ব্র্যান্ডের নকল ওষুধ তৈরি চক্রের ৭ সদস্য গ্রেফতার | Daily Chandni Bazar ব্র্যান্ডের নকল ওষুধ তৈরি চক্রের ৭ সদস্য গ্রেফতার | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৬:৩৫
ব্র্যান্ডের নকল ওষুধ তৈরি চক্রের ৭ সদস্য গ্রেফতার
অনলাইন ডেস্ক

ব্র্যান্ডের নকল ওষুধ তৈরি চক্রের ৭ সদস্য গ্রেফতার

রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে ওষুধ নকলকারী চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরা ডেমরা এলাকায় কারখানা বসিয়ে করোনা ও ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগের চিকিৎসায় ব্যবহƒত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল ওষুধ তৈরি করছিল। গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেছেন, এসব ওষুধ মিটফোর্ড থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো হতো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এসব ওষুধ আসল না নকল তা বোঝা কঠিন। আর এ কারণে দাম দিয়ে নকল ওষুধ কিনে প্রতারিত হতো মানুষ।

গ্রেফতাররা হলো তরিকুল ইসলাম, সৈয়দ আল মামুন, সাইদুল ইসলাম, মনোয়ার, আবদুল লতিফ, নাজমুল ঢালী ও সাগর আহমেদ মিলন। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে একমি কোম্পানির মোনাস-৭০০ বক্স, স্কয়ার কোম্পানির সেকলো-৫০ বক্স, জেনিথ কোম্পানির ন্যাপ্রোক্সেন প্লাস-৭৪৮ বক্সসহ দেশি-বিদেশি অন্যান্য কোম্পানির বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ, ওষুধ তৈরির মেশিন, ডায়াস ও ওষুধের খালি বক্স উদ্ধার করা হয়। বুধবার ধারাবাহিক অভিযানে রাজধানীর কাজলা, আরামবাগ ও মিটফোর্ড এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

শুক্রবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নকল ওষুধ তৈরি করে আসছিল এ চক্রটি। এ চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ। বুধবার ধারাবাহিক অভিযানে এ প্রতারক চক্রের ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। চক্রের মূলহোতা তরিকুল ইসলাম। তার সহযোগী সৈয়দ আল মামুন এবং সাইদুল ইসলামকে নিয়ে সে ঢাকার ডেমরায় কারখানা বসিয়ে জীবন রক্ষাকারী এসব নকল ওষুধ তৈরি করে। সাইদুল ইসলাম এ নকল ওষুধ তৈরির প্রধান কারিগর। এখানে ডায়াস, মেশিন, কেমিকেল ও কাঁচামাল সংগ্রহ করে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল ওষুধ তৈরি করছিল তারা। এ চক্রের সদস্য মনোয়ার ও লতিফ ট্যাবলেট তৈরির ফয়েল পেপার এবং ওষুধ রাখার সিলিন্ডার সরবরাহ করত। আর নাজমুল ফকিরাপুলে তার মালিকানাধীন ‘সানাজানা প্রিন্টিং প্রেস’ থেকে বিভিন্ন ওষুধের প্যাকেজিং, কাটিং এবং পেস্টিংয়ের কাজ করত। তৈরি করা এসব নকল ওষুধ উৎপাদিত মাখন ও জাকির নামে আরও দুজনের হাত ঘুরে গ্রেফতার সাগর আহমেদ মিলনের নেতৃত্বে মিটফোর্ডের কয়েকটি গ্র“পের মাধ্যমে বাজারজাত করা হতো। ওষুধগুলো সেখান থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হতো। এ চক্রের সদস্য মাখন ও জাকির এখনো গ্রেফতার হয়নি। তাদের গ্রেফতারে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ডিবি কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার বলেন, প্রতিটি ওষুধে সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় এ দুই ধরনের উপাদান থাকে। রোগ সারানোর জন্য কী পরিমাণ সক্রিয় উপাদান কোন ওষুধে থাকবে, তা ওষুধের গায়ে লেখা থাকে। একটা মোনাস-১০ ট্যাবলেটে সক্রিয় উপাদান হিসেবে মন্টিলুকাস্ট সোডিয়াম থাকে ১০ মিলিগ্রাম। কিন্তু ওষুধ হিসাবে আকার দেওয়ার জন্য মন্টিলুকাস্ট সোডিয়ামের সঙ্গে স্টার্চ, ল্যাকটোজের মতো বিভিন্ন নিষ্ক্রিয় উপাদান যোগ করা হয়।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, মন্টিলুকাস্ট সোডিয়াম ব্যবহার না করেই শুধু স্টার্চ বা অন্যান্য উপকরণ দিয়ে এমন ট্যাবলেট তৈরি করা যায়। যা দেখলে মনে হবে হুবহু মোনাস-১০ ট্যাবলেট। কিন্তু ওষুধে নির্ধারিত মাত্রায় সক্রিয় উপাদান না থাকলে তাকে ওষুধ বলা যাবে না। চক্রটি সারা দেশে নকল ওষুধ ছড়িয়ে দিয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলকে টার্গেট করে বহুল বিক্রিত ওষুধগুলো নকল করে তারা বাজারজাত করছিল। আমরা আট ধরনের নকল ওষুধ উদ্ধার করেছি। যেসব ওষুধ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। সেগুলোই নকল করে বাজারজাত করছিল চক্রটি। আসল ওষুধের প্রকৃত দামের তুলনায় অনেক কম দামে নকল ওষুধগুলো বাজারে বিক্রি হচ্ছিল। এগুলো মাদকের থেকেও ভয়ংকর। মানুষ অসুস্থ হয়ে ওষুধ সেবন করে। আর নকল ওষুধ সেবন করে মানুষ সুস্থ না হয়ে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই চক্র যেভাবে ওষুধ নকল করে তা সাধারণ ক্রেতারা বুঝতে পারে না। শুধু যারা ম্যানুফ্যাকচার করে তারাই বুঝতে পারে। সেজন্য ওষুধ প্রশাসনসহ আরও যারা আছেন তাদের সক্রিয় হয়ে এসব নকল ওষুধ প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ডিবি।

লালবাগ বিভাগের গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, নকল আর আসল ওষুধ চিনতে খুবই সমস্যা হয়। তবে আসল ও নকল ওষুধের প্যাকেটের রঙে কিছুটা পার্থক্য থেকেই যায়। আর নকল ওষুধ সহজে ভাঙা যায়। আসল ওষুধ চাপ দিলে অত সহজে ভাঙে না।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন