অন্যান্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। তবে ইউরোপ আমেরিকায় যেভাবে জ্যামিতিক গতিতে লাফিয়ে লাফিয়ে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সেরকম না। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর ২৭ মার্চ পর্যন্ত ২০ দিনে মাত্র ৪৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
যদিও কোন কোন বিশেষজ্ঞ বলতে চেষ্টা করছেন, ব্যাপক পরীক্ষা হয়নি এজন্য করোনা শনাক্ত হচ্ছে না। কিন্তু চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে বাংলাদেশে করোনা এখনো নিয়ন্ত্রণেই আছে।
এটা বলাই যায়, বাংলাদেশ ইউরোপ আমেরিকা, চীনের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। বাংলাদেশের আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, ৫ টি কারণে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ মহামারি হবে না বা মহামারি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। যে ৫ টি কারণ তারা উল্লেখ করছেন তার মধ্যে রয়েছে;
১. বয়স বিবেচনা: বাংলাদেশ তরুণ অধ্যুষিত একটি দেশ। এখানে তরুণদেরই প্রাধান্য রয়েছে। এখন পর্যন্ত সারাবিশ্বে যে করোনা পরিস্থিতি তা পর্যালোচনা করে দেখা যায় তরুণরাই করোনায় সবচেয়ে কম আক্রান্ত এবং ক্ষতিগ্রস্থ।
আক্রান্ত হলেও তাদের সেরে উঠার পরিমাণ শতকরা প্রায় ৯৮ ভাগ। সেই বিবেচনায় ইউরোপ বা আমেরিকার মতো বাংলাদেশে মহামারির প্রকোপ কম হওয়ার সম্ভাবনা বলে মনে করা হচ্ছে।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: বাংলাদেশ এমনিতেই নানা রকম প্রতিকূলতার মধ্যে বসবাস করে। ভেজাল খাবার, দূষিত পরিবেশ, বায়ূ দূষণ ইত্যাদি নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি এবং অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ বসবাস করে।
স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বাংলাদেশে যে পরিমাণ বায়ূ দূষণ হয় এরকমটা যদি ইউরোপের কোন দেশে কখনো হয় তাহলে তারা লক ডাউন করে দেবে।
কাজেই আমরা কিছু কিছু পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত। এই বিবেচনায় বাংলাদেশের মানুষের স্বাভাবিক যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, হয়তো অনেক মানুষই করোনায় আক্রান্ত হবেন কিন্তু এই যে লক্ষণগুলোর করোনার সেটা বুঝবেনও না। সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন। এ কারণে অনেকে মনে করছেন বাংলাদেশে করোনা মহামারি হওয়ার ঝুঁকি কম।
৩. পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা: আমরা বাংলাদেশের মানুষ এমনিতেই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করতে স্বাভাবিকভাবে অভ্যস্ত। যদিও বাইরে আমরা আবর্জনা ময়লা ফেলি যেখানে সেখানে, কিন্তু নিজের ঘর এবং নিজেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদের শিষ্টাচারের অংশ।
বিশেষ করে ধর্মীয় অনুশাসনে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, নামাজের আগে ওজু কিংবা খাবার আগে হাতে ধোয়াসহ নিয়মিত গোসলকরার মত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার রীতি অনুসরণ করার ফলে বাংলাদেশের মহামারি ঠেকাতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
৪. খাদ্যাভ্যাস: আমাদের খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে রয়েছে আমরা রান্না খাবার সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি। কাচা খাবার আমরা পারতপক্ষে খাই না। এ কারণে খাদ্যাভ্যাস করোনা মোকাবিলায় একটা বগ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
৫. আবহাওয়া: যদিও এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে দেখা যাচ্ছে, উষ্ণ অঞ্চলে করোনা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে না। যেমন সিঙ্গাপুর, কুয়েত কিংবা সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতে করোনা ধরা পড়লেও তা ব্যাপক আকারে সংক্রামিত হচ্ছে না।
এ কারণেই কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছাড়া কেউ কেউ আশাবাদ ব্যক্ত করছেন যে, উষ্ণ আবহাওয়া বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
এর কারণেই মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশে হয়তো শেষ পর্যন্ত করোনা মহামারি আকার ধারণ করবে না। কিন্তু যে যুক্তিগুলো দেওয়া হচ্ছে তার কোনটাই খুব একটা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি সম্মত নয়। শুধুমাত্র মানুষকে আশা জাগানীয়র মতো।
বাংলাদেশ অতীতেও বিভিন্ন সময় যে কোন দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। এখন দেখার বিষয় করোনা মোকাবিলাতেও বাংলাদেশ সেই সাফল্য দেখাতে পারে কিনা।
দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন