
করোনা আতঙ্কের মধ্যেই আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বগুড়া গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা। আড়াই’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ মেলা কয়েক একর এলাকাজুড়ে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এ মেলায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। এদিকে এবারে বগুড়া জেলায় হু হু করে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ। এ অবস্থায় মেলায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হলে করোনার সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। এ কারণে এবারের পোড়াদহ মেলা করার লিখিত কোন অনুমতি দেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে ইতিমধ্যে মেলা করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মেলার আয়োজকরা।
জানা গেছে, গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দর সংলগ্ন প্রায় আড়াইশত বছর পূর্ব থেকে স্থানীয় সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে গাড়ীদহ নদী ঘেঁষে সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানা জমিতে একদিনের জন্য মেলাটি বসে। মেলাটি একদিনের হলেও আমেজ থাকে বেশ কয়েকদিন। বাংলার প্রতি বছরের মাঘ মাসের শেষ অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার মেলাটি হয়ে থাকে। মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে আত্নীয়-স্বজন এসে মিলিত হয়। ঈদ বা অন্য কোন উৎসবে জামাই মেয়েদের কিংবা নিকট আত্মীয়দের দাওয়াত না দিলেও চলে কিন্তু পোড়াদহ মেলায় দাওয়াত দিয়ে ধুমধাম করে খাওয়াতেই হবে-যা রেওয়াজে অনেকটা পরিণত হয়েছে। এই মেলাকে ঘিরে উপজেলার দুর্গাহাটা হাইস্কুল মাঠ, সুবোধ বাজার, দাড়াইল বাজারসহ আরো কয়েকটিস্থানে অবৈধভাবে মেলা বসানো হয়। মেলায় প্রসিদ্ধ হলো বড় বড় মাছ, হরেক রকম মিষ্টি, কাঠ বা ষ্টীলের র্ফানিচার, বড়ই (কুল), কৃষি সামগ্রীসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র। মেলায় হাট-বাজারের মতো বিভিন্ন দ্রব্য-সামগ্রী কেনাবেচা হয়ে থাকে। এছাড়া মেলায় আয়োজন করা হয় বিনোদনমূলক সার্কাস, কার খেলা, যাদু ও নাগোরদোলা। তবে সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবার মেলায় পাওয়া যাবে না বাঘাইর মাছ। পোড়াদহ মেলা কমিটির আয়োজক মহিষাবান ইউপির নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মন্ডল স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মেলা করার লিখিত অনুমতি নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে লিখিত অনুমতি না পেলেও ঐতিহ্যবাহী এই পোড়াদহ মেলা তার নিজস্ব গতিতে সম্পন্ন হবে। এক প্রশ্নের জবাবে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মন্ডল বলেন, এরআগে তিনবছর বিভিন্ন কারণেই অন্য জায়গায় মেলা হয়েছে। তবে এবারের পোড়াদহ মেলা পুরনো জায়গাতেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্পন্ন করার সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
করোনা সংক্রমণ বিষয়ে গাবতলী উপজেলা কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবার কর্মকর্তা ডাঃ শারমীনা পারভীন বলেন, বগুড়াতে যেভাবে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে এই অবস্থাতে মেলা না করায় উচিত। এই পরিস্থিতিতে যদি মেলা হয় তাহলে করোনা বাড়তে পারে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া নির্দেশনা মতে ২১ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব ধরনের জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে।
গাবতলীর ইউএনও মোছা: রওনক জাহান পোড়াদহ মেলা প্রসঙ্গে বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলাটি হতে পারে। সেক্ষেত্রে এবারের মেলায় কোনপ্রকার বাঘাইর মাছ ও বণ্যপ্রাণি কেনাবেচা করা যাবে না।
গাবতলী মডেল থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে মেলাটি হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা থাকবে। কিন্তু মেলা করার জেলা কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেলে মেলাটিই হবে অবৈধ। সেক্ষেত্রে পুলিশের সহযোগিতা থাকবে না। তবে মেলায় কিংবা এর আশপাশে কোনপ্রকার অশ্লীন নাচ-গান আর জুয়ার আসর বসানোর চেষ্টা করা হলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন