আত্রাইয়ে করোনায় কেমন আছে মৃৎশিল্পের কারিগররা | Daily Chandni Bazar আত্রাইয়ে করোনায় কেমন আছে মৃৎশিল্পের কারিগররা | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ৩ মে, ২০২০ ১২:০৫
আত্রাইয়ে করোনায় কেমন আছে মৃৎশিল্পের কারিগররা
আত্রাই প্রতিনিধি:

আত্রাইয়ে করোনায় কেমন আছে মৃৎশিল্পের কারিগররা

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ভালো নেই নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মৃৎশিল্পীরা। উপজেলার ভবানীপুর, রাইপুর, মিরাপুর, সাহেবগঞ্জ, বহলা, পাঁচুপুর নন্দনালীসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য কুটিরের নয়নাভিরাম মৃৎ শিল্পীদের বাসস্থান। যা সহজেই যে কারোর মনকে পুলকিত করে। আর এ মৃৎশিল্প’র ঐতিহ্য আঁকড়ে থাকা কারিগরদের টিকে থাকা যেন কঠিন হয়ে পড়েছে।

এক সময় এ গ্রামগুলিতে মৃৎশিল্প’র জৌলুস ছিল। এ শিল্পে জড়িয়ে ছিল এখানের অনেক পরিবার। কিছু কারিগর কষ্টে-শিষ্টে তাদের পূর্ব-পুরুষদের এ পেশা ধরে রেখেছেন। কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারনে সম্পুর্নরুপে বন্ধ হয়ে গেছে এ মাটির কাজ। তাই এই কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই হতাশা হয়ে পড়েছে।

এক সময় উপজেলার এসব গ্রামসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার পরিবারও প্রত্যক্ষভাবে এ শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। পালরা খোলা, হাড়ি, পাতিল, কলসি, ব্যাংক, পিঠা তৈরির ছাঁচ, পুতুলসহ ছোট-ছোট খেলনা ইত্যাদি সব জিনিসপত্র তৈরি করত। এখানকার তৈরি মৃৎশিল্পের অনেক সুনাম ও সুখ্যাতি থাকলেও এখন শুধুমাত্র দধির পাত্র ও পিঠার খোলা তৈরি করে কোন রকমের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এ অঞ্চলে খোলা পাত্রের কদর বেশী রয়েছে।

একটি খোলা তৈরিতে মাটি ও পোড়ানো বাবদ প্রায় ৫ টাকা খরচ হলেও তা বাজারে বিক্রি হয় ১০ টাকা। এর মধ্যেই রয়েছে শ্রম ও মাল বহনের খরচ। ফলে লাভের মুখ তারা দেখে না। অথচ ঐ একটি খোলা এক হাত ঘুরে বাজারে খুচরা ক্রেতা কিনছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। ফলে সহজেই অনুমেয় মূল মুনাফা চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্ব ভোগীদের হাতে। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় মৃৎশিল্পীরা এ পেশার প্রতি হতাশ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান প্রজন্ম এ ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে।

মৃৎশিল্পের নিপুণ কারিগরেরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে এখন অনেকটা অসহায় ও মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেক পুরুষ এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। মাটির তৈরি জিনিসপত্র আগের মত দামে বিক্রি করতে পারছে না। মাটির এ সকল পাত্রের চাহিদাও আগের মত নেই।

রাইপুর গ্রামের মৃৎশিল্পের কারিগর বিপ্লব কুমার পাল বলেন, ‘লাভ লসের হিসাব করি না। বাপ-দাদার কাজ ছাড়ি কি করি। করোনার আমাগো সকল কাজ বন্ধ হইয়া গেছে। আমরা এখন অসহায় জীবন যাপন করছি। তিনি আরো বলেন, ‘পূর্বপুরুষের পেশা বাঁচিয়ে রাখতে গিয়ে করোনায় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে আমাদের।

এ ব্যাপারে উপজেলার ভবানীপুর পালপাড়া গ্রামের মৃৎশিল্পী শ্রী ধিরেন্দ্রনাথ পাল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন মাটি সংগ্রহে অনেক খরচ করতে হয় তাদের। এ ছাড়াও জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে মিল না থাকায় প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হয় তাদের। তার মধ্যে আবার করোনার প্রভাব পড়েছে এখন কাজ কর্ম সব বন্ধ আমরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছি।

এক কালের ঐতিহ্যের মাটির তৈরি বাসন, হাড়ি, পাতিল, কলসি, ব্যাংক, পিঠা তৈরির ছাঁচ, পুতুল এখন প¬্যাস্টিকের দখলে। ফলে উপজেলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের জৌলুস আর নেই। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। ঐতিহ্যের কারণেই মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখা দরকার বলে মনে করেন উপজেলার সচেতন মহল।

দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন