বড়বড় দুর্যোগে সেনাবাহিনী কাজ করলেও এবারই প্রথম করোনার বিরুদ্ধে মাঠে | Daily Chandni Bazar বড়বড় দুর্যোগে সেনাবাহিনী কাজ করলেও এবারই প্রথম করোনার বিরুদ্ধে মাঠে | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১৫ এপ্রিল, ২০২০ ২১:৪১
বড়বড় দুর্যোগে সেনাবাহিনী কাজ করলেও এবারই প্রথম করোনার বিরুদ্ধে মাঠে
ষ্টাফ রিপোর্টার

বড়বড় দুর্যোগে সেনাবাহিনী কাজ করলেও
এবারই প্রথম করোনার বিরুদ্ধে মাঠে

জাতিসংঘ মিশনে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। বিদেশের বিভিন্ন সংকট মোকাবেলায় সুনাম আছে। আর দেশের মধ্যে যখনই কোন বড় ধরণের দুর্যোগ সৃষ্টি হয় কিম্বা ঝড়, জলচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্থ হয় দেশের কোন অঞ্চলের মানুষ। সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কাজ করেছে। মানুষের পাশে এসে কষ্টের সঙ্গি হয়েছে দেশের সেনা সদস্যরা।

এতদিন জনসম্মুখে কয়েকটি চিহ্নত বিষয় নিয়ে কাজ করলেও এবার একেবারেই আলাদা বিষয়ে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এবারের মোকাবেলাটি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে। প্রথমবারের মত এই ভাইরাস মোকাবেলায় সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য তৎপর হয়ে কাজ করে চলেছেন। বগুড়ার সড়কে বা সেনাবাহিনীর কোন সদস্য দেখলেই সেই এলাকার মানুষ, দোকানপাট বন্ধ করে দ্রুত বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। বগুড়ায় করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে ফাকা হয়ে গেছে শহর। শহরে জরুরী সেবা ছাড়া কোথাও কোন দোকানপাট, খোলা নেই। সাধারণ ছুটিতে প্রায় জনশূণ্য শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমথা।

সেনা সদস্যদের সচেতনমুলক প্রচার প্রচারণা করতে দেখা গেছে। সেনাসদস্যদের প্রতিটি গাড়ীর সামনে লেখা ‘ঘরে থেকে করবো যুদ্ধ করোনা থেকে হব মুক্ত’ এই শ্লোগান নিয়ে বগুড়ার মাঠে মাঠে সেনা সদস্যরা সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলতে ও ঘরে ফেরাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পহেলা বৈশাখে বগুড়া শহরে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়ে থাকে। সেনাবাহিনীর কঠোরতায় সেই বৈশাখের প্রথম দিনও ছিল জনশুণ্য। বগুড়া শহরের শেরপুর রোড, কলোনী, বনানী, খান্দার সড়ক, স্টেশন রোড, হর্কাস মার্কেট, চকযাদু রোড, বড়গোলায়, কাঁটালতলা, চেলোপাড়া, নবাববাড়ি সড়ক, নিউ মার্কেট, থানা রোড, সাতমাথা, সপ্তপদী, গালাপট্টি, শহরের জলেশ^রীতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট, বিপনী বিতান ও বড়বড় শোরুমের পাশাপাশি প্রাইভেট কোম্পানীও বন্ধ ছিল।

সব মিলিয়ে বগুড়া শহর ছিল নিশ্চুপ। তবে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ওষুধের দোকান খোলা ছিল। পাশপাপাশি কিছু জরুরী মুদির দোকান খোলা থাকলেও ৫টার মধ্যে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। শহর থেকে দূর পাল্লার যানবাহন ছেড়ে যায়নি। সকল মেইল ট্রেন বন্ধ থাকায় বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনে কোন ভিড় দেখা যায়নি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে কার্যক্রমে সেনা সদস্যরা বগুড়া জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। শহরের সাতমাথাসহ বিভিন্ন এলাকায় গাড়ীতে করে টহলকালে দেখা গেছে হ্যান্ড মাইকে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূল প্রচারনা করছেন সেনা সদস্যরা। 

বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ (মিশন) করে, দুর্যোগের মোকাবেলা করে এবং বেশকিছু সংকট সময়ে দেশের জন্য কাজ করে সুনাম রয়েছে দেশের এই শ্রেষ্ঠ বাহিনীর। এবারই প্রথম অচেনা অজানা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সচেতন গড়ে লড়াই করে চলেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বগুড়ায় কর্মরত এক সেনাকর্মকর্তা জানিয়েছেন, করোনা মোকাবেলায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত সহ ঘরে থাকতে হবে। সামান্য প্রয়োজনে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন। অযথা রাস্তায় হাঁটছেন কিছু মানুষ। এদেরকে ঘরে ফেরাতে খুবই কষ্টকর হচ্ছে। কঠোর হওয়ার প্রয়োজন নেই। যদি সচেতন হয়। আর সচেতন হলেই করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের ভাল অবস্থান হবে। এতদিন যে ধরণের দুর্যোগে আমরা কাজ করেছি তা থেকে এবার পুরোটায় ডিফারেন্ট। আমরা চাই সকলে মিলে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সচেতন হয়ে জয়ী হবো। আমাদের সেনা সদস্যরা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য সবসময় কাজ করে যাবে। সেখানে সাধারণ মানুষকে অবশ্যই সহযোগিতা থাকতে হবে। 

এদিকে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সচেতন গড়ে তোলার পাশাপাশি করোনায় কর্মহীনদের পাশে দাঁড়িয়েছে সশস্ত্র বাহিনী। ১১ পদাতিক ডিভিশনের পক্ষ থেকে ১২ বেঙ্গল বগুড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সোমবার থেকে করোনায় কর্মহীনদের মধ্যে ত্রান বিতরণ করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার বিকালে বগুড়া পৌর এলাকার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বুজরুগ বাড়িয়ায় কর্মহীন মানুষের মধ্যে ত্রান বিতরণ করা হয়। ত্রাণ বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন ১২ বেঙ্গলের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল রায়হান। ত্রান সামগ্রীর মধ্যে ছিল ১০ কেজি চাল, ২ কেজি আটা, ২ কেজি চিনি, ১ লিটার তেল, ১ কেজি লবন, ৫ কেজি আলু, ১ কেজি পেঁয়াজ, ২ টি করে সাবান।সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অপ্রত্যাশিত ত্রান পেয়ে ইউনুস, চম্পা, কোহিনুরের মত অনেকে আবেগ ধরে রাখতে না পেরে কেঁদে ফেলেন। এমন অনেক মানুষের পাশে এখন সেনা সদস্যরা। 

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন