দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট ২৯৮ জন মারা গেলেন। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও এক হাজার ২০২ জন। যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৬৫ জনে।শুক্রবার (১৫ মে) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (মহাপরিচালকের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি ঢাকার ও ঢাকার বাইরের ৪১টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস শনাক্তে আরও নয় হাজার ৫৩৯টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় আট হাজার ৫৮২টি নমুনা। এটি একদিনে সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষার রেকর্ড। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো এক লাখ ৬০ হাজার ৫১২টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও এক হাজার ২০২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজার ৬৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ১৫ জন। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৯৮-এ। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ২৭৯ জন। আগের ২৪ ঘণ্টায়ও সুস্থ রোগী ছিলেন, যা গতকালের (১৪ মে) বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়নি। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিন হাজার ৮৮২ জন।
নতুন করে যারা মারা গেছেন তাদের সাতজন পুরুষ ও আটজন নারী। বয়সের দিক থেকে একজন অনূর্ধ্ব ৩০ বছরের, একজন ত্রিশোর্ধ্ব, আটজন পঞ্চাশোর্ধ্ব, তিনজন ষাটোর্ধ্ব এবং দুজন ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সী। গত বৃহস্পতিবারের (১৪ মে) বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সাত হাজার ৩৯২টি নমুনা আরও এক হাজার ৪১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ও শনাক্ত রোগী- উভয়ই বেড়েছে। এমনকি শনাক্তের দিক থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় হয়েছে সর্বোচ্চ রেকর্ডই হয়েছে। এর আগে একদিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয় এক হাজার ১৬২ জন, যা জানানো হয় গত ১৩ মের বুলেটিনে। আর সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ১৯ জনের, ওই তথ্যও জানানো হয় সেদিন।
শুক্রবারের বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ২৫৯জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন দুই হাজার ৭৪৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৮১ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন এক হাজার ৪৭৯ জন।সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা আছে আট হাজার ৯৩৪টি। আইসিইউ শয্যা আছে ৩২৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট আছে ১০২টি। আইসিইউ শয্যা ও ডায়ালাইসিস ইউনিট বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই হাজার ৭৯৭ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই লাখ ৩৩ হাজার ৪৭০ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ছয় জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন এক লাখ ৮৬ হাজার ৬৬৫ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৪৬ হাজার ৮০৫ জন।
দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬১৭টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ১৬৫ জনকে। ডা. নাসিমা করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানান বুলেটিনে।
গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত হলেও এখন করোনাভাইরাসের কবলে গোটা বিশ্বই। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত সোয়া ৪৫ লাখ। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে তিন লাখ। তবে ১৭ লাখের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন