অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশিত পথে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে খুব শিগগিরই অনুন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে পা রাখব। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে এই ঐতিহাসিক অর্জনটি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ শহীদদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করতে চাই।
বুধবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে ২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিক বার্ষিক অগ্রগতি প্রতিবেদন তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী একথা বলেন।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অপ্রত্যাশিত অভিঘাত ও করোনার ভয়াবহ বিপর্যয় হতে ঘুড়ে দাঁড়ানো যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গোটা বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত ঠিক সেই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিচক্ষণ দূরদৃষ্টিতে এই সংকটময় পরিস্থিতির ভয়াবহতা শুরুতেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে নির্দেশনা দিলেন। এ পর্যন্ত ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন যার আর্থিক মূল্য ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। যা আমাদের জিডিপির ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ। সবাইকে স্বীকার করতে হবে যে বাংলাদেশের মতো একটি দেশে এটি বিরল এবং সাহসী পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারি হতে সরকার কর্তৃক সময়পযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ ঘুড়ে দাঁড়াচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবাস আয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মুদ্রা সরবরাহ মুদ্রাস্ফীতিসহ অন্যান্য মৌলিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক চলক সমূহের অবস্থান বেশ সন্তোষজনক।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, টাকা ও ডলার বিনিময় দীর্ঘদিন যাবত স্থিতিশীল রয়েছে। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ও ব্যালেন্স অব রেমিটেন্স অ্যাকাউন্ট আমাদের ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। কোভিড-১৯ পূর্ব এক দশকে জিডিপি ক্রমাগত হারে বেড়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের রেকর্ড পরিমাণ ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। যা ছিল এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। কোভিড-১৯ মহামারি জনিত বৈশ্বিক বিপর্যয়ের কারণে বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা কিছুটা শ্লথ হয়েছে তারপরেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। যেখানে চীন এবং ভিয়েতনাম ছাড়া এশিয়ার উল্লেখযোগ্যে কোন দেশ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ছিল না। তাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক।
তিনি বলেন, আমাদের মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার। আমরা উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখাকে অগ্রাধিকার প্রদান করে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছি। ৭ম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন শেষে আমরা অষ্টম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনা ২০২১-২০২৫ দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ এবং বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্য হলো ২০৪১। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখী সমৃদ্ধ উন্নত দেশের কাতারে সামিল হওয়া।
চলতি অর্থবছরের বাজটের প্রথম প্রান্তিক নিয়ে তিনি বলেন, এনবিআর কর রাজস্ব আয় আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ১১ শতাংশ। মোট সরকারি ব্যয় ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ, দশমিক ৫৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মোট বরাদ্দের ৮ দশমিক ২ শতাংশে। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। সরকার কর্তৃক ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা প্রদান ও রেমিটেন্স প্রেরণ প্রক্রিংয়ায় সহজিকরণের কারণে প্রবাস আয় বিপুলভাবে বেড়েছে। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধির এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে। রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা বর্তমানে ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি সেপ্টম্বরে ২০২০ হয়েছে ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ।