ভয়ভীতির কারণে কখনোই হেরে যাব না : নুর | Daily Chandni Bazar ভয়ভীতির কারণে কখনোই হেরে যাব না : নুর | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ৩ মে, ২০২১ ১৬:৪৩
ভয়ভীতির কারণে কখনোই হেরে যাব না : নুর
অনলাইন ডেস্ক

ভয়ভীতির কারণে কখনোই হেরে যাব না : নুর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর বলেছেন, ‘সরকার আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে ম্যাসেজ দেয়, তোমরা যারা বাইরে আছো বেশি বাড়লে তোমাদের পরিণতিও এই হবে। এই আতঙ্কে কি আমরা থেমে যাব? এই ভয়ভীতির কারণে কি আমরা হেরে যাব? কখনোই না।’

সোমবার (৩ মে) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে গ্রেফতার ছাত্র-জনতার নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ভুক্তভোগী পরিবার ও নাগরিক সমাজের অবস্থান কর্মসূচিতে এক বক্তব্যে এস কথা বলেন তিনি। অবস্থান কর্মসূচিতে গ্রেফতারদের বাবা, মা, ভাই ও স্ত্রীসহ প্রায় অর্ধশত মানুষ অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে নুর বলেন, ‘আপনার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য আন্দোলন করে বহিষ্কার হয়েছিলেন। কাজেই আপনারই সবচেয়ে ভালো বোঝা উচিত ছিল, ছাত্ররা কখনো অযৌক্তিক, অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে কথা বলে না, আন্দোলন করে না। আমরা জাতীয় স্বার্থে কথা বলেছিলাম। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য একজন সাম্প্রদায়িক ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলাম। আমি আপনাকে আপনার বাবার কথা মনে করিয়ে বলতে চাই, আপনি যদি আপনার বাবার প্রকৃত আদর্শ ধারণ করেন তাহলে ছাত্রনেতাদের অতিদ্রুত মুক্তি দেবেন।’

গ্রেফতার নেতাকর্মীদের অবস্থা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘আমরা আজকে এখানে দাঁড়িয়েছি, আমাদের ছাত্রনেতারা কেউ চাঁদাবাজি করেছে? কেউ টেন্ডারবাজি করেছে? কেউ হত্যা মামলার আসামি? গরুর মত বেঁধে তাদের আদালতে হাজির করা হয়েছে। আবার কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে যাদের নামে কোনো মামলাও ছিল না। রিমান্ড শেষে আদালতে তোলা হলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায়। আবার দু-তিন মামলায় জড়িয়ে দেয়া হয়। রিমান্ডে নেয়া হয় যাতে তারা জামিন আবেদন না করতে পারে বা জামিন নিতে বিলম্ব হয়। এটার মাধ্যমে আমাদেরকে ভয়ভীতি দেখানো হয়।’

নুর তাদের সংগঠনের অবস্থান নিয়ে বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ওইভাবে তেমন কোনো রাজনৈতিক দল না। গোনায় ধরার মত লাখ লাখ নেতাকর্মীদের সংগঠনও না। সেই কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ছাত্রদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে, কখনো রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন নিপীড়নমূলক কাজকর্মের বিরুদ্ধে রাজপথে দাঁড়িয়েছি, কথা বলেছি, প্রতিবাদ করেছি। আমরা যেহেতু একটা আন্দোলন করি তাই রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিষয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি।’

তিনি বলেন, ‘এই স্বৈরাচার সরকার, এই ফ্যাসিবাদী সরকার সমস্ত স্টেট মেশিনারিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে তাদের দলদাস ব্যক্তিদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের মত গুটিকয়েক ছাত্ররা আন্দোলন করে তাদের হটাতে পারবো না। আমরা প্রতিবাদ করেছি কিছু কিছু বিষয়ে। মোদি বিরোধী আন্দোলনে সবাই বাংলাদেশের এই পরিস্থিতিতে তার আগমনের বিরোধিতা করেছিল। সরকার আনবে। আমরা তো গান, তলোয়ার, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এয়ারপোর্টে যাইনি মোদির আগমন ঠেকাতে। মোদির আগমনের দিনও তো আমরা রাজপথে নামি নাই। আমরা আগের দিন একটা প্রতিবাদ করেছিলাম। সেখানে আপনারা দেখেছেন মতিঝিলে পুলিশ আমাদের ওপর কীভাবে হামলা চালিয়ে কর্মসূচিকে পণ্ড করে দিয়েছে।’

নুরুল হক নুর বলেন, ‘গতকাল পুলিশের সাত কর্মকর্তাকে বড় পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একজন সমালোচিত-আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা এসপি হারুন সাহেব। আগে নারায়ণগঞ্জ ছিলেন, গাজীপুর ছিলেন এখন তেজগাঁও অঞ্চলের দায়িত্বে আছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল চাঁদাবাজির, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল একজন শিল্পপতির পরিবারকে তুলে নিয়ে যাওয়ার। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নারায়ণগঞ্জের একটি প্রোগ্রামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিব্রত হয়েছিলেন, অস্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন যে, হারুন সাহেব এখানে কেন? কিন্তু তাকে পুরষ্কৃত করা হয়েছে৷’

তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের বেশ কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে প্রমোশন দিয়েছিল। তাদের প্রমোশনের ক্যাটাগরিতে বিবেচনা করা হয়েছিল যারা নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে দমন-পীড়নে ভূমিকা রেখেছে। ছাত্রনেতা রাশেদকে গ্রেফতারে এক পুলিশ কর্মকর্তার দুর্দান্ত ভূমিকা ছিল। তাকে পদায়ন করা হয়েছে। ঠিক একইভাবে মোদি বিরোধী আন্দোলনের পর গতকালকে আবার পুলিশের কর্মকর্তাদের প্রমোশন দেয়া হয়েছে।’

অবস্থান কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম বাবলু, বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর প্রমুখ।

দৈনিক চাঁদনী বাজার /  সাজ্জাদ হোসাইন