![logo](https://dailychandnibazar.com.bd/assets/importent_images/logo.png)
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে উত্তরের সীমান্ত জেলা জয়পুরহাটের চামড়ার আড়তগুলোতে নেই কোনও প্রস্তুতি। ঈদকে ঘিরে জয়পুরহাটের আড়তগুলো থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার পশুর চামড়া ঢাকায় সরবরাহ করা হয়।করোনার পাশাপাশি বর্তমান বাজার ধ্বসে এমনিতেই লোকসান,তার ওপর ট্যানারী মালিকদের মোটা অঙ্কের বাঁকি দিয়ে নি:স্ব হয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। প্রায় ৮ কোটি টাকা পাওনা থাকায় চামড়া ব্যবসায় ধ্বসের আশংকা করছেন তারা। এ অবস্থায় চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ চেয়েছেন চামড়া মালিক সমিতি।
চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্যানারি মালিকেরা গত কয়েক বছরের পাওনা টাকা এখনও পরিশোধ করতে পারেনি ফলে নতুন চামড়া কিনতে পুঁজি সংকটে পড়েছেন তারা।সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাঁচবিবি উপজেলার রেলগেট, আক্কেলপুর উপজেলার হাজিপাড়া, জয়পুরহাট শহরের আরাফাত নগর, আমতলী এলাকায় চামড়ার আড়তগুলোতে প্রতি বছরের মতো এবার নেই কোনও প্রস্তুতি।
এদিকে ঢাকার বাহিরে ট্যানার্স এসোসিয়েশন গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ২৮ থেকে ৩২ টাকা এবং ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা হিসাবে নির্ধারণ করে দিয়েছে ।প্রতি বছর ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে চামড়া কেনায় বিপাকে পড়েছে মূল ব্যবসায়ীরা। সীমান্ত জেলা হওয়ায় চামড়া পাচারের আশংকাও থাকে এখানে। সেই সঙ্গে চামড়ার প্রধান কাঁচামাল লবণের দাম এবং শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। এছাড়া ট্যানারি মালিকদের কাছে কোটি কোটি টাকা বকেয়া থাকায় চরম পুঁজি সংকটে রয়েছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।
জয়পুরহাটের চামড়া ব্যবসায়ী শাহিন আকতার জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তারা আড়তগুলো প্রতি বছরের মতো এবার ধোঁয়া মোছায় তৎপরতা নেই তেমন একটা । গতবারের চামড়ার টাকা এখনো ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা রয়েছে। চামড়ার বাজারে মন্দাভাব বিরাজ করায় কয়েক বছর ধরে তারা লাভের মুখ দেখতে পারেনি।তিনি আরও বলেন, একদিকে লোকসান অন্যদিকে বকেয়া এভাবে তাদের মূলধন শেষ, ব্যাংক লোন পরিশোধ করতে না পারায় নতুন করে লোন দিচ্ছে না, ফলে আসন্ন ঈদে নতুন করে চামড়া কেনা মুশকিল হয়ে পড়বে। তিনি জানান, ট্যানারি মালিকেরা সবসময় সিন্ডিকেট দিয়ে চামড়া কিনে এবং দাম পরিশোধের বেলাতেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অল্প করে টাকা দেয় যা দিয়ে তারা ব্যবসা চালাতে পারে না।
চামড়া ব্যবসায়ী পাঁচবিবি উপজেলার অহেদুল হোসেন ছোটন বলেন, করোনার মধ্যেও চামড়া পাচাররোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে চামড়া শিল্প লাভের মুখ দেখবে।কোরবানির আগেই পুঁজি সরবরাহ করে চামড়া শিল্পকে সচল রাখবে ট্যানারি মালিকেরা এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে জয়পুরহাট জেলা চামড়া ব্যাবসায়ী গ্রুপের সভাপতি শামিম আহমেদ জানান, দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি চামড়া শিল্পের প্রসারে কাঁচামাল লবণের দাম স্থিতিশীল রাখাসহ চামড়া পাচার রোধ ও বকেয়া টাকা পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এ শিল্প টিকে থাকবে।
এদিকে জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস হাসান টিটো জানান, জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনে সীমান্ত এলাকা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪১ কিলোমিটার। এরমধ্যে ২২ কিলোমিটার এলাকা তারকাটায় ঘেরা, বাকি ১৮ কিলোমিটার সীমান্তে তাঁরকাটা নেই। চোরাকারবারিরা মূলত এই জায়গাটিকেই তাদের পাচারের পথ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তাই এই জায়গাগুলো সবসময় নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। চামড়া পাচার রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা।জয়পুরহাটের ব্যবসায়ীদের দাবি বিগত বছরের বকেয়া টাকা পরিশোধে ট্যানারি মালিকদের উদ্যোগ ও সেই সঙ্গে ব্যাংকগুলোও যেন সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে এ বিষয়ে সরকারকে সুদৃষ্টি দেয়ার বিশেষ আহ্বন জানান তারা।
দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন