বগুড়ায় চলছে লকডাউন ভাঙ্গার প্রতিযোগিতা, ঝুঁকিতে পুরো শহর | Daily Chandni Bazar বগুড়ায় চলছে লকডাউন ভাঙ্গার প্রতিযোগিতা, ঝুঁকিতে পুরো শহর | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল, ২০২০ ০২:৫৭
বগুড়ায় চলছে লকডাউন ভাঙ্গার প্রতিযোগিতা, ঝুঁকিতে পুরো শহর
প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার আহব্বান সচেতন সমাজের
সঞ্জু রায়:

বগুড়ায় চলছে লকডাউন ভাঙ্গার 
প্রতিযোগিতা, ঝুঁকিতে পুরো শহর

করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ মোকবেলায় বগুড়াসহ দেশের অধিকাংশ জেলাকেই ইতিমধ্যে লকডাউন বা অবরুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে যদিও গত মাস থেকেই দেশব্যাপী চলছিল সাধারণ ছুটি বা অঘোষিত লকডাউন। সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষার্থে এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে যখন ঘোষণা করা হয়েছে পুরো জেলায় লকডাউন তখন প্রশাসনের সাথে কানামাছি খেলার মতো অসচেতনতার মাধ্যমে একশ্রেণীর মানুষ নেমেছে লকডাউন ভাঙ্গার প্রতিযোগিতায় যার দরুণ গুটিকয়েক মানুষের খামখেয়ালিপনায় ঝুঁকিতে পরে যাচ্ছে পুরো শহরের বাসিন্দা।

বগুড়া শহরের গত কয়েক দিনের সামগ্রিক চিত্র দেখলে মনে হয় কিসের করোনা আর কিসের লকডাউন? কি নেই শহরে? শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা ব্যতিত পুরো শহরেই লকডাউন নামে তামাশা তৈরি করেছে সাধারণ অসচেতন মানুষের কিছু গোষ্ঠী। পেটের ক্ষুধায় কোন ত্রাণ বা সাহায্য না পেয়ে কিছু দিনমজুর না হয় অপারগতায় রাস্তায় নেমেছে কিন্তু সামর্থ্যবান এবং ঘরে ঘরে সঞ্চয় রাখা মানুষেরা রাস্তায় কি করে? উত্তর জানতে কিছু মানুষকে প্রশ্ন করলে নানারকম মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় তাদের কাছ থেকে যেমন- ভাই সারাদিন ঘরে থাকলে এমনিতেই মারা যাবো তাই বাহিরে আসা আবার বিবাহিতদের অনেকে বলছে ভাই সারাক্ষণ ঘরে থাকার জ¦ালা আমরাই বুঝি তাইতো বাহিরে বের হইছি ইত্যাদি নানা অযুহাত দেখিয়ে চলছে চা চক্র আর খোশ গল্প যেন সরকার বিনোদনের ছুটি ঘোষণা করেছে।

দেশব্যাপী যখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়িয়েছে সাথে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে এখন ১৬৩ জন যার মাঝে বগুড়া জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানে ১৬ তারপরেও দিনের শুরুতে শহরে এখনো নিয়মিত সৃষ্টি হচ্ছে যানযটের। উত্তরবঙ্গের মাঝে বগুড়া যখন করোনার হটস্পট হয়ে আছে তখন বগুড়াতে সাতমাথা ব্যতিত প্রশাসনের সাথে কানামাছি খেলার মতো হরদম চলছে সিএনজি, অটো, ব্যটারি চালিত অটোরিক্সার মতো গণপরিবহনও যার চাক্ষুস প্রমাণ দেখা যায় শহরের চেলোপাড়া চন্দনবাইশা সড়কের মতো বিভিন্ন সড়কে। সাথে সাথেই কাঁঠালতলা, বড়গোলা, বকশিবাজার, সেউজগাড়ি, চেলোপাড়া, নারুলী চেকপোস্ট, বউবাজার, কলোনী সব জায়গাতেই কারণে অকারণে জনসাধারণের ভিড় দেখা যায় ভয়ংকর পরিস্থিতিতে।

আবার সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রশাসন এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দদের কঠোর পরিশ্রমে শহরের সার্কিট হাউস এর সামনে থেকে সাতমাথার আগ পর্যন্ত যে বাজার বসানো হলো সেখানেও নেই কোন সামাজিক দূরত্বের বালাই, অনেকের মুখেও নেই সামান্য সুরক্ষা মাস্কটুকুও। আমরা যখন সবকিছু বুঝেও অবুঝ তখন প্রশাসন আর কি বা করতে পারে? সারাশহরে যখন এই পরিস্থিতি তখন অভিনব এক পদ্ধতি চালু করে আড্ডার পশরা সাজিয়েছে বিভিন্ন এলাকার একদল মানুষ। পাড়া মহল্লার প্রধান ফটকে বাঁশের বেড়া দিয়ে বিভিন্ন দোকনের সামনে রাত পর্যন্ত চলছে দলবেধে জমজমাট আড্ডা।

শহরের নাটাইপাড়ার বাসিন্দা হারুন মিয়ার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে এই বাঁশের বেঁড়ার পন্থা প্রথমে সাধুবাদ জানালেও এখন তো দেখছি উল্টো চিত্র। পুলিশ যেন পাড়া মহল্লায় সব সময় সরাসরি না ঢুকতে পারে আর নিজেরা যেন শান্তিমতো আড্ডা দিতে পারে তাই এই প্রতিবন্ধকতা তাদের বেশ সুবিধা করে দিয়েছে বলে এখন মনে হয়। তাদের পুলিশের প্রতি ভয় থাকলেও ভয় নেই মৃত্যুঘাতী ভাইরাস কোভিড-১৯ কে। সার্বিক পরিস্থিতি দেখে পুরো শহরের এই লকডাউন না মানার প্রবণতা তে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে মনে করেন তিনি।

এখন সচেতন সমাজের অনেকে আক্ষেপ করে বলছে, ভেবেছিলাম মাঠে সেনাবাহিনী নামালে মানুষ আর ভয়েতে বের হবেনা কিন্তু তাদের নরম ও আন্তরিক ব্যবহারের সুযোগ নিয়েছে আমাদের সাধারণ মানুষেরা। লকডাউনের আগেই মনে হয় বগুড়ার পরিস্থিতি ভাল ছিল। তাইতো সময় থাকতেই প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার আহব্বান জানিয়েছেন শহরের স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই। বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম বদিউজ্জামান এর সাথে কথা বললে তিনি জানান যে, তারা দিন-রাত নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে।

একদিকে পুরো শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ অন্যদিকে মানুষকে ঘরমুখো করার কাজ সমানতালে করছে পুলিশ সদস্যরা। তারপরেও সাধারণ মানুষের অসচেতনতা এবং লকডাউন না মানার প্রবণতার কারণে দিনের অগ্রভাগে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। বগুড়ায় প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা নিশ্চিতের বিষয়ে জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে বর্তমানে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে তবে বগুড়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের সুরক্ষার স্বার্থে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের আরো কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনের কথা বলেন তিনি যার লক্ষ্যে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ।

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন