গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় ফিরোজা নামে এক নারী ৩১ জানুয়ারি তার মা, বোন, ভগ্নিপতি, মামা ও মামাতো ভাইসহ পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন।
মামলায় অভিযোগে বলা হয়, তার স্বামী তোফাজ্জল হোসেনকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে দা দিয়ে কুপিয়ে বাম পায়ের রগ কেটে ফেলা হয়। রড দিয়ে পিটিয়ে কোমড়ের বাম পাশের হাড় ভেঙে ফেলা হয়। এরপর শ্বাসরোধে হত্যারও চেষ্টা চালায় আসামিরা। এতে গলার নিচে গুরুতর জখম হয় বলেও অভিযোগ করা হয়।
তোফাজ্জলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে নেয়া হয় বলে বাদী তার অভিযোগে জানান।
অথচ ওই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (ইউপি) জয়নাল আবেদীন পিওরসহ অনেকেই জানিয়েছেন, থানায় মামলা হওয়ার পর তোফাজ্জল হোসেনকে তারা সুস্থ অবস্থায় ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন। তোফাজ্জল হোসেনের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন দেখেননি কেউ।
গ্রামবাসীদের মাধ্যমে পিলে চমকানো এমন সাজানো ঘটনা জেনে তোফাজ্জল হোসেনকে দেখতে চান ইউপি চেয়ারম্যান। এসময় গা ঢাকা দেন তোফাজ্জল।
সাজানো ঘটনায় মামলা প্রসঙ্গে গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে। ঘটনা সাজানো হলে বাদীসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
ফিরোজার মা আমেনা খাতুন জানান, এক ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে ফিরোজা ছোট। তার (আমেনা) স্বামী মারা গেছেন প্রায় ১৭ বছর আগে। কষ্টেসৃষ্টে দুই দফায় বড় মেয়ে ফজিলাকে (৩৫) প্রথমে কাতার ও পরে সৌদি আরব পাঠান। সেখান থেকে উপার্জিত প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা ফজিলা তার ছোট বোনের ব্যাংক হিসাবে পাঠান। দেশে ফেরার পর টাকা দিতে টালবাহানা করে বোন। পরে ঘটনাটি ফজিলা ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় মাতব্বরদের জানায়।
ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (ইউপি) জয়নাল আবেদীন পিওর বলেন, মাতব্বরসহ স্থানীয়রা বসলে সেখানে ছয় লাখ টাকার মধ্যে চার লাখ টাকা দেবেন বলে ফিরোজা তাদের জানিয়েছিলেন। এর মধ্যে নগদ দেড় লাখ টাকা দিয়েও দেন। বাকি দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধের জন্য দেড় মাস সময় নিয়েছিলেন। ১ ফেব্রুয়ারি ওই টাকা দেয়ার কথা ছিল। এর একদিন আগেই সাজানো ঘটনায় মামলা করে ফিরোজা।
জয়নাল আবেদীন পিওর জানান, ফজিলা খুবই দরিদ্র। তার স্বামী অটোরিকশাচালক। মামলার হওয়ার পর ফজিলা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
তেলিহাটী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল বাতেন সরকার বলেন, ‘গ্রামবাসীদের মাধ্যমে ঘটনাটি জেনেছি। আড়াই লাখ টাকা আত্মসাতের জন্য নিজের মা, বোন, ভগ্নিপতি, মামা ও মামাত ভাইসহ পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন ফিরোজা। এর পুরো ঘটনাই সাজানো’।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আসমা-উল হোসনা জানান, মামলার অভিযোগে হামলার ঘটনা ২৮ জানুয়ারির। কিন্তু গত ২৮ কিংবা ২৯ জানুয়ারি তোফাজ্জল নামে কেউ এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়নি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ভিকটিম সুস্থ অবস্থায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তা এখন শুনলাম। আমি এখনো মামলার তদন্ত শুরু করিনি’।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে’।
দৈনিক চাঁদনী বাজার/সাজ্জাদ হোসাইন