
বগুড়ার সান্তাহারে বিআইআরএস প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি ওয়ান টাইম প্লেট ও গ্লাস তৈরির ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগে ৫ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এতে ওই ফ্যাক্টরির প্রায় ৩৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের হবীর মোড় এলাকায় এই আগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
ফ্যাক্টরির স্বত্বাধীকারি ও সান্তাহার পৌর মেয়র আলহাজ্ব তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু বলেন, মঙ্গলবার সকালে ৪৫ জন শ্রমিক ফ্যাক্টরিতে কাজ শুরু করে। হঠাৎ বেলা সাড়ে ১১ টায় মেশিন চলা অবস্থায় আগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। দ্রুত ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়া হয়। মেয়র আরো বলেন, আগুনে ২০ কোটি টাকার মেশিনসহ প্রায় ৩৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের ধারনা, রিসাইকেলিং মেশিন থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হতে পারে। তবে ফ্যাক্টরির আশে পাশে বেশ কিছু স্থাপনা থাকলেও সেখানে আগুন ছড়িয়ে পড়েনি। মূলত: আগুন কারখানার ভেতরে সীমাবদ্ধ ছিল। অগ্নিকান্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে কারখানাটির আশেপাশে বিপুল পরিমান উৎসুক মানুষের সমাগম ঘটে। ফলে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের গাড়িগুলোর ঘটনাস্থলে পৌঁছতে বেগ পেতে হয়।
আদমদীঘি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ইনচার্জ রুহুল আমীন বলেন, ১১.৫৫ টায় খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পোঁছে প্রচেষ্টা চালিয়ে দুপুর ২টায় আগুন নিভানো ও নিয়ন্ত্রনে আনি। ফায়ার সার্ভিসের বগুড়া ও নওগাঁর ১৮ টি ইউনিট কাজ চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ফ্যাক্টরির ভেতর থেকে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ৫জন শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে কারখানার একটি রিসাইকেলিং মেশিনের অধিক তাপমাত্রা থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত ঘটেছে। এসময় বগুড়া ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারি পরিচালক আব্দুল মালেক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
আদমদীঘি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দীন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নিহত ৫ জন শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এই রির্পোট লেখা পর্যন্ত বিকেল ৪.৪০ মিনিটে তাঁর সাথে কথা হলে তিনি জানান, নিহতদের পরিচয় তখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
তবে স্থানীয় সূত্র ও মৃত সিয়ামের বাবা লুৎফর রহামান জানান, নিহতদের ৫ জনের মধ্যে ৪ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা সান্তাহার পৌর এলাকার কোমল দোগাছী গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে সিয়াম হোসেন (১৩), সান্তাহার ইউনিয়নের সান্দিরা গ্রামের নাছির উদ্দীনের ছেলে শাহজাহান আলী (২৪), সান্তাহরের পশ্চিম সিংড়া গ্রামের ওহায়েদের ভাগ্নে বিজয় (১৪) ও সান্তাহার পৌর এলাকার বেলাল হোসেন (৩৪)। এই ৪ জনের ওই কারখানায় কাজ করছিল। অগ্নিকান্ডের পর থেকে তাদের কোন সন্ধান না পাওয়ায় তাঁদের স্বজনরা ধারনা করছেন নিহতরা ওই ৪ জন তাঁদের পরিবারে সদস্য। তবে উদ্ধারকৃত মরদেহ গুলো সম্পূর্ন ভাবে আগুণে দগ্ধ ও বিকৃত হওয়ায় তাঁদের সনাক্ত করা যাচ্ছেনা।
এদিকে অগ্নি কান্ডের খবর পাওয়ার সাথে সাথে আদমদীঘি উপজেলার নির্বার্হী অফিসার শ্্রাবণী রায়, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জালাল উদ্দীন, সান্তাহার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আরিফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন। বিকেল ৩টার দিকে বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক ও ফ্যাক্টরির তত্ত্বাবধায়ক তোফাজ্জল হোসেন জাানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন