
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল মতিন আকন্দ নিজ খরচে স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝে স্কুল ড্রেস তুলে দিয়ে এলাকাবাসীর নজর কেড়েছেন।
শুধু তাই নয়- প্রতি বছর যে সব শিক্ষার্থী ওই স্কুল থেকে বৃত্তি লাভ করবে, তাদের এবং প্রত্যেক শিক্ষককে ৫ হাজার টাকা করে অর্থ প্রদানেরও ঘোষনা দেন তিনি।
জানা গেছে, আলমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বানিয়াচাপড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রী গরীব পরিবারের সন্তান। তাদের অভিভাবকরা দিন আনে, দিন খায়। কেউ বা ভ্যান রিকশা চালান, আবার কেউ দিন মজুরী খেটে সংসার চালান।
এরই মাঝে তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে যেখানে হিমশিম খায়, সেখানে স্কুল ড্রেস কিনে দেওয়ার সামর্থই বা কি করে হয়। যে কারনে যে যার মতো করে স্কুলে কাপড় পড়ে যেতো।
আর এই বিষয়টি নজরে আসে নব নির্বাচিত ইউপি সদস্য আব্দুল মতিনের। তিনি ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর ফুটবল প্রতীকে ৩ জনকে হারিয়ে ৪৩৮ ভোট পেয়ে মেম্বার নির্বাচিত হবার পর বিদ্যালয়ে গিয়ে ঘোষণা দেন সকল শিক্ষার্থীকে নিজ খরচে স্কুল ড্রেস বানিয়ে দিবেন। ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার (২২ জানুয়ারি) প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল ড্রেস বানিয়ে ওই স্কুলে উপস্থিত হন তিনি। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুজ্জামান তালুকদার নাদিমকে সঙ্গে নিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে স্কুল ড্রেস বিতরণ করেন।
এ সময় দরিদ্র ছাত্র ছাত্রীরা অপ্রত্যাশিত ভাবে স্কুল ড্রেস পেয়ে দারুন উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ে। তাদের অনাবিল আনন্দে মুখরিত হয়ে ওঠে স্কুল চত্তর।
বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র জিহাদ হোসেন জানায়, আমার বাবা ভ্যান চালায়। খেয়ে না খেয়ে কোনমতে সংসার চলে। এরই মাঝে নতুন কাপড় পড়ে স্কুলে আসা যাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার মনে করতাম। কিন্তু আজ আমাদের ম্যাম্বার আঙ্কেল নতুন ড্রেস উপহার দিয়েছে, এতে আমরা খুব খুশি।
ওই বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্রী আফরিনের দিন মজুর বাবা আজমল হোসেন অনেকটা আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, অভাবের সংসারে কতো দিন হলো মেয়েটাকে নতুন কাপড় কিনে দিতে পারিনি। পুরাতন একটা জামা গায়ে দিয়েই সে স্কুলে যাতয়াত করতো। কিন্তু আজ দেখলাম আমাদের এলাকার নতুন ম্যাম্বার আমার মেয়ের মতো সব ছাত্র ছাত্রীদেরকে নতুন ড্রেস কিনে দিয়েছে। এতে একজন গরিব বাবা হিসেবে কতটা যে খুশি হয়েছি, তা বুঝিয়ে শেষ করাতে পারবো না।
স্কুল ড্রেস বিতরণ করা ইউপি সদস্য আব্দুল মতিন বলেন, প্রতিটি শিশুই প্রত্যাশা করে তারা নতুন কাপড় পড়ে স্কুলে যাবে। কিন্তু আমার এলাকার স্কুলটির অধিকাংশ শিক্ষার্থী গরীব হওয়ায় তা সম্ভব হয় না। তারা অধিকাংশই পুরনো কাপড় চোপড় পরে স্কুলে আসে। আর এই দৃশ্যটি দেখেই মুলত আমি এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করি।
এ ব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মেহেরুল ইসলাম বলেন, নব নির্বাচিত ম্যাম্বারের এমন উদ্যোগে আমরা অত্যন্ত খুশি। তিনি শুধু স্কুল ড্রেস বিতরন করেই দমে যাননি, তিনি পড়াশোনায় মনোযোগী করাতে বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষকদের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে অর্থ প্রদানের ঘোষণাও দিয়েছেন।
এ বিষয়ে আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাদিম তালুকদার জানান, তিনি ধন্য এমন একজন শিক্ষানুরাগী ম্যাম্বার পাওয়ায়। বর্তমান সময়ে যেখানে যে যার পকেট ভরাতে ব্যস্ত, সেখানে একজন ম্যাম্বারের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা চাই এমন জনপ্রতিনিধি প্রতিটি এলাকায় নির্বাচিত হোক।
উল্লেখ্যঃ জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের বাঁশতা গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুস সামাদ আকন্দের ৭ ছেলে মেয়ের মধ্যে আব্দুল মতিন ২য়। তিনি ১৭ বছর যাবৎ মালয়েশিয়াতে থাকার পর দেশে এসে গরীব মানুষদের নানা ভাবে উপকার করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রত্যেক ঈদে দরিদ্র মানুষদের শাড়ী লুঙ্গী, সেমাই, চিনি বিতরণের পাশাপাশি সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন এলাকায় অর্থ ও খাবার বিতরণ করেন। তার উদ্দেশ্য- যত দিন তিনি বেঁচে থাকবেন, ততদিন অসহায় মানুষদের উপকার করবেন।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন