কোন পথে রংপুর চিনিকল : সিদ্ধান্তহীনতায় লোকসান বেড়েই চলেছে | Daily Chandni Bazar কোন পথে রংপুর চিনিকল : সিদ্ধান্তহীনতায় লোকসান বেড়েই চলেছে | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ০০:১৪
কোন পথে রংপুর চিনিকল : সিদ্ধান্তহীনতায় লোকসান বেড়েই চলেছে
ষ্টাফ রিপোর্টার

কোন পথে রংপুর চিনিকল : সিদ্ধান্তহীনতায় লোকসান বেড়েই চলেছে

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সিদ্ধান্তহীনতায় আখ মাড়াই বন্ধ রাখা দেশের রাষ্ট্রয়াত্ত্ব ১৬টি চিনিকলের মধ্যে ৬টিকে ঘিরে লোকসান বেড়েই চলেছে। গত ২ ডিসেম্বর ২০২০ সালের পরিপত্রে মিলগুলো বন্ধের পরপরই দেশি-বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি, স্থাপনা ও সম্পত্তি ব্যবহার উপযোগী করে তোলার পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতায় এবং স্ব-স্ব মিল থেকে কোন পরিকল্পনা গ্রহনের ক্ষমতা না থাকায় ব্যাংক ঋণের সুদ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় প্রত্যেক মাড়াই মওসুমে শত কোটি টাকা লোকসানের পাল্লায় জমা হচ্ছে। সে নিরীখে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে অবস্থিত রংপুর সুগার মিলটিতে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সর্বমোট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৫১৪ কোটি টাকা।
চলিত অর্থবছরে এর সাথে যোগ হতে পারে আরও ৪১ কোটি টাকা। এই ৪১ কোটির মধ্যে ব্যাংক সুদ বাবদ দিতে হবে ৩৫ কোটি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ দেওয়া হবে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। দৈনিক চাঁদনীবাজার প্রতিনিধিকে এমনটাই জানালেন মিলটির একাউন্স অফিসার রুহুল আমিন। মিলটির সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে গিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে কথা বললে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত করপোরেশন থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের জানানো হয় নি।
জানা গেছে, রংপুর সুগার মিলটি সর্বশেষ সরকারি পরিপত্রের মাধ্যমে ২০২০ সালে ২ ডিসেম্বর মাড়াই বন্ধ রাখে। ১৯৫৭-৫৮ মাড়াই মৌসুমে মিলটি চালু হয়ে দীর্ঘ ৬৫ বছরে মোট লোকসান করেছে ৫১৪ কোটি টাকা। চলতি ২০২০-২০২১ বছরে মিলটি বন্ধ থাকলেও এর লোকসানের খাতায় জমা হয়েছে ৪০ কোটি ৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন ঋণের সুদ দিতে হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি ৫৮ লাখ; বেতন ভাতা ১২ কোটি ৮ লাখ টাকা।
মিলটির অনুকুলে দীর্ঘমেয়াদি ঋন ও কৃষি ঋণ রয়েছে প্রায় ৫৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে মিল থেকে সোনালি ব্যাংক লি. এর পাওনা রয়েছে লাভসহ প্রায় ২১০ কোটি টাকা।
এমন যখন অবস্থা তখন বন্ধ থাকা অন্য ৫টি মিলের হিসাবও একই। এদিকে দেশের অধিকাংশ চিনিকলের আয়ুষ্কাল প্রায় শেষ। অধিকাংশই ব্রিটিশ আমলের। অন্যগুলোর বয়সও ৩০ থেকে ৫০ বছর। ফলে চিনি উৎপাদনে বড় অংকের লোকসান গুনছে প্রতিটি মিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে চিনিকলগুলোতে বহুমুখী পণ্য উৎপাদনের তাগিদ দিয়ে আসছে সরকার। ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর একই পরামর্শ দেয় জার্মান বিশেষজ্ঞ দল। চিনিকল মালিকরা প্রস্তাবও দেয়। তবে সেই ‘প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয়’ জানিয়ে সবগুলো চিনিকল বিদেশি বিনিয়োগে দেওয়া যায় কি না সেটা চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছে বিএসএফআইসি। গত বছরের শুরুতে বহুমুখী বা উপজাত পণ্য উৎপাদনের উপায় খুঁজতে শুরু করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। প্রতিটি মিল কী ধরনের বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করে লাভজনক হতে পারে সেটা জানাতে মিলগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের চিঠি দেয় সংস্থাটি।
এরপর গত বছর জুনে বিভিন্ন মিল থেকে প্রস্তাবও এসেছে। কিন্তু পরবর্তীকালে থেমে গেছে সে উদ্যোগ। তবে বিএসএফআইসি বলছে, মিলগুলো থেকে যে প্রস্তাব এসেছে সেগুলো বাস্তবসম্মত নয়। ফলে সেসব প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএসএফআইসির ১৫টি চিনিকলের প্রস্তাবে বহুমুখী পণ্য হিসেবে স্পিরিট ও অ্যালকোহল উৎপাদন, ফলের রস প্রক্রিয়াজাতকরণ, পানি পরিশোধনাগার নির্মাণ, রাইস মিল, ফ্লাওয়ার মিল, হিমাগার স্থাপন এবং পশুপালনেরও প্রস্তাব ছিল। যার কোনোটিতে সায় দেয়নি বিএসএফআইসি। 
সংকটময় এমন পরিস্থিতিতে শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দেশে উৎপাদিত আখ দিয়ে চিনিকল চালানো সম্ভব নয় উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, এতে লোকসান হবে। শ্রমিকরা বেকার হয়ে আছেন। এই শ্রমিকদের প্রাধান্য দিয়ে বড় বড় ব্যবসায়ীদের দিয়ে লাভজনক কোনো প্রতিষ্ঠান তৈরির পরিকল্পনা নিতে হবে।
তিনি বলেন, আমার কাছে জার্মানির এক ব্যবসায়ী প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু লালফিতার দৌরাত্ম্য বড় বেশি। আমি নিজেও কিছুটা কাবু হয়ে গেছি। কারণ সারাটা জীবন কাজ করে বেড়িয়েছি। সরকারের এই চেয়ারে (মন্ত্রিত্ব) বসে মনে হয়, এটা কবে বদলাবে? তবে চেষ্টা করা হচ্ছে, আমরা চেষ্টা করছি।
এমন টানপোড়নে বন্ধ রাখা মিলগুলোতে সহসাই কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে মনে হয়। তবে আমরা আশা করি দ্রুত দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে আকৃষ্ট করে মিলগুলোতে কর্মযজ্ঞ শুরু হোক।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন