দূর্নীতি ও অনিয়মে জর্জরিত শেরপুরের দুগ্ধ ও গবাদি পশু উন্নয়ন খামার | Daily Chandni Bazar দূর্নীতি ও অনিয়মে জর্জরিত শেরপুরের দুগ্ধ ও গবাদি পশু উন্নয়ন খামার | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ২৩:৩৮
দূর্নীতি ও অনিয়মে জর্জরিত শেরপুরের দুগ্ধ ও গবাদি পশু উন্নয়ন খামার
শুভ কুন্ডু, শেরপুর(বগুড়া)প্রতিনিধিঃ

দূর্নীতি ও অনিয়মে জর্জরিত শেরপুরের দুগ্ধ ও গবাদি পশু উন্নয়ন খামার

সারাদিন শুকনো খড়ের সাথে ময়লা আবর্জনাযুক্ত ঘাস দিয়েই প্রতিটি প্রাণীর খাদ্য-চিকিৎসাসহ সরকারী বরাব্দকৃত অর্থের এক তৃতীয়াংশ অর্থই কর্মকর্তাদের পকেটে স্থান পায়, সঠিক পরিচর্যার অভাবে বিভিন্ন রোগব্যাধিতে ভুগছে শেরপুর ডেইরী ফার্মের একাধিক প্রাণী।

বগুড়া শেরপুরের গাড়িদহ এলাকায় প্রায় ৫৩ একর জায়গা নিয়ে ১৯৯৩ সালে গড়ে ওঠে শেরপুর উপজেলা ডেইরি ফার্ম। বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র দৃশ্যমান হলেও দীর্ঘ ২৬ বছর আগে গড়ে ওঠা সরকারি এই ডেইরি ফার্মের আশানুরূপ কোনো উন্নয়নের চিত্র চোঁখে পরেনি। প্রায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩৩টি গরু নিয়ে খামারটির যাত্রা শুরু হলেও এখন আছে ১৯৮টি। পশুসম্পদ নাম খেকে প্রাণিসম্পদ নামে পরিবর্তিত হলেও প্রাণিসম্পদের উপর মনুষ্যজাতির আগ্রহ ও অনুভূতি বৃদ্ধির নিমিত্বে উদ্ভাবিত সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে দূর্নীতি ও অনিয়মে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। অনিয়মে জর্জরিত শেরপুরের এই উন্নয়ন খামারটিতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৫৬জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। আর খামারের প্রধান হিসেবে বর্তমানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: আমির হামজা। খামারে পশুর সংখা দিনদিন কমলেও বেড়েছে কর্মচারীর সংখা। ৫৬ জন কর্মচারী থাকার পরও সঠিকভাবে পরিচর্যা হচ্ছে না এখানকার প্রাণিগুলোর। এখানে মোট গরু রয়েছে ১৯৮টি আর ভেড়া রয়েছে ৮২ টি। যদিও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: আমির হামজার দেওয়া তথ্যের সাথে ডেইরি ফার্মে কর্মরত রিপোর্ট কিপারের তথ্যের কোনো মিল পাওয়া যায়নি। মাত্র ৭দিনের ব্যাবধানে পাওয়া যায়নি ১১টি ভেড়ার হদিশ। আমির হামজা ৭দিন আগে চাঁদনী বাজারকে বলেছেন ভেড়ার সংখ্যা ৮২টি, ৭দিন পরে রিপোর্ট কিপার সুজাউদৌলা বলছেন ভেড়া আছে ৭১টি। এসময় ১১ টি ভেড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে ডেইরি ফার্মের রিপোর্ট কিপার মো: সুজাউদ্দোলা বলেছেন, কৃমিনাশক সময় মত না দেওয়ায় ভেড়াগুলি মারা গেছে। এলাকাবাসী বলেন, আসলেই কি মারা গেছে? নাকি বিক্রি করা হয়েছে? তবে যদি বিক্রি করা নাও হয়ে থাকে তাহলে এখানে কর্মরত ৫৬ জন কর্মচারী থাকার পরেও পরপর ১১ টি ভেড়া মারা যায় কিভাবে? যদি হিসাব করা হয় তাহলে এই খামারে সর্বমোট পশু আছে (গরু ও ভেড়া) ২৮০ টি, আর কর্মচারী ৫৬ জন। তাহলে প্রতিজনের উপর ৫টি করে পশু দেখার দায়িত্ব পরে। যেখানে অন্যান্ন ব্যক্তিগত খামারে মাত্র ২/৩ জন মানুষ ৫০/৬০ টি গরু/ভেড়া স্বাচ্ছন্দ গতিতে পরিচালনা করে থাকে এমনটাই দেখা গেছে বিভিন্ন খামার পরিদর্শন করে। এছাড়াও প্রতিদিনই এখানে ৪/৫ জন করে অতিরিক্ত শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে এবং বিল করা হচ্ছে। তাহলে ৫৬ জন থাকার পরও প্রতিদিন ৪/৫ জন অতিরিক্ত শ্রমিক কাজ করেও সঠিক ভাবে দেখাশোনা করা যাচ্ছে না এখানকার প্রাণিদের। তাহলে এই সরকারি খামারে মাত্র ২৮০টি পশু পালন করতে ৫৬জন কর্মচারী কোন গুরু দায়িত্ব পালন করে সরকারি বেতন ভাতা ভোগ করে যাচ্ছেন এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের। এছারাও এলাকাবাসীর অভিয়োগ, পরিমান মতো খাবার দেওয়া হচ্ছে না গরুকে। ফলে অপুষ্টিতে হাড্ডিসার হয়ে প্রতিবছরই মারা যাচ্ছে গরু, বাছুরগুলো ভুগছে পুষ্টিহিনতায়। গাভিগুলোও ঠিকমতো দুধ দিতে পারছে না। চাঁদনী বাজারকে এই খামারে কর্মরত রিপোর্ট কিপারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে খামারে ১৯৮টি গরুর মধ্যে দুগ্ধ গাভী আছে ৪৪টি, সুস্ক গাভী ৩২টি, এক বছর বয়স্ক বকনা আছে ৪৩টি, একবছরের নিচে বকনা আছে ৪৯টি, এক বছরের নিচে ষাড় আছে ২৯টি ও এক বছরের উপরে আছে ১টি। রিপোর্ট কিপারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিন ডেইরি ফার্মের গড় আয় ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা। তারা বলেছেন, দুগ্ধ গাভি রয়েছে ৪৪টি যারা প্রতিদিন দুধ দেয় গড়ে ৫লিটার করে। কিন্তু ফার্মে কর্মরত অন্যান্ন কর্মচারীদের সঙ্গে গোপনালাপে জানা গেছে, এইসব ভাল জাতের প্রতিটি গবাদিপশু প্রায় ১০/১৫ লিটার দুধ দেয়। শেরপুর উপজেলার বিভিন্ন ব্যক্তিগত খামার থেকেও একই তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যক্তিগত খামার গুলোতে পরিদর্শন করে দেখা গেছে ঐ একই ধরনের গরু প্রতিদিন দুধ দেয় সর্বনিন্ম ১০ থেকে ১৫ লিটার। সঠিক পরিচর্যার অভাবে প্রতিটি দুগ্ধজাতের গরু থেকে অন্তত ৪ থেকে ৫ লিটার হারে দুধ কম পাওয়া যাচ্ছে। অথচ প্রতিদিন সরকারের বিপুল পরিমান টাকা খরচ হচ্ছে এখানকার ৫৬জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেছনে কিন্তু বছরের পর বছর ধরে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনছে খামারটি।  এখানে প্রতি পদক্ষেপেই চলছে দুর্নিতি ও লুটপাট। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: আমির হামজা চাঁদনী বাজার কে বলেছেন, এখানে প্রণিদের প্রতিদিন দানাদার খাবার দেওয়া হয় ৫০২কেজি আর খর দেওয়া হয় ৪০০কেজি। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, বিশাল আয়তনের এই ডেইরি ফার্মের মাটিতে হওয়া ঘাস আর আবর্জনাযুক্ত শুকনো খর খেয়েই সারাদিন কাটে প্রাণিদের। খামারের পাশের বাসিন্দারা বলেন, প্রতিটি প্রাণির জন্য খাদ্য ও অন্যান্য বাবদ সরকারি বরাব্দকৃত টাকার এক তৃতীয়াংশই স্থান পায় এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটে। এ ছাড়াও ডেইরি ফার্মের ভিতরে সরকারি কুয়াটার থাকা সত্তেও নিয়মনিতি উপেক্ষা করে অনুমতি ছাড়াই করা হয়েছে আলাদা দুইটি টিনের ঘর যা কেন করা হয়েছে তার সঠিক কোনো কারন বলতে পারেননি কেউ।
এসব বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে শেরপুর দুগ্ধ ও গবাদিপশু উন্নয়ন খামারের চলতি দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: আমির হামজা চাঁদনী বাজার কে বলেন, এই খামারটি আসলে একটা প্রদর্শনী। এখান খেকে লাভ বা লোকসান হতেই পারে। তবে বেশকিছু কর্মচারী এখানে ফাঁকি দিচ্ছে। আমি এখানে অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি, তাই সবকিছু আমার একা সামলানো কষ্ট হয়ে পরেছে। তবে আগের চেয়ে আমি অনেকটা উন্নতিসাধন করেছি। আর টিনের ভবন বিষয়ে উনি বলেন, আমি আসার আগে থেকেই ওই ভবন ছিল, এবং আমি এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছি।