
পেটের ক্ষুধা এবং পরিবারের দায়িত্বের কাছে যখন বয়স হার মেনে যায় তখন ৭০ বছর বয়সেও হাফিজার রহমান কে ভ্যান নিয়ে বের হতে হতো অর্থ উপার্জনের জন্যে। কিন্তু বগুড়া শিবগঞ্জে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পরে জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম করা ৭০ বছরের সেই বৃদ্ধ ভ্যনচালক কেও হারাতে হয়েছে তার প্রাণ। যাত্রী বেশে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ভ্যানে উঠে মাঝপথে চায়ের সাথে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে হত্যা করা হয় তাকে। নির্মম ও হৃদয়বিদারক এই হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করে হত্যার সাথে জড়িত এক দম্পতিসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে বগুড়া জেলা পুলিশ। একই সাথে পেশাদার এই চক্রের দৌরাত্মের অবসান ঘটিয়েছে তারা।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন গাইবান্ধা পলাশবাড়ী চান মন্ডলের ছেলে মজনু মন্ডল(৩২), মজনুর স্ত্রী মাহমুদা বেগম(২৫), মজনুর বোন জামাই ও কালুবাড়ি এলাকার মৃত ইসমাইল হকের ছেলে মোঃ মজনু(৩৬) এবং বগুড়া শিবগঞ্জের রহবল এলাকার মৃত আবুল মন্ডলের ছেলে সাইদুর মন্ডল ওরফে মগা(৩২)। এছাড়া সন্দেহভাজন আরও এক আসামি রয়েছে যার নাম প্রকাশ করা হয়নি। শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
এর আগে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার মেঘাখর্দ্দ দক্ষিণপাড়া এলাকার হাফিজার রহমান গাছুকে অচেতন অবস্থায় ডাকুমারা বাজারে পরে থাকতে দেখা যায়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন। পরে চিকিৎসার জন্য গাছুকে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং সেখান থেকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ(শজিমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ১৮ ডিসেম্বর ভোর পৌণে ৬টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বৃদ্ধ ভ্যানচালক গাছু। পরে নিহতের ছেলে আমিনুল ইসলাম অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের নামে শিবগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন করে জেলা পুলিশের প্রেস ব্রিফিংয়ে এসপি সুদীপ চক্রবর্ত্তী বিপিএম জানান, মামলা দায়েরের পর পুলিশ বিভিন্ন মাধ্যম অবলম্বন করে সর্বশেষ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার রহবল এলাকা থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে সাইদুর রহমান ওরফে মগাকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্যমতে রহবল দক্ষিণপাড়া এলাকার জনৈক হাসান আলীর বাড়ি থেকে নিহতের চুরি যাওয়া ভ্যান উদ্ধার করা হয় এবং শুক্রবার গাইবান্ধার পলাশবাড়ী এলাকা থেকে মজনু মন্ডল, তার স্ত্রী মাহমুদা এবং মজনুর বোন জামাই মজনুকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার আরও জানান, ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৫টার দিকে মোকামতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে সোনাতলা বালুয়াহাটা যাওয়ার কথা বলে গাছুর ভ্যান ভাড়া করে মজনু ও মাহমুদা। যাওয়ার পথে ডাকুমারা বাসষ্ট্যান্ড পৌছিলে তারা চা পানের কথা বলে দাঁড়ায়। পরে কৌশলে মাহমুদা গাছুর চায়ের কাপে চেতনানাশক দ্রব্য মিশিয়ে দেয়। চা-সেবন শেষে সকলেই পুনরায় গাছুর ভ্যানযোগে সন্ধ্যা পৌণে ৬টার দিকে ডাকুমারা থেকে বালুয়াহাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটের দিকে ভ্যানচালক গাছু অচেতন হয়ে যান। পরে তাকে ঘটনাস্থলে ফেলে দিয়ে মজনু মন্ডল, তাহার স্ত্রী মাহমুদা ও মজনুর ভগ্নিপতি আরেক মজনু গাছুর ভ্যানটি অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। পরে তারা সাইদুল মন্ডল ওরফে মগার কাছে ভ্যান বিক্রি করে দেন।
পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবর্ত্তী বলেন, গ্রেফতার হওয়া সাইদুল মন্ডল ওরফে মগা ইতিমধ্যে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে। এছাড়াও তিনি বলেন, পেশাদার এই চক্রটি পূর্বেও ছোট ছোট নানা অপরাধ করেছে বলে ধারণা করা যাচ্ছে তবে এইবার তাদের দৌরাত্মের অবসান ঘটানো সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, বগুড়ায় সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে এমন চক্রকে শিকড়সহ উপড়ে ফেলা হবে। আর এ লক্ষ্যে পোষাকে পুলিশ ও সাদা পোষাকে ডিবির টিম সর্বদা দায়িত্বশীলভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শনিবার অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিং এ অন্যান্যদের মাঝে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যথাক্রমে আলী হায়দার চৌধুরী (প্রশাসন) এবং আব্দুর রশিদ (অপরাধ), জেলা গোয়েন্দা শাখার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর সাইহান ওলিউল্লাহসহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃৃন্দ।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন