
‘হামাগেরে মতো জন্মান্ধ ও অসহায় মানুষের পাশে পুনাকের ম্যাডামেরা, পুলিশ ও সাংবাদিকরা যেভাবে দাঁড়ালো তা কোনদিন ভুলমু না স্যার... হামরা দেখপ্যার পায়না তো কি হছে হামাকেরে আজ খুশিতে অন্তর চক্ষু খুলে গেছে আল্লাহ সবার ভাল করুক’ হ্যাঁ এমনই আবেগঘনভাবে ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলো ৮০ বছরের জন্মান্ধ বৃদ্ধ আসাদ জামান মন্ডল। কারণ আজ সে পেয়েছে পুনাকের ভালবাসার নানা উপহার। শুধু আসাদ মন্ডলই নয় বগুড়া সোনাতলা উপজেলার ছোট বালুয়া পূর্বপাড়ার একান্নবতী পরিবারের ১৯ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধি ও ২ জন শারীরিক প্রতিবন্ধীর পাশে মানবিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)।
গণমাধ্যমে একই বংশের ৮টি পরিবারের ২১ জন প্রতিবন্ধীদের এমন মানবেতর জীবনের সংবাদ প্রকাশ হলে তা নজরে আসে আইজিপি পত্নী ও পুনাক এর সভানেত্রী জীশান মির্জার। বৃহস্পতিবার বিকেলে জীশান মির্জার উদ্যোগে এবং পুনাক বগুড়ার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ২১ জন প্রতিবন্ধীর নিজ এলাকায় গিয়ে তাদের হাতে পুনাকের পক্ষে খাদ্যসামগ্রী, শীতবস্ত্র ও নগদ অর্থ উপহার হিসেবে তুলে দেন বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম। পুরো আয়োজনে ভার্চুয়ালি ঢাকা থেকে যুক্ত ছিলেন পুনাকের সভানেত্রী আইজিপি পত্নী জীশান মির্জা। ভার্চুয়ালি তার বক্তব্যে তিনি বলেন, পুলিশ ও পুনাক অবিচ্ছেদ্য দুটি সত্তা। করোনাকালীন সময়ে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে পুলিশ সদস্যগণ মানবিক কাজে নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করেছেন। পুলিশ পরিবারের সংগঠন হিসেবে পুনাক সর্বদাই এই ক্রান্তিকালে সেবামূলক ও মানবিক কাজে সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে গেছে এবং এখনো যাচ্ছে। ২১ জন প্রতিবন্ধীর এমন অসহায়ত্বের খবর তাকে ভাবুক করেছে। তিনি বলেন তাদের চিকিৎসায় সহযোগিতা করাসহ তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও পুনাক সর্বদাই তাদের পাশে থাকবে। পুনাক সভানেত্রী এসময় গণমাধ্যমকর্মীদের বাংলাদেশ পুলিশ ও পুনাকের মানবিক কার্যক্রমে উৎসাহ প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে এসময় ভার্চুয়ালি স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুনাক বগুড়ার সভানেত্রী ও পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (ক্রাইম ওয়েস্ট) সুনন্দা রায়। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন পুনাকের রাজশাহী বিভাগীয় সভানেত্রী রেঞ্জ ডিআইজি পত্নী নূরজাহান আক্তার হীরা। অনুষ্ঠানে এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যথাক্রমে আলী হায়দার চৌধুরী (প্রশাসন) এবং আব্দুর রশিদ (অপরাধ), সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তানভীর হাসান, সোনাতলা থানার ওসি রেজাউল করিম রেজা, পুনাক বগুড়ার সহ সভানেত্রী দ্বিল আকতার জাহান, মাহমুদা খানম, সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরী ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ রওশন আরা মুন্নী প্রমুখ।
পুনাকের এমন মানবিক উদ্যোগ প্রসঙ্গে জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম বলেন, সোনাতলা উপজেলার এই বালুয়া গ্রামের একই বংশের ২১ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পাশে মানবিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন পুনাক সভানেত্রী জীশান মির্জা। শুধু খাদ্য, বস্ত্র ও নগদ অর্থ সহায়তায় নয় তাদের চিকিৎসার মাধ্যমে পুনরায় দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা যায় কি না সেই বিষয়েও তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন মর্মে জানান তিনি। এছাড়াও তাদের পরিবারে একজন অনার্স পড়ুয়া সুস্থ ছেলে রয়েছেন সেই ছেলেসহ পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে জেলা পুলিশ সুপার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন মহলকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান যদিও শেষ পর্যন্ত জেলা পুলিশ ও পুনাক বগুড়া তাদের পাশে থাকবেন মর্মে জানান জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন