
গত বছর করোনা ভাইরাস ও বন্যার সাথে লড়াই করে আমন চাষ করেছিল চাষিরা। আর এবছর বন্যা না থাকায় করোনা ভাইরাসের প্রভাব ম্থাায় নিয়ে আমন চাষ প্রায় শেষ করেছে। শ্রাবণের বৃষ্টি আর আর সেচ দিয়ে আমন চাষের পর চাষিরা ভাল ফলনের আশা করছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণের কর্মকর্তারা বলছেন, শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে চাল আকারে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যাবে।
জানা যায়, চলতি বছর বগুড়ার যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেও শেষ পর্যন্ত বন্যা দেখা দেয়নি। যমুনা নদীর নিচু অঞ্চলগুলোতে কিছু পানি দেখা গেলেও বগুড়ার বেশিরভাগ এলাকায় তেমন কোন বন্যার পানি দেখা যায়নি। বর্ষা ও শ্রাবণের বৃষ্টিতে নির্ভর করেই আমন চাষিরা এবার মাঠে নেমে পড়ে। বৃষ্টিপাত কম হলে বেশিরভাগ এলাকায় শ্যালো মেশিনে পানি সেচ দিয়ে জমি তৈরী করে আমন চাষ প্রায় শেষ করে এনেছে। গত বছরের চেয়ে চলতি বছর বগুড়ায় করোনা ভাইরাসের প্রভাব বেশি হলেও আমন চাষিরা থেমে নেই। ভাল ফলন পাওয়ার আশায় আমন চাষে মাঠে রয়েছে। বগুড়ার সদর উপজেলা, শেরপুর, নন্দীগ্রাম, গাবতলী ও শিবগঞ্জ উপজেলাসহ ১২ উপজেলায় আমন চাষ একেবারে শেষ দিকে।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, উত্তরের জেলাগুলোর মধ্যে বগুড়া একটি কৃষি প্রধান এলাকা। ধান, পাট, সবজি, মরিচ, ভুট্টা, আলু, সরিষার জন্য বগুড়া কৃষি ক্ষেত্রে বরাবরই অবদান রাখছে। এবারো আমন চাষে মাঠে নেমেছে চাষিরা। চলতি বছর জেলায় ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বিপরীতে ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৬৮৩ মেট্রিক টন। গত বছর ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৮ হেক্টর জমিতে আমন চাষের পর মোট ফলন পাওয়া যায় ৫ লাখ ১৭ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন চলতি বছরও ফলন ৫ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। এ পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৯৮ শতাংশ জমিতে আমন চাষের চারা রোপণ করা শেষ হয়েছে। গত ১৫ জুলাই থেকে রোপণ শুরু হয়। বীজতলা তৈরী করা হয় প্রায় ১০ হাজার ২৭৩ হেক্টর জমিতে। এর বাহিরে স্থানীয় কৃষকরাও বীজতলা তৈরী করে।
বগুড়া সদরের মাটিডালি, সাবগ্রাম, শ্যামবাড়িয়া, দ্বিতীয় বাইপাস সড়ক, বারপুর ফুলবাড়ি এলাকাসহ বেশ কিছু এলাকায় আমন চাষিদের মাঝে ব্যস্ততা দেখা গেছে।
বগুড়ার ধুনট, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় গত কয়েক বছর ধরে আগস্ট মাসে বন্যার পানি দিয়েই আমন চাষ করে আসতো। কিন্তু এবছর বন্যার পানি না থাকায় সেচ দিয়ে আমন চাষ প্রায় শেষ করে এনেছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক দুলাল হোসেন জানান, গত বছর বন্যার সাথে করোনা ভাইরাসের প্রভাব ছিল। এবছর বন্যা নেই। তবে করোনা ভাইরাসের প্রভাব রয়েছে। গত বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ফলণ পাওয়া গিয়েছিল। এবছর বন্যা না থাকায় বৃষ্টি ও সেচ দিয়ে প্রায় ৯৮ শতাংশ জমিতে আমন চাষ শেষ হয়েছে। আরো কয়েক দিন সময় আছে। কিছু কিছু এলাকায় স্থানীয় জাতের বর্ষালি ধান চাষ করেছে। এই ধান কিছু দিনের মধ্যে কেটে আবার সেই জমিতে আমন চাষ করবে। জেলার অন্যান্য উপজেলায় বন্যা না থাকায় পুরো দমে আমন চাষ হচ্ছে। গত বছরের মত এবছরও আমনের ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারি কৃষি অফিসার ফরিদ উদ্দিন জানান, জেলার অধিকাংশ উপজেলায় আমন রোপন শেষ হয়েছে। যে টুকু বাঁকি আছে। আশা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহের মধ্যে অবশিষ্ট জমিতে আমন রোপনের কাজ শেষ হবে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ভাল রয়েছে।
বগুড়ার কাহালু উপজেলার প্রতাপপুরের আব্দুল বাছেদ জানান, চলতি মৌসুমের আমন চাষ শেষ করেছেন। তার প্রায় ১ বিঘা জমিতে সেচ দিতে হয়নি। বৃষ্টির পানিতে নির্ভর করেই তিনি চাষ শেষ করেছেন। তার প্রায় ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে জমি চাষ করতে। তিনি আশা করছেন গত বছরের মত এ বছরও ভাল ফলন পাবেন।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন