শেরপুরে অবৈধভাবে মাটি কাটায় হুমকিতে ফসলি জমি | Daily Chandni Bazar শেরপুরে অবৈধভাবে মাটি কাটায় হুমকিতে ফসলি জমি | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ৯ জানুয়ারী, ২০২২ ১৯:২৮
শেরপুরে অবৈধভাবে মাটি কাটায় হুমকিতে ফসলি জমি
শুভ কুন্ডু, শেরপুর(বগুড়া)প্রতিনিধিঃ

শেরপুরে অবৈধভাবে মাটি কাটায় হুমকিতে ফসলি জমি

তিন ফসলী উর্বর জমি, উঁচু ভিটা কিংবা ক্ষুদ্র জলাশয় কোন কিছুই বাদ পড়ছে না। মাটি কেটে পরিণত করা হচ্ছে প্রকান্ড পুকুরে। বগুড়ার শেরপুরে আইনের তোয়াক্কা না করে দিনে রাতে সমান তালে চলছে অবৈধভাবে মাটি কাটার এই উৎসব। এর ফলে একদিকে যেমন এলাকার উর্বর আবাদী জমির পরিমাণ কমছে অন্যদিকে হুমকীর মুখে পড়ছে বসত বাড়ি।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মির্জাপুর ইউনিয়নের সুখানগাড়ি, বেলতা, উচরং, খোট্টা পাড়া, খানপুর ইউনিয়নের সুবলী, বড়ইতলী, 
বিশালপুর ইউনিয়েনের জামাইল বাজার সংলগ্ন চাটাইল, শাহবন্দেগী ইউনিয়নের উচরং, ঘোলাগাড়ি, কুসুম্বী ইউনিয়নের কেল্লা, বোর্ডের হাট, চন্ডেশ্বর, গাড়িদহ ইউনিয়নের মাগুড়গাড়ি, খামারকান্দি ইউনিয়নের বড়বিলা সহ প্রায় অর্ধশতাধিক এলাকায় চলছে অবৈধভাবে মাটি কাটার কাজ।

অথচ সরকারি গেজেটে প্রকাশিত মাটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসকরণ ২০১৩ সালের ৫৯ নং আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তত করার উদ্দেশ্যে কৃষি জমি হতে মাটি কাটা বা সংগ্রহ করে ইটের কাচাঁমাল হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন না। যদি কোন ব্যক্তি আইনের এই ধারা লঙ্ঘন করেন তা হলে তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসরের কারাদণ্ড বা ২ (দুই) লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দণ্ডে দন্ডিত হবেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, দিনরাত মাটি কাটা চলে। মাটি পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ভাড়ি ড্রাম ট্রাক চলাচলেরে কারণে রাস্তা ভেঙ্গে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এছাড়াও গাড়ির শব্দ ও ধুলার কারণে বাইরে বের হওয়া যায় না। খাড়া পার করে ১৫ থেকে ২০ গভীর গর্ত করার ফলে আশেপাশের আবাদী জমি ও বসত বাড়ি ভাংগনের হুমকীতে পড়েছে। জমির মালিক ও মাটি ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা প্রকাশ্যে কিছু বলার সাহস পান না। মাঝে মাঝে পুলিশ ও সাংবাদিক এসে শুধু ছবিই তোলে কিন্তু কোন প্রতিকার হয় না।

এ বিষয়ে মির্জাপুর ইউনিয়নের সুখানগাড়ি এলাকার রঞ্জনা খাতুন বলেন, আমার থাকার ঘর ঘেষে আবাদী জমি কেটে গভীর করা হচ্ছে। এলাকার বর্তমান চেয়ারম্যান মো: জাহেদুল ইসলাম মাটি কেটে তার ইটের ভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন। আমার ঘর যেকোন সময় ধ্বসে পড়তে পারে। সবসময় আতংক কাজ করে। তাছাড়া সারা দিন রাত এস্কেভেটর ও ট্রাকের শব্দে ঘুমাতে পারি না। সন্তানেরা পড়তে পারে না। 

ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী তিন ফসলী জমি থেকে মাটি কাটা অবৈধ। এছাড়াও বসত বাড়ি থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে মাটি কাটার বৈধতা নেই। চাষের জমি খনন করে মাটি কাটার জন্য প্রশাসনের অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে মির্জাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম বলেন, লিখিত অনুমতি না থাকলেও তিনি বিষয়টি শেরপুর উপজেলার ইউএনওকে মৌখিকভাবে অবগত করেছেন। 

একই দাবি একাধিক মাটি ব্যবসায়ীদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মাটি ব্যবসায়ী বলেন, এসব কাজে প্রশাসনের লিখিত কোন অনুমতি থাকে না। তবে তারা মৌখিক অনুমতি নিয়েই মাটি কেটে থাকেন। তবে নিরুপায় হয়েই তারা একাজ করেন বলে তাদের দাবি। তারা বলেন, ফসলী জমির মাটি না পেলে ইট ভাটাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। তাছাড়া মানুষ বসত ভিটা উচু করার জন্য মাটি কেনে।

এ বিষয়ে শাহ বন্দেগী ইউনিয়নের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর মাটি কেটে আবাদী জমি ধ্বংশ করা হয়। প্রথমবার মাটি ব্যবসায়ীরা জমি সংস্কারের নামে মাটি কেটে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। পরের বছরেই আবার সেই জমিকে পুকুর দাবি করে গভীরভাবে খনন করা হয়। এর ফলে আশেপাশের জমির পানি থাকে না। আমাদের চাষের খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাঝে মাঝে প্রশাসন জরিমানা করলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার মাটি কাটা বন্ধ হচ্ছে না।
তবে কোন প্রকার অনুমতির কথা অস্বীকার করে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, মাটি ব্যবসায়ীদের সংবদ্ধ চক্রটি খুবই শক্তিশালী। তারা রাতে মাটি কাটে। গত ১৫ দিনে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ৪ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তাদের মাটি কাটা বন্ধ করতে প্রশাসনের অভিযান অব্যহত থাকবে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন