ধুনটে সাংবাদিক হত্যা চেষ্টা মামলার তদন্ত ছাড়াই পুলিশের চুড়ান্ত প্রতিবেদন! | Daily Chandni Bazar ধুনটে সাংবাদিক হত্যা চেষ্টা মামলার তদন্ত ছাড়াই পুলিশের চুড়ান্ত প্রতিবেদন! | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১৯ জানুয়ারী, ২০২২ ২২:৪৪
ধুনটে সাংবাদিক হত্যা চেষ্টা মামলার তদন্ত ছাড়াই পুলিশের চুড়ান্ত প্রতিবেদন!
ধুনট বগুড়া প্রতিনিধি

ধুনটে সাংবাদিক হত্যা চেষ্টা মামলার তদন্ত
ছাড়াই পুলিশের চুড়ান্ত প্রতিবেদন!

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় এক সাংবাদিককে হত্যা চেষ্টা মামলার কোন তদন্ত ছাড়াই আসামীদের নাম বাদ দিয়ে আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে ডিবি পুলিশ। তবে এই মামলায় এজাহারভুক্ত তিন জন এবং অজ্ঞাত ৬ জনকে আসামী করা করা হলেও ডিবি পুলিশ তাদের তদন্তে একজনকেও অভিযুক্ত করেননি। 

এদিকে মামলার বাদী অভিযোগ করেছেন পুলিশ মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রভাবশালীদের বাঁচাতে কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই এবং কোন আসামীর নাম উল্লেখ না করেই আদালতে মিথ্যা ও বানোয়াট প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।       

জানাগেছে, ২০২১ সালের ৩০ মার্চ রাতে পেশাগত কাজ শেষে ধুনট মডেল প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক ইমরান হোসেন ইমনকে চলন্ত মোটরসাইকেলের ওপর হামলা চালায় দূর্বৃত্তরা। এতে সাংবাদিক ইমনের বাম হাত ভেঙ্গে গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে তার বাম হাত দেড় মাসের জন্য প্লাষ্টার করে দেন চিকিৎসক। এঘটনায় সাংবাদিক ইমরান হোসেন ইমনের স্ত্রী বাদী হয়ে তিন জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ৬ জনের জনের বিরুদ্ধে ধুনট থানায় মামলা দায়ের করেন।  

সাংবাদিক ইমরান হোসেন ইমন চৌকিবাড়ী গ্রামের প্রয়াত শিক্ষক আমির হোসেনের ছেলে। তিনি দৈনিক যায়যায়দিন ও দৈনিক চাঁদনী বাজার পত্রিকার ধুনট উপজেলা প্রতিনিধির দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়াও তিনি ‘অনুসন্ধানবার্তা’ অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করছেন।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, সাংবাদিক ইমনের ওপর হামলার ঘটনার ৬ দিন পর ধুনট পুলিশ অবশেষে মামলাটি রেকর্ডভুক্ত করেন। পরবর্তীতে মামলাটির তদন্তের দায়িত্বভার দেয়া হয় ধুনট থানার এসআই রিপন মন্ডলকে। কিন্তু তিনি মামলাটি তদন্ত না করেই এক মাস পর বাদলী হয়ে বগুড়ার মোকামতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে চলে যান। এরপর মামলাটির দায়িত্ব ভার পড়ে ধুনট থানার বর্তমান এসআই মঞ্জুর মোর্শেদ মন্ডলের ওপর।

কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, ধুনট থানার এসআই মঞ্জুর মোর্শেদ মন্ডল মোটা অঙ্গের টাকার বিনিময়ে এজাহারভুক্ত তিনজন আসামীর নাম বাদ দিয়েই তিনি অজ্ঞাতনামা হিসেবে এই মামলাটি দীর্ঘ তিন মাস পর বগুড়া ডিবি পুলিশে স্থানান্তর করেন। পরবর্তীতে এই মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান বগুড়া ডিবি পুলিশের এসআই আব্দুল ওয়াদুদ। কিন্তু তিনিও এ মামলাটির কোন প্রকার তদন্ত না করেই এজাহারভুক্ত আসামীদের বাদ দিয়েই ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এদিকে সাংবাদিক হত্যা চেষ্টা মামলার কোন অগ্রগতি বা আসামী গ্রেফতার না করেই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মামলাটি ধামাপাচা দেওয়ার চেষ্টা করায় বগুড়ার ডিবি পুলিশ ও ধুনট থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সাংবাদিক মহলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

মামলা বাদী সাংবাদিক ইমনের স্ত্রী জানান, আমার স্বামীর ওপর হামলার ঘটনায় তিন জনের নাম উল্লেখ করলেও ধুনট থানা পুলিশ ও বগুড়া ডিবি পুলিশ টাকার বিনিময়ে সকল আসামীর নাম বাদ দিয়েই আদালতে চুড়ান্ত প্রবিবেদন দাখিল করেছেন। তিনি বলেন, পুলিশের ঘুষ ও দূর্ণীতির কারনে আমার স্বামী কোন বিচার পেল না। তবে আগামীতেও যদি এমন ঘটনা ঘটে, তাহালে এজন্য পুরো পুলিশ বাহিনীকেই এই দায়ভার বহন করতে হবে।

সাংবাদিক ইমরান হোসেন ইমন বলেন, পুলিশ ও সাংবাদিকদের এক সঙ্গে কাজ করতে হয়। কিন্তু দু:খজনক আমার মামলাটির কোন আসামীকে গ্রেফতার তো দূরের কথা, কোন প্রকার তদন্ত না করেই পুলিশ লিখেছে, তদন্তে কোন আসামীর উপস্থিতি বা কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে একজন সাংবাদিকের মামলা যদি পুলিশ টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কি আশা করতে পারে।

তবে এব্যাপারে ধুনট থানার এসআই এসআই মঞ্জুর মোর্শেদ মন্ডল বলেন, মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য বগুড়া ডিবি পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছিল। তবে তদন্তে কেন আসামীদের নাম অজ্ঞাত হিসেবে ডিবি পুলিশের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছেন, এবিষয়ে  এসআই মঞ্জুর মোর্শেদ কোন উত্তর দিতে পারেননি।

এব্যাপারে বগুড়া ডিবি পুলিশের এসআই আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, সাংবাদিকের মামলাটি নিয়ে কয়েক দফা বগুড়া থেকে ধুনটে গিয়েছি। কিন্তু অজ্ঞাতনামাদের বিষয়ে কোন প্রমাণ না পাওয়ায় আদালতে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। তারপরও মামলাটি তিনি অন্য দপ্তরকে দিয়ে তদন্ত করাতে পারবেন।

 দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন