পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক মো. কবীর মাহমুদ। তিনি বলেন, পদ্মার পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্টরা সচেষ্ট রয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবী করছে, উজান থেকে যে প্রবল বেগে পানি ধেয়ে আসার কারণে পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করেছে। এদিকে প্রবল স্রােত ও অতি পানির ফলে পদ্মা নদী তীরবর্তী এলাকার প্রায় ৫শ’ হেক্টর নানা ফসলি ও নিচু জমি ডুবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিপুল অংকের নানা জাতের ফসল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার উপ সহকারী প্রকৌশলী সানজানা নাজ মঙ্গলবার জানান, পাবনার ঈশ^রদী উপজেলার পাকশীস্থ পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পয়েন্টে (৩০ সেপ্টেম্বর) সোমবার সন্ধ্যা ৬ টায় পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয়। ১৪ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার। গত কয়েকদিন ধরেই পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে ৫/৬ সেন্টিমিটার করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমা অতিক্রম করেছে। স্থানীয় সাঁড়া ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান রানা সরদার জানান, গত কয়েক বছর ধরে পদ্মায় পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করেনি। এবারে উজানের অতি প্রবল বর্ষণ ও ধেয়ে আসা পানির ফলে কোমরপুর থেকে সাঁড়াঘাট পর্যন্ত রক্ষা বাঁধের দুই থেকে তিন ফুট নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
পাকশী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস জানান, তার ইউনিয়নের রূপপুর সড়কের নিচু অংশে ফসলসহ জমি তলিয়ে গেছে। প্রতিদিনই পাকশীর বিভিন্ন স্থানে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ফসলসহ জমি। তবে এখন পর্যন্ত কোন বসতভিটা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। ঈশ^রদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বলেন, উপজেলার সাঁড়া, পাকশী ও লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের আখ, ফুলকপি, গাজর, মাষকলাই, মূলা, বেগুন, শিম, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ধানসহ ৪০০ হেক্টর জমির সবজি ও ফসল তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ফসলের ক্ষতি হয়েছে লক্ষীকুন্ডার দাদাপুর, চরকুরুলিয়া, কামালপুর ও বিলকেদায়। মাঠপর্যায়ে প্রাথমিক জরিপে এ তথ্য জানা গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে পানি কমে না যাওয়া পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ করা যাবে না।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড’র নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম জানান যে গতিতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছিল, ধারণা ছিল ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই পদ্মার পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করবে। পদ্মার গুরুত্বপূর্ন বাঁধগুলোতে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে।এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পদ্মায় যে হারে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা নদী ও নদী তীরবর্তীসহ আশপাশের জনমানুষের জন্য অশনিসংকেত। বৃহৎ ক্ষতির আগেই সরকারি ভাবে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সক্ষমতা অর্জন করে প্রস্তুত থাকতে হবে। উজানের পানি বৃদ্ধির গতি জানান দিচ্ছে, যে কোন সময়েই বিপদ আসতে পারে। এদিকে পাবনার বাংলা বাজার লঞ্চঘাট, সুজানগরে নাজিরগঞ্জ, চলনবিল, বড়াল, গোমতি, চিকনাইসহ ছোট খাটো বিলে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও কয়েকদিনের টানা বর্ষণের ফলে পানির পরিমানটা বেড়ে গেছে।