গ্লোব বায়োটেকের আবিষ্কৃত করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন ‘বঙ্গভ্যাক্স’-এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদে (বিএমআরসি) আটকে আছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর গ্লোব বায়োটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্যাকসিন আবিষ্কারক দলের প্রধান কাকন নাগ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান।
এ সময় ভ্যাকসিন আবিষ্কারক দলের আরেক বিজ্ঞানী নাজনীন সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গভ্যাক্সের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে কাকন নাগ বলেন, ‘আজকে প্রায় তিন সপ্তাহ হতে চলল আমরা বিএমআরসিতে জমা দিয়েছি এথিক্যাল ক্লিয়ারেন্সের জন্য। এর আগে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক যে উচ্চ পর্যায়ের টিম গঠন করেছিলেন সাইন্টিফিক রিভিউ কমিটি, উনারা একাধিকবার আমাদের ডাটা অ্যানালাইসিস করেছেন, অডিট করে উনারা সবকিছু সন্তোষজনক পাওয়া সাপেক্ষে আমাদেরকে জিএমপি (গুড ম্যানুফ্যাকচারিং পলিসি) লাইসেন্স দিয়েছেন এই ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য, উৎপাদন করার জন্য। তার মানে হচ্ছে টেকনোলজিক্যালি ও সাইন্টিফিক্যালি এটা কার্যকরী এবং নিরাপদ এইটুকু প্রমাণ আমরা পেয়েছি, সেই স্বীকৃতি পেয়ে গেছি সরকারের কাছ থেকে।’
তিনি বলেন, ‘এখন যেটুকু দরকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের শুরু হবে তার জন্য ভলান্টিয়ার আছেন, এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে ভলান্টিয়ারদের ম্যানেজমেন্ট কী রকম হবে, এজন্য একটি পারমিশন দরকার বিএমআরসির এথিক্যাল রিভিউ কমিটির কাছ থেকে।’
ভ্যাকসিনের আবিষ্কারক দলের প্রধান এই বিজ্ঞানী বলেন, ‘এটি মডার্নার ক্ষেত্রে মাত্র চারদিন লেগেছিল, আমাদের এখানে কিন্তু তিন সপ্তাহ হতে চলল। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো রেসপন্স জানি না কখন আপডেট বা অনুমোদন পাবো। এটা পাওয়ার পরপরই আমরা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করতে পারবো।’
সবকিছু যদি আপনাদের ঠিকঠাক থেকে থাকে, তাহলে সময় লাগছে কেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি যাদের কাছে আটকে আছে তাদের কাছে জিজ্ঞেস করবেন, আমাদের কাছে তো না।’
আপনাদের তারা কি বলছেন- জানতে চাইলে কাকন নাগ বলেন, ‘আমাদের কাছে কিছুই জানাচ্ছে না। আমাদের এখান থেকে তো আটকে নেই। আপনারা ওখানেই যাওয়ার কথা। এখানে অনেক সাংবাদিক আছেন, যারা ওই সময়, ওই দিনটার কথা মনে করতে পারেন। আমরা জমা দেয়ার সময়ই কিন্তু অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিনটি সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি, এতে কোনো এক্সটার্নাল ডিপেনডেন্সি... আমাদের ওষুধ ব্যবস্থায় যেটি থাকে। এখন আমরা শুধু কপি ড্রাগ তৈরি করি। এটা আমাদের জন্য গৌরবের বিষয় যে এই প্রথম আমরা মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে মৌলিক ডিজাইনের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছি, এটি কোনো কপি ড্রাগ নয়। এটি পুরো দেশবাসীর গর্বের ব্যাপার।’
কাকন নাগ আরও বলেন, ‘এই ভ্যাকসিনের দুটো বৈশিষ্ট্যের কথা আমরা বলব, এটি খুব সম্ভবত সিঙ্গেল ডোজ ভ্যাকসিন হতে যাচ্ছে। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ ভ্যাকসিন হবে। এটা আমরা বলছি ডাটা সাপেক্ষে। আমরা যে ট্রায়ালগুলো করেছি সেটার সাপেক্ষেই এই কথাগুলো বলছি। আমরা আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই মুজিববর্ষেই এটি দেশবাসীর কাছে নিয়ে যেতে পারব।’
অপর বিজ্ঞানী নাজনীন সুলতানা বলেন, ‘গতকাল ভারতের বায়োকোন থেকে একজন সিনিয়র ডিরেক্টর আমাদের ফোন করেছেন যে, আমরা বঙ্গভ্যাক্স নিতে চাই। আমরা পাবলিকেশনের জন্য জমা দিয়েছি, সেগুলো ওনারা দেখেছেন, পড়েছেন। বলেছেন, তোমরা এত সূক্ষ্মভাবে ডাটা কাজ করিয়েছো, আমরা বিশ্বাস করতে বাধ্য। বঙ্গভ্যাক্স পৃথিবীতে সুপরিচিতি পাবে। বাংলাদেশ যে এত এগিয়ে গিয়েছে, নিকটবর্তী দেশ হিসেবে আমার গর্ব বোধ করি।’
এ সময় তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রথমেই আমি কাকন নাগ ও নাজনীন সুলতানাকে অসংখ্য অভিনন্দন জানাই। তারা একটি মৌলিক গবেষণা করে বঙ্গভ্যাক্স নামে একটি করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছেন। যেটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) লিস্টেড করেছেন যা বাংলাদেশ মেডিকেল কাউন্সিলের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। উপমহাদেশে আমরা দ্বিতীয় দেশ হিসেবে এই করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছি। পৃথিবীতে খুব বেশি দেশ এই ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারেনি। মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি দেশ এই ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে, এর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এজন্য আমি খুব গর্বিত অনুভব করছি। কাকন নাগ ও নাজনিন সুলতানার এই সাফল্যে আমিসহ সারা বাংলাদেশ গর্বিত।’