![logo](https://dailychandnibazar.com.bd/assets/importent_images/logo.png)
রাষ্ট্রীয়ভাবে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি ও ভোটাধিকারের সুযোগ পেয়ে হিজড়ারাও রাজনীতির মাঠ কাঁপাতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এই জনগোষ্ঠীর কয়েকজন। জয়ীও হয়েছেন কেউ কেউ।
পিছিয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই যখন ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে দিনাতিপাত করছেন ঠিক তখিই ভোটের মাঠ কাঁপাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মারুফা আক্তার মিতু ও রতন মিয়া। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন এ দুজন। ভোটারদের দোয়া ও সমর্থন কামনা করে ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় পোস্টারও ঝুলিয়েছেন তারা।
এদের মধ্যে মারুফা আক্তার মিতু মিঠাপুকুর উপজেলার ১৪নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য এবং রতন মিয়া ওই উপজেলার ১৩নং শাল্টিগোপালপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
জন্মের পাঁচ বছরের মাথায় মারা যান মিতুর মা। ১২ বছর বয়সে হারান বাবাকেও। এমনিতেই তৃতীয় লিঙ্গ হয়ে জন্ম তারওপর অনাথ হয়ে পড়া মিতুর শেষ পর্যন্ত ঠাঁই মেলে হিজড়া পল্লীতেই। বাবার মৃত্যুর পরপরই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আশ্রয় নেন মিঠাপুকুরের গড়ের মাথা আদর্শপাড়ায়। প্রায় ২০ বছর ধরে অন্য হিজড়াদের সঙ্গে সেখানেই বসবাস করছেন তিনি। ওই পাড়ায় তার মতো আরও ৩৮ জন হিজড়া বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। যাদের সকলেই ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে দিন পাড়ি দিচ্ছেন।
অষ্টম শ্রেণিতে পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে একটা সময় মিতুও ভিক্তাবৃত্তি করতেন। এখন ওই উপজেলার দলনেতা হয়ে অন্যদের পরিচালনা করছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন জনক্যল্যাণমূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করে ভোটারদের অকুণ্ঠ সমর্থনে নির্বাচনে জয়ের স্বপ্ন দেখেছেন। এজন্য পোস্টার সাঁটানো, গণসংযোগ আর ঘরোয়া আড্ডায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন মিতু।
মিতু বলেন, হিজড়ারা সমাজের অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। অন্যের দ্বারে হাত পাততে আমাদেরও ভালো লাগে না। আমরাও এগিয়ে যেতে চাই। হিজড়া জনগোষ্ঠিসহ সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করার লক্ষ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, জনগণের সমর্থনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ আমার কোনো পিছুটান নেই, সংসার নেই। সার্বক্ষণিক মানুষের বিপদে-আপদে ছুটে যাই। তাদের পাশে থেকে সহায়তার যথাসাধ্য চেষ্টা করি। আশা করছি, ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।
ওই এলাকার ভোটার গৃহিণী নাজনীন সুলতানা বলেন, মারুফা আক্তার মিতুকে ভালো করে চিনি ও জানি। তিনি নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমরা তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে চাই।
শিক্ষার্থী মহিতুর বলেন, মারুফা আক্তার মিতু ব্যক্তিগতভাবে একজন সজ্জন ও পরোপকারী মানুষ। এলাকায় তার বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
মিতুর মতো সমাজ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করার ব্রত নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন রতন মিয়া।
স্নাতক সম্পন্ন করা রতন আর দশজনের মতো ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে না পড়ে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ইতোমধ্যে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেছেন। মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ী বাজারে তার দোকান। পাশাপাশি নিজ এলাকা শাল্টিগোপালপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
রতন বলেন, স্থানীয় ভোটারদের একান্ত ইচ্ছায় নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছি। আমাদের তৃতৃীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি ও ভোটাধিকার প্রয়োগসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণের যে সুযোগ করে দিয়েছেন এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরাও চাই বিভিন্ন পরিষদে, সংসদে গিয়ে অবহেলিত মানুষের হয়ে কথা বলতে।
রংপুরের তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠির দলনেতা আনোয়ারুল ইসলাম রানা বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। তাদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠছে এ গোষ্ঠীর মানুষজন। অনেকের মতো মিতু ও রতনও এই অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হলে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠী আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার বলেন, তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে তাদের স্বীকৃতি ও ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তাদেরও মানুষের সেবা করার অধিকার রয়েছে। তারা যদি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন তাহলে নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো দিক। সমাজের কেউ পিছিয়ে থাকবে না, এটাই প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছার উদাহরণ।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন