শেরপুরে ডিজিটাল জুয়ায় সর্বস্বান্ত তরুন ও যুবকরা! ফায়দা লুটছে বিশেষজ্ঞ পথপ্রবর্তক | Daily Chandni Bazar শেরপুরে ডিজিটাল জুয়ায় সর্বস্বান্ত তরুন ও যুবকরা! ফায়দা লুটছে বিশেষজ্ঞ পথপ্রবর্তক | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ২০ অক্টোবর, ২০১৯ ২০:২২
শেরপুরে ডিজিটাল জুয়ায় সর্বস্বান্ত তরুন ও যুবকরা! ফায়দা লুটছে বিশেষজ্ঞ পথপ্রবর্তক
শুভ কুন্ডু, শেরপুর(বগুড়া)প্রতিনিধিঃ

শেরপুরে ডিজিটাল জুয়ায় সর্বস্বান্ত তরুন ও যুবকরা! ফায়দা লুটছে বিশেষজ্ঞ পথপ্রবর্তক

রাজধানীতে চলমান ক্যাসিনোর চেয়েও বর্তমানে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে অনলাইন জুয়া। ক্যাসিনো চলে নির্দিষ্ট কোন ঘরে বা স্থানে। কিন্তু অনলাইনের এই জুয়া যে কোনো জায়গা থেকে যেকোনো সময় চালানো যেতে পারে। সব ধরনের খেলা নিয়েই চলছে এই জুয়া। প্রতিটি খেলায় একাধিক বিষয়ে ঐচ্ছিকভাবে বাজি ধরার পদ্ধতি আছে এ জুয়াতে। অনলাইনে জুয়া খেলার বেশ কিছু জনপ্রিয় সাইটগুলোর মধ্যে বিট৩৬৫ অন্যতম। তবে আধুনিক এই সাইটগুলো সমন্ধে অধিকাংশ জুয়াড়িরাই অজ্ঞ। যদিও বর্তমানে যারা এই অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত তাদের মধ্যে অশিক্ষিত বা নিরক্ষরের সংখ্যা খুবই কম।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেরপুর উপজেলায় বর্তমানে যে পরিমান অনলাইন জুয়া সাইটগুলোর একাউন্ট স্বত্ত্বাধিকারী আছেন তাদের মধ্যে ৮০% মালিকই অজ্ঞ কিন্তু মূর্খ নয়। তবে তারা কেউই এই একাউন্ট গুলো খুলতে বা পরিচালনা করতে পারদর্শী নন। একটি বিশেষজ্ঞ পথপ্রবর্তক চক্র এ খেলার একাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে পরিচালনা করার সকল পদ্ধতিই শিখিয়ে দিচ্ছেন। বিনিময়ে মোটা অঙ্কের ফিও নেন এইসব বিশেষজ্ঞরা। আর যেদিন থেকে একাউন্ট খুলে দেন তারা, ঠিক সেদিন থেকেই তাদের ফি নেয়া শুরু হয়। একাউন্টে যে ডলারের মাধ্যমে লেনদেন হয়, সেই ডলারের আদান-প্রদানও করে থাকেন এই বিশেষজ্ঞ পথপ্রবর্তকরা।

সেখানেও থাকে নির্দিষ্ট শতকরা হার এবং প্রতিবার ওই (বিট৩৬৫) একাউন্টে যে কোনো গোলযোগ হলেই তাদের কাছে গুনতে হয় ফি বাবদ  ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। কারন একাউন্টধারির একাউন্টে আছে হাজার হাজার ডলার, সেই তুলনায় ৮/১০ হাজার টাকা স্বল্প ব্যাপারই বটে। প্রথমে স্বল্প পরিসরে শুরু করলেও পরবর্তীতে সবাই লোকসান হওয়া ডলার ফিরে পেতে শুরু করে বৃহৎ পরিসরে। তখন আর বিশেষজ্ঞদের ফি নিয়ে চিন্তা করেন না তারা। এমনকি নিজস্ব একাউন্টের সকল ডকুমেন্টও দিয়ে রাখেন ওই সব বিশেষজ্ঞদের হাতে। ঠিক এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওই সকল অজ্ঞ লোকজনদের (একাউন্ট সত্বাধিকারীদের) বোকা বানিয়ে তাদের একাউন্ট থেকে নিজ বা অন্য কোনো একাউন্টে ডলার অপসারন করে নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে সুযোগসন্ধানী চতুর বিশেষজ্ঞদের বিরুদ্ধে।

এমন অবস্থায় সবকিছু হারিয়ে অজ্ঞ জুয়াড়িরা না পারে বলতে না পারে সইতে। এখান থেকেই জন্ম নেয় অপরাধ প্রবনতা। এমন এক ঘটনার উদাহরণ পাওয়া যায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার শেরপুর থানা ভবন এলাকায় শেরপুর থানার এক সহকারি পুলিশ পরিদর্শকের পরিচালিত এক দরবারে। ওই দরবারে রুহুল আমীন নামের আইটি বিশেষজ্ঞের বিরুদ্ধে দুইটি (বিট৩৬৫) একাউন্ট থেকে মোট ৩৬০৬ ইউএস ডলার(সাড়ে তিন লক্ষ) অপসারনের অভিযোগ ওঠে। তবে তিনি বর্তমানে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের জয়পুরহাটের আক্কেলপুর ব্রাঞ্চে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি এসব অনলাইন জুয়ার সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করছে বলে এমন অভিযোগ রয়েছে সচেতনমহলে।

তবে অনলাইন বিট৩৬৫ জুয়ায় শাহীনসহ আরো কয়েকজন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুকরা ক্ষতিগ্রস্থ ও সর্বস্বান্ত হয়েছে বলেও জানা গেছে এ অনুসন্ধানে। শুধু তাই নয় এসব ক্ষতিগ্রস্থদের দেয়া এ জুয়ার চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্যানুসারে জানা যায়, অল্প সময়ের মধ্যে বিশেষজ্ঞ (রুহুল আমিন) সমাজে ধনী শ্রেণীতে পরিণত হয়েছে। এসব প্রযুক্তি চালানোর কৌশলেই সর্বস্বান্ত হয়েছেন সাহায্যপ্রার্থী মক্কেলরা। অনুসন্ধানে আরও প্রকাশ, ওইসব আইটি সাইড বিশেষজ্ঞ বলে পরিচিত রুহুল আমিন দির্ঘদিন যাবত ডলার কেনা বেচা করে আসছেন। এমনকি  প্রায় সবধরনের ডলারই তার কাছে পাওয়া যায় যেমন- নিটেলার, স্ক্রিল, পেপাল ইত্যাদি। তিনি ৮০/৮৫ টাকায় প্রতি ডলার কিনে রাখতেন এবং ১০০/১০৫ টাকায় প্রতি ডলার বিক্রি করে থাকেন ওই একাউন্ট হোল্ডারদের কাছে।

যেহেতু তার কাছে ওই একাউন্টগুলোর সকল পাসওয়ার্ড ও ডকুমেন্টও থাকে, সেই সুযোগে তিনি ওই সকল একাউন্ট থেকে মোটা অঙ্কের ডলার অন্য একাউন্টে অপসারণ করে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে একাউন্ট থেকে ডলার অপসারনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রমান দেওয়া সাধারনত সম্ভব হয়না বলে জানিয়েছেন অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা। তবে একাউন্ট (বিট৩৬৫) পরিচালনার ব্যাপারে তিনি সাহায্য করতেন এ ব্যাপারে যথেষ্ট তথ্য প্রমান পাওয়া গেছে একাধিক ব্যাক্তির কাছ থেকে। শুধু ডলার অপসারনের ক্ষেত্রেই নয় অলিতে গলিতে ঘরে ঘরে আছে এই বিট৩৬৫ একাউন্ট। কিন্তু ধরার কোনো বুদ্ধি দৃশ্যমান না হওয়ার কারণে এ খেলার লেনদেন মোবাইল ফোন ও অনলাইনের মাধ্যমেই অহরহ হলেও লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।

তবে এটুকু নিশ্চিত করে বলা যেতে পারে যদি বিশেষজ্ঞ পথপ্রবর্তকরা এই অজ্ঞ লোকজনদের অনলাইন জুয়ার বিষয়ে কোনো সাহায্য না করতো তাহলে হয়তো অনলাইন জুয়ার পরিমান অনেকাংশে কমে যেতো। উপরোক্ত তথ্যগুলোর আলোকে বোঝা যায় এই ধরনের রুহুল আমীনরাই অনলাইন জুয়ার পথপ্রবর্তক এবং সরকারী চাকরীর পাশাপাশি এইধরনের অবৈধ কাজে সাহায্য করে দেশকে ও দেশের তরুন-যুবকদের একদিকে সর্বস্বান্ত করছেন অন্যদিকে নিজের আখের গোছাচ্ছেন। তবে এখনই এ ধরণের অনলাইনের জুয়ার হাত থেকে বিপথগামী যুবকদের ফেরাতে না পারলে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ  হবে এ নেশায় আসক্ত তরুন-যুবক সমাজ এমনটাই অভিমত ব্যক্ত করেছেন সচেতনমহলেরা।এ প্রসঙ্গে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখ বলেন, ওইসব অনলাইন সাইডগুলোর কথা শুনেছি, তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।