বগুড়ায় করোনায় থেমে যাওয়া স্কুলগুলোতে ১৭ মাস পর ক্লাশ হলো | Daily Chandni Bazar বগুড়ায় করোনায় থেমে যাওয়া স্কুলগুলোতে ১৭ মাস পর ক্লাশ হলো | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২৩:০৮
বগুড়ায় করোনায় থেমে যাওয়া স্কুলগুলোতে ১৭ মাস পর ক্লাশ হলো
ষ্টাফ রিপোর্টার

বগুড়ায় করোনায় থেমে যাওয়া
স্কুলগুলোতে ১৭ মাস পর ক্লাশ হলো

প্রায় ১৭ মাস পর বগুড়ার শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সরাসরি স্কুলে ক্লাশ করলো। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীরা রোববার মুখে মাস্ক পড়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলের প্রথম দিন কাটিয়েছে। দির্ঘদিন পড়ে স্কুলে যেতে পেরে অনেকের মুখে হাসি ছিল। বগুড়া শহরের বেশিরভাগ স্কুলে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হয় গোলাপ ফুল দিয়ে। যারা মাস্ক পড়েনি তাদের মাস্ক পড়িয়ে স্কুলের পাঠদান কক্ষে বসানো হয়। একটি বেঞ্চে দুজন করে বসানো, হাত ধোয়া ও শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা দেখার ব্যবস্থা করা হয়। প্রথমি দিনে নিয়ম অনুযায়ি দুটি করে ক্লাশ গ্রহণ করা হয়। 

জানা যায়, দেশে করোনা ভাইরাসের প্রভাব বেড়ে গেলে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে পর্যায়ক্রমে স্কুল ছুটি ঘোষণা করা হয়। দফায় দফায় সাধারণ ছুটি বেড়ে প্রায় দেড় বছরে পৌঁছে যায়। দেশে টিকা গ্রহণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে করোনা ভাইরাস কিছুটা নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সে কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় চলতি বছরের আগস্টের শেষে। ঘোষণার পর থেকেই স্কুলের ক্লাশরুমের ময়লা পরিস্কার করা হয়। 
জেলার বেশিরভাগ স্কুল প্রধানগণ বলছেন, শ্রেণী কক্ষে হ্যান্ডস্যানিটাইজার করে মাস্ক পরিধান করাসহ অন্যান্য সকল স্বাস্থ্যবিধি পালন করা হয়েছে। তবে শহরের স্কুলে হাত ধোঁয়ার জন্য বেসিন বসানো হলেও গ্রামের কিছু কিছু স্কুলে সেটির ব্যবস্থা এখনো করা হয়নি।
বগুড়া জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, বগুড়া জেলায় মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি- বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাসহ মোট ৮৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বগুড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় থেকে জানা যায়, জেলায় ১ হাজার ৬০৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রোববার ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাশ শুরু হবে। অবশ্যই সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাশ গ্রহণ করা হবে।
এদিকে বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজে পাঠদানের শুরুতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণী কক্ষে একটি বেঞ্চে দুজন করে বাসনোর ব্যবস্থা করা হয়। সকালে স্কুলে গিয়ে শ্রেণী কক্ষে প্রবেশের আগে শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরন করে নেয় স্কুলের অধ্যক্ষ সহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ। ক্লাসের ঘন্টার শব্দে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান শুরু হয়। সকাল সাড়ে ৭ টা থেকে বেলা ২ টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেছে শহরের বিয়াম মডেল স্কুল এন্ড কলেজ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান সহ একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা যারা রোববারই প্রথম ক্লাস করেছে তাদেরকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। উৎসব মুখর পরিবেশে শিক্ষার্থীরা এসেছে প্রতিষ্ঠানে। প্রথম দিনে বগুড়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারী নির্দেশনায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে পাঠদান করেছে। সকালে বগুড়া জিলা স্কুল, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সিটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজ, বিয়াম মডেল স্কুল এন্ড কলেজ সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশকালে শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। এছাড়া তাপমাত্রা পরিমাপ, স্যানিটাইজার, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করেছেন শিক্ষককবৃন্দ। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ক্লাসে স্যানিটাইজার ও মাস্ক রাখা হয়েছে। 
বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম ঝুনু জানান, প্রতিষ্ঠান খোলার পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার যে কঠিন চ্যালেঞ্জ তা শতভাগ সফল হতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। 
শিক্ষাথীরা জানায়, প্রায় দেড় বছর এক ঘেঁয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হয়েছে। যদিও তারা অনলাইনে ক্লাশ করেছে। তবুও শিক্ষকদের ও স্কুলে না আসায় তাদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটেছে। এখন স্বাস্থ্যবিধি মেন সরাসরি স্কুলের শিক্ষকদের কাছে পাঠ নিতে পেরে তারা আনন্দিত। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা পুরোপুরি মেনে চলতে পারলে তাদের কোন সমস্যা হবে না বলে আশা প্রকাশ করে।
অভিভাবকরা জানান, দীর্ঘদিন পরে আজ স্কুলে আসতে পেরে তাদের সন্তানরা আনন্দিত। স্কুলে শিক্ষকদের নির্দেশনা ছাড়া শিক্ষার্থীরা লোখাপড়া করতে চায় না। তবে যেহেতু এখনও করোনা পরিস্থিতি তত ভাল হয়নি তাই তারা কিছুটা হলেও শঙ্কিত রয়েছেন।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন