৮ ধান চাষ হয়েছে। ৮০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে এবছর বন্যা ও নানা কারণে ফলন পাওয়া গেছে বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ১৭ মন করে। কোন কোন স্থানে অতি বন্যার কারণে ফলন কমেছে। গত ৩ বছরের বেশি সময় ধরে এই ধান চাষ করছে চাষিরা। ১১০ দিনের মধ্যে কম সময়ে ফলন পাওয়া যায় বলে চাষিরা আগ্রহ দেখাচ্ছে। অন্য দেশিজাতের ধানগুলো ১৩০ দিনের মত লাগে ধান পেতে। ব্রী-৪৮ ধান চাষের সাথে কমপক্ষে ৭০ হাজার চাষি জড়িত রয়েছে। প্রথম দিকে ১০ হাজার হেক্টরের মত চাষবাস হতো। দিনদিন এখন চাষ বেড়েছে। এই চাষ বাড়াতে কৃষি গবেষনায় কাজ চলছে। তবে এই ধান চাষের মধ্যে দিয়ে একই জমি থেকে পরপর ৪টি ফসল চাষ করা যায়।