শিশু বলাৎকার ধামাচাপার চেষ্টা! আত্নগোপনে মাদ্রাসা শিক্ষক!! | Daily Chandni Bazar শিশু বলাৎকার ধামাচাপার চেষ্টা! আত্নগোপনে মাদ্রাসা শিক্ষক!! | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৭:২৮
শিশু বলাৎকার ধামাচাপার চেষ্টা! আত্নগোপনে মাদ্রাসা শিক্ষক!!
শেরপুর(বগুড়া)প্রতিনিধিঃ

শিশু বলাৎকার ধামাচাপার চেষ্টা! আত্নগোপনে মাদ্রাসা শিক্ষক!!

“আমাক ম্যারা ফেলা দেওয়ার ভয় দেখাছিলো। আর কেউ ভয় দেখায়নি, খালি এরশাদ হুজুরই ভয় দেখাছিলো”, বলছিল বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ১১ বছর বয়সি মাদ্রাসা ছাত্র আশিক (ছদ্দনাম)। সে উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নভুক্ত ‘মদনপুর দারুল উলুম কওমী মাদ্রাসার ছাত্র। কথাগুলো বলছিল তার মাদ্রাসার শিক্ষক এরশাদ হুজুরের সম্বন্ধে। এরশাাদ হুজুরের বাড়ি ধুনটের চালাপাড়া এলাকায়। এরশাদ হুজুর মদনপুর দারুল উলুম কওমী মাদ্রাসার সার্বিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক। এরশাদ হুজুর একাধিকবার ছাত্র আশিককে বলাৎকার করেছেন এবং মুখ না খোলার জন্য বেত্রাঘাত করে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছেন বলে ছাত্র আশিক সহ তার পরিবারের অভিযোগ।

গত কয়েক মাসে তাদের ছেলেকে কয়েকবার বলাৎকার করা হয়। শিশুটি কাউকে কিছু বলতে না পেরে মাঝে মাঝেই বাড়িতে চলে আসত। বাড়িতে চলে আসার কারণ জানতে চাইলে প্রথমে কিছুই বলতে চায়নি শিশুটি, শুধু বলেছে হুজুর মারধোর করে। পরবর্তীতে আবার তাকে বুঝিয়ে মাদ্রাসায় পাঠানো হতো। সর্বশেষ গত ২২ নভেম্বর আবারো শিশুটি বাড়িতে চলে আসে। এবার কারণ জানতে চাপ দিলে ঘটনাটি খুলে বলে সে। বলছিলেন, আশিকের মা-বাবা।

কিন্তু ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পরা মাত্র ওই শিক্ষক মাদ্রাসা থেকে উধাও হয়ে গেছেন। সরেজমিনে মাদ্রাসায় গেলে মাদ্রাসায় অধ্যায়নরত ২০জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৫ জনই ওই ঘটনার পর বাড়িতে চলে গেছে বলে জানান, ‘মদনপুর দারুল উলুম কওমী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক মো: হাফিজুর ইসলাম। তিনি জানান, আমি এখানে দুইমাস হলো এসেছি। এরসাদ হুজুর এখানে ৬/৭ বছর হলো দায়িত্বে আছেন। তিনি আরও জানান, আশিকের সাথে অনৈতিক কার্যক্রম দেখে ফেলেছিল মাদ্রাসার আরেক ছাত্র (সুজন) ছদ্দনাম। পরেরদিন শুক্রবার সে তার চোঁখে দেখা ঘটনার কথা অন্যান্য ছাত্রদেরকে জানিয়ে বাড়িতে পালিয়ে যায়। এর পরেই ঘটনা জানাজানি হয়ে যায় এবং বেশিরভাগ অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বাড়িতে ফেরৎ নিয়ে যান।

অন্যদিকে এরশাদ হুজুরের অনুপস্থিতিতেই নিকৃষ্ট এই ঘটনা মিমাংসা ও ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন এলাকার কিছু সুবিধাভোগী ও স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি।

বলাৎকারের শিকার ছাত্রটির বাবা বলেন, মাদ্রাসার সভাপতি ও সেক্রেটারীসহ এলকার কিছু লোক বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। তারা সালিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। সমাজে এক ঘরে হওয়ার ভয়ে তারা আইনের আশ্রয় নিতে সাহস করছেন না বলে জানান তিনি।

ছাত্র বলাৎকারের বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রসার সেক্রেটারী আব্দুল লতিফ বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে এরশাদ হুজুর এধরণের কাজ করতে পারেন বলে তার বিশ^াস হয় না। বিষয়টির সাথে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সুনাম জড়িত বিধায় বেশি ঘাটাঘাটি না করার পরামর্শও দেন তিনি। তার কাছে অভিযুক্ত শিক্ষকের মোবাইল নাম্বার চাইলেও তা দিতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে ওই মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি মো: মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘটনাটি শুনেছি, আমিই প্রথম এই প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেছিলাম। পরবর্তীতে আমার সাথে বনাবনি না হওয়ায় আমি সরে এসেছি।

এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বর (৬নং) মো: মমতাজ বলেন, ঘটনাটি ঘটায় মাদ্রাসাটি একদম ধংস হয়ে গেল। মাদ্রাসায় তালা মেরে হুজুর চলে গেছে। আমরা তাকে আনার চেষ্টা করছি।

এ বিষয়ে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম চাঁদনী বাজারকে বলেন, “এ সম্পর্কে আমি অবগত নই। ভিক্টিমের পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ করা হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন