বগুড়ায় ১২ টি থানায় সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের কার্যক্রম | Daily Chandni Bazar বগুড়ায় ১২ টি থানায় সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের কার্যক্রম | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০১:০৩
বগুড়ায় ১২ টি থানায় সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের কার্যক্রম
জেলা পুলিশের উদ্যোগে লিঙ্গ সমতায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজের লক্ষ্যে যুব সমাবেশ অনুষ্ঠিত
সঞ্জু রায়:

বগুড়ায় ১২ টি থানায় সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের কার্যক্রম

‘ইয়ূথ ভলেন্টিয়ার’স ফর জেন্ডার ইকুয়ালিটি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বগুড়ায় জেলা পুলিশের আয়োজনে বুধবার শহরের পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে জেলার ৫টি উপজেলা থেকে আগত প্রায় শতাধিক তরুণ সেচ্ছাসেবীদের অংশগ্রহণে যুব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ইউএনএফপিএ’র সহযোগিতায় দিনব্যাপী সমাবেশের সকালে বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন ঘোষণা করেন বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার)। সমাবেশে দিনব্যাপী নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে করণীয় নিয়ে দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়। সেই সাথেই বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং বন্ধসহ সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে একজন সেচ্ছাসেবক হিসেবে করণীয় দিক নিয়ে দলীয় কাজের মাধ্যমে নানা শিক্ষণীয় বিষয় আলোচনা করা হয়।

পরে দুপুরের পর সমাপনী অনুষ্ঠানে জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার) এর সভাপতিত্বে তরুণ সেচ্ছাসেবী মাঝে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বগুড়া জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লিঙ্গ সমতা যা ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে অবশ্যই অর্জন করতে হবে। তিনি আরও বলেন প¦ার্শবর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে লিঙ্গ সমতা অর্জনে অনেক ভাল অবস্থানে রয়েছে যা বহির্বিশে^ ইতিমধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে। দেশের মোট জনসংখ্যার সিংহভাগ জনসংখ্যা আমাদের তরুণ প্রজন্ম তাই তাদের জনশক্তিতে রুপান্তরিত করে সোনার বাংলাকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্বও সকলকে নিজ কাঁধেই নিতে হবে।

এদিকে সভাপতির বক্তব্যে জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার) লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে করণীয় নানাদিক নিয়ে আলোচনা করেন। সেই সাথে সারাদেশে প্রথম বগুড়ায় চালু হওয়া নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের সফলতা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন এমন অনেক বিষয় আছে যা একজন নারী বা ভিকটিম কিশোরী থানায় এসে সহজেই বলতে পারেনা তাই প্রথমে ইউএনএফপি’র সহযোগিতায় প্রাথমিকভাবে বগুড়ার ৩টি থানা যথাক্রমে সদর, নন্দীগ্রাম ও সোনাতলা থানায় সার্বক্ষণিক একজন নারী কর্মকর্তাকে পদায়নের মাধ্যমে গোপনীয়তা রক্ষার মাধ্যমে সেবা প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক চালু করা হয় এবং বর্তমানে জেলার ১২টি থানাতেই এই হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়েছে।

গত এক বছরে এপর্যন্ত পুরো জেলায় এই হেল্প ডেস্কে মোট অভিযোগ এসেছে ১ হাজার ৬’শ ৬৫ টি যার মধ্যে আইনের ধারায় মীমাংসার অযোগ্য ৩০৪ টি অভিযোগ মামলা হিসেবে দায়ের হয়েছে এবং সিংহভাগ প্রায় ১ হাজার ৪’শ ১৯ টি অভিযোগ সুষ্ঠুভাবে মীমাংসা হয়েছে যা সত্যিই ইতিবাচক একটি পরিবর্তনের সংকেত। জেলা পুলিশের এই কর্ণধার আরো বলেন, এখন পর্যন্ত এলাকাভিত্তিক জেলা পুলিশের সার্বিক আয়োজনে এবং ইউএনএফপিএ’র সহযোগিতায় গত এক বছরে ১৪৮ টি সচেতনতামূলক সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে যেখানে সরাসরি প্রায় ৩০ হাজার ২’শ মানুষ অংশগ্রহণ করেন যার মধ্যে সমাজের সকল শ্রেণীপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের পাশাপাশি জেলা পুলিশের পক্ষে বর্তমানে তরুণ সেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত করা হচ্ছে যারা পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে এবং এলাকাভিত্তিক সচেতনতার বলয় গড়ে তুলবে। বগুড়ায় যে সফলতার সাথে নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক পরিচালনা হচ্ছে তার গতি আরও বেগবান হবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই তরুণ সেচ্ছাসেবীদের হাত ধরে। জেলা পুলিশের পক্ষে তিনি আরো বলেন নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক চালুর পর থেকে জেলায় নির্যাতিত নারী ও শিশুর গোপনীয়তা রক্ষা হচ্ছে, এ সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা কমে গিয়ে মীমাংসার সংখ্যা বেড়েছে যাতে করে পারিবারিক ভাঙ্গন রোধ সম্ভব হচ্ছে।

জেলায় এই হেল্প ডেস্ক চালুর পর থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত অপরাধ অনেকটাই কমে এসেছে বলে স্বস্তির সাথে এই কার্যক্রম ভবিষ্যতে চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তাপস কুমার পালের সঞ্চালনায় এবং ইউএনএফপি’র বগুড়া জেলা প্রতিনিধি তামিমা নাছরিনের ব্যবস্থাপনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রায়হানা ইসলাম, পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার যথাক্রমে সফিজুল ইসলাম ও আব্দুল জলিল পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সনাতন চক্রবর্তী, বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম ঝুনু এবং বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম বদিউজ্জামান, শাজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আজিম উদ্দিন সহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকবৃন্দসহ অনেকে। উল্লেখ্য সরকারি কার্যক্রমের পাশাপাশি নিজ দায়িত্ববোধ থেকে বগুড়া জেলা পুলিশ পরিবারের সচেতনতামূলক নানা উদ্দ্যোগ এবং নানা মানবিক কর্মসূচী গ্রহণ বগুড়ার হাজারো মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি আপামর ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে যা ইতিমধ্যেই জেলার সকলের দৃষ্টি কেড়েছে এবং এসব কার্যক্রমের নেতৃত্বে থাকা জেলা পুলিশ সুপারের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জেলার সর্বস্তরের মানুষ। সেই সাথে জনবান্ধব পুলিশিং এর ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে সকলে আশা প্রকাশ করেছেন।