
বগুড়ায় কৃষিপণ্য উৎপাদনে পুরাতন লোহা, জাহাজ ভাঙ্গা লোহার কদর বেড়েছে। পুরাতন লোহা কেজিদরে ক্রয় করে তা গলিয়ে তৈরীকৃত পণ্য ব্যবহার করা হচ্ছে আবারো কৃষি কাজে। পুরাতন শ্যালো মেশিন, পাওয়ার টিলার, লেদ ওয়ার্কসপের ফেলনা লোহার টুকরো, পুরাতন এ্যালুমিনিয়াম থেকে নতুন এ্যালুমিনিয়াম পাত্র, জাহাজ ভাঙ্গার লোহা গলিয়ে বগুড়ায় তৈরী করা কৃষি পণ্য ব্যবহার ও বিক্রি হচ্ছে উত্তরের ১৬ জেলায়। ভাঙাড়ি লোহা দিয়ে তৈরীর করার ফলে বিদেশ থেকে নতুন করে লোহা আমদানী করতে হচ্ছে না। আর স্থানীয় অর্থনীতির চাকা শক্ত হচ্ছে বলে ব্যবসায়িরা বলছেন।
জানা যায়, স্বাধীনতার আগে থেকে বগুড়ায় বিভিন্ন রকমের যন্ত্রাংশের খুচরা পার্টস তৈরী হতে থাকে। বগুড়া শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় বিসিক শিল্প ও কাটনারপাড়া সহ বেশ কিছু এলাকায় এই পার্টস তৈরী করতো কয়েকজন ওয়ার্কসপ মালিক শ্রমিক। উত্তরের জেলাগুলো কৃষি ভিত্তিক হওয়ার কারণে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের চাহিদাও বেড়ে যায়। পর্যায়ক্রমে স্বাধীনতার পর এই শিল্পের বিকাশ এতটায় হয়েছে যে এখন সেটি বগুড়ার সবচেয়ে বড় শিল্প কারখানায় রুপান্তরিত হয়েছে। এই শিল্পের কাঁচামালমাল হলো পুরাতন লোহা, বাসা বাড়িতে ভাঙ্গা তৈজসপত্র, ছাদ ঢালাইয়ে ব্যবহৃত পুরাতন রড, পাওয়ার টিলারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, লেদ মেশিন, গাড়ির বিভিন্ন লোহজাতীয় পার্টস, টিউবওয়েল, লেদ ওয়ার্কসপের ফেলনা লোহার টুকরো, জাহাজ ভাঙ্গার লোহা। এসব সংগ্রহীত লোহা গলিয়ে আবারও তৈরী করা হয় পাওয়ার টিলারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, কৃষির জন্য ব্যবহৃত ফলা, শ্যালো মেশিনের পার্টস, পানিসেচের জন্য যন্ত্রাংশসহ কৃষিকাজের বিভিন্ন পার্টস। বগুড়ায় তৈরী হওয়া এই পার্টস উত্তরেরর ১৬ জেলাতেই বিক্রি হয়। আবার ১৬ জেলা থেকেই পুরাতন ভাঙড়ি লোহা, ঢালাই এর লোহা সংগ্রহ করা হয়।
বগুড়ার ভাঙারি ব্যবসায়ি ও ওয়ার্কসপ শ্রমিক মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক শ্রেণীর ভাঙড়ি লোহার ব্যবসায়িরা বিভিন্ন উপায়ে এই লোহা উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে সংগ্রহ করে। সংগ্রহের পর বগুড়ার বিসিক এলাকায় গড়ে ওঠা ৩০ টি ঢালাই কারখানার মালিকদের কাছে ৪৫ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে।
ভাঙাড়ি লোহার সংগ্রহকারিরা জানান, বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন স্থান থেকে লোহা ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি কিনে নিয়ে আসে। সেই সব লোহাকে ভাঙাড়ির মধ্যে থেকে আলাদা করা হয় ঢালাই লোহা, মাইল্ড স্টোন (এমএস) এসএস ও কাস্ট আয়রন হিসেবে কিছুটা আলাদা করা হয়। আলাদা এই লোহা বিসিকের শিল্প মালিকদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করা হয। আবার চট্রগ্রামে জাহাজ ভাঙ্গার লোহা বগুড়ায় বিক্রি হয় সাধারণত ৩ থেকে ৪ টাকা কমে। এই লোহা আবার বগুড়ায় টুকরো টুকরো করে কেটে নিতে হয়। কোন কোন ঢালাই কারখানার মালিক চট্রগ্রাম থেকে কেটে ট্রাকে করে বগুড়ায় নিয়ে এসে গলিয়ে কাজ শুরু করে। এই পুরাতন লোহা ক্রয় বিক্রয়, তারপর এটি গলানো নতুন পণ্য তৈরী করা পর্যন্ত একটি বৃহ শ্রমবাজার জড়িয়ে আছে বলে ওয়ার্কসপ মালিকরা বলছেন। কয়েক হাজার পরিবার এর সাথে জড়িয়ে আছে।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন