সাতছড়িতে দেখা মিলল বিপন্ন কালো মথুরার | Daily Chandni Bazar সাতছড়িতে দেখা মিলল বিপন্ন কালো মথুরার | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১৫ মার্চ, ২০২১ ১১:৩৪
সাতছড়িতে দেখা মিলল বিপন্ন কালো মথুরার
অনলাইন ডেস্ক

সাতছড়িতে দেখা মিলল বিপন্ন কালো মথুরার

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে দেখা মিলেছে বিপন্ন প্রজাতির কালো মথুরা বা Kalij Pheasant-এর। চলতি সপ্তাহে সাতছড়ি বনে ছবি তুলতে গিয়ে বিপন্ন এ মথুরার দেখা পান সৌখিন ফটোগ্রাফার হারিস দেববর্মা। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, রেমা কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ও মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বনে মাঝেমধ্যে মথুরা দেখতে পাওয়া যায়।

কালো মথুরার বৈজ্ঞানিক নাম Lophura leucomelanos. ইংরেজি নাম Black Francolin. কালা মথুরা, কালো ময়ূর বা শুধুই মথুরা Phasianidae (ফ্যাসিয়ানিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Lophura (লোফুরা) প্রজাতির পাখি। কালো মথুরা কালচে ভূচর পাখি।

আইইউসিএনের তালিকায় পৃথিবীর বিপন্ন পাখির মধ্যে এটি অন্যতম। মথুরার ৯টি প্রজাতির মধ্যে এটি Lathami (J.E. Graz, 1829) পূর্ব ভুটান, বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারত হয়ে মিয়ানমার এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত প্রজাতি। কালো মথুরার মূল আবাস বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন এবং থাইল্যান্ডের বিভিন্ন বনভূমি। তবে এখন তারা বিপন্ন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী পাখি বিশেষজ্ঞ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘কালো মথুরার দৈর্ঘ্য কমবেশি ৬২ সেন্টিমিটার। ডানা ২২ সেন্টিমিটার। ঠোঁট সাড়ে ৩ সেন্টিমিটার, পা সাড়ে ৭ সেন্টিমিটার এবং লেজ ২৩ সেন্টিমিটার। ওজন গড়ে ১ কেজি ৩০০ গ্রাম। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। পুরুষ মথুরার পিঠ উজ্জ্বল নীল ও কালোয় মেশানো। কোমর ও পেছনের পালকের প্রান্ত সাদা। মাথার চূড়ার পালক খাড়া ও পেছনমুখী। মুখ পালকহীন, মুখের চামড়া ও গলায় ঝুলন্ত লতিকা উজ্জ্বল লাল। দেহতলে পুরো কালো রঙের ওপর ইস্পাত-নীল ও বেগুনী চাকচিক্য। স্ত্রী মথুরার দেহে অনুজ্জ্বল বাদামি পালকের ধূসর প্রান্ত আঁশের মতো দেখায়। মাথার চূড়া ও লেজের পালক প্রায় বাদামি। গলা পীতাভ-বাদামি। কোমর ও পায়ের পালকের প্রান্তদেশ ফিকে। চোখের আশপাশের অল্প একটু অংশ পালকহীন ও উজ্জ্বল লাল। স্ত্রী ও পুরুষ মথুরার উভয়ের চোখ পিঙ্গল থেকে কমলা-বাদামি। উভয়ের লেজ মোরগের লেজের মতো। ঠোঁট সবুজাভ। শিঙ বর্ণের ঠোঁটের গোঁড়া কালচে ও আগা ফিকে। পা ও পায়ের পাতা বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি দেখতে প্রায় স্ত্রী মথুরার মতো, তবে পিঠে কালচে-বাদামি ও পীতাভ ডোরা দেখা যায়।’

চিত্রগ্রাহক হারিস দেববর্মা জানান, গত সপ্তাহে তিনি সাতছড়ি বনে এ মথুরা দেখতে পান এবং সঙ্গে সঙ্গে ছবি তুলতে সক্ষম হন। কালো মথুরা বনের প্রান্তে ও বন সংলগ্ন খোলা জায়গায় বিচরণ করে। সাতছড়িতে ৭ থেকে ৮ জোড়া মথুরা তারা দেখতে পেয়েছেন। মথুরা সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় বা পারিবারিক ছোট দলে থাকে। মাটিতে ঘুরে ঘুরে খাবার খুঁজে বেড়ায়। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে বাঁশের বীজ, ডুমুর, বটফল, পিঁপড়া, উইপোকা, ছোট সাপ ও গিরগিটি। যা সাতছড়িতে বিপুল পরিমাণে পাওয়া যায়। ভোরে ও গোধূলিতে এরা বেশি সক্রিয় থাকে। দিনের বেলা গাছের নিচু ডালে বিশ্রাম নেয়। সকাল ও সন্ধ্যায় নিচু স্বরে মুরগির মতো ডাকে। এরা খুব লাজুক পাখি। মানুষের আনাগোনা টের পেলে দ্রুত লুকিয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, ‘সাধারণত মার্চ থেকে অক্টোবর এদের প্রধান প্রজনন ঋতু। এ সময় পুরুষ কালো মথুরার ডাকাডাকি বেড়ে যায়। স্ত্রী মথুরা ঘন ঝোপের নিচে নখ দিয়ে মাটি আঁচড়ে পাথর, লতাপাতা বা ঘাসের গোছা দিয়ে বাসা বানায়। বাসা বানানো শেষে ৬ থেকে ৯টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ফিকে পীতাভ বা পীতাভ সাদা থেকে লালচে পীত বর্ণের হয়। ডিমের মাপ ৪ দশমিক ৯ ও ৩ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার। স্ত্রী মথুরা একাই ডিমে তা দেয়। ২০-২১ দিনে ডিম ফোটে।’

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন