সরকারি চাকুরি দেওয়ার নামে প্রতারণা: ভুয়া সিল ও নিয়োগপত্রসহ বগুড়ায় ৪ জন গ্রেফতার | Daily Chandni Bazar সরকারি চাকুরি দেওয়ার নামে প্রতারণা: ভুয়া সিল ও নিয়োগপত্রসহ বগুড়ায় ৪ জন গ্রেফতার | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১৮ মার্চ, ২০২২ ০০:০৪
সরকারি চাকুরি দেওয়ার নামে প্রতারণা: ভুয়া সিল ও নিয়োগপত্রসহ বগুড়ায় ৪ জন গ্রেফতার
সঞ্জু রায়, স্টাফ রিপোর্টার:

সরকারি চাকুরি দেওয়ার নামে প্রতারণা: ভুয়া
সিল ও নিয়োগপত্রসহ বগুড়ায় ৪ জন গ্রেফতার

কখনো সরকারি ডাক্তার, কখনো সরকারি মেডিকেলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবার কখনো ভূমি অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কিংবা সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে সরকারি চাকুরি দেওয়ার নামে সাধারণ মানুষের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। দেশব্যাপী এই চক্র তাদের প্রতারণা চালালেও বগুড়ায় এসে প্রতারণা করতে গিয়ে ডিবির জালে ধরা পরে যায় চক্রের অন্যতম ৪ সদস্য। 

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে বুধবার জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সদর ও গাবতলী উপজেলায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের এই ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে। আর তাদের জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। 
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার চক কাতুলী গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক আফজাল (৩০), মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে নুরুজ্জামান সজল (৪২), সদর উপজেলার কদিমপাড়া গ্রামের মৃত কছিম উদ্দিনের ছেলে লুৎফর রহমান মালেক (৫৮) এবং ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার মলানকুড়ি গ্রামের রমজান আলীর ছেলে সাদেকুল ইসলাম (৩৮)।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় বগুড়ার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বিপিএম। সংবাদ সম্মেলনে এসপি সুদীপ বলেন, প্রতারণার শিকার একজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে তার নেতৃত্বে এবং জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আলী হায়দার চৌধুরীর তত্বাবধানে ডিবির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর সাইহান ওলিউল্লাহ ও তার একটি চৌকস টিম প্রতারক এই চক্রের অনুসন্ধান শুরু করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার অভিযুক্তদের ভূমি অফিসে চাকরির ১টি ভুয়া নিয়োগপত্র, সোনালী ব্যাংক মতিঝিল শাখার ১টি ভুয়া সিল এবং বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ভূমি অফিসের ভুয়া হাজিরা রেজিষ্টার খাতা উদ্ধারসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়। অভিযুক্তদের প্রাথমিক জিজ্ঞাবাসাদে বেরিয়ে আসে, গ্রেফতারকৃত সকলে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সাধারণ মানুষকে সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতেন।  
ঘটনার বিস্তারিত প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার আরও জানান, অভিযুক্তদের মাঝে গ্রেফতার আব্দুর রাজ্জাক বিআইডবিøউটিএতে অস্থায়ীভাবে মার্ক ম্যানের চাকরি করতো। ২০২০ সালে তার চাকরি চলে যাওয়ার পর  গ্রেফতার সাদেকুল ও রাজ্জাক মিলে সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নাম করে ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরির কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে তারা একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তোলেন। তখন গ্রেফতার হওয়া নুরুজ্জামান সজল ও লুৎফর রহমান তাদের সাথে যোগ দেন। বিভিন্ন স্থানে নানা প্রতারণার অংশ হিসেবে তারা মাহমুদুর রহমান নামের এক যুবকের সাথে পরিচয় গড়ে তোলে। গ্রেফতার হওয়া লুৎফর রহমান ও সাদেকুল নিজেদের ঢাকা বক্ষব্যাধি হাসপাতালের ওয়ার্ড ইনচার্জ হিসেবে পরিচয় দেয় এবং মাহমুদুরকে জানায় শজিমেক হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা তাদের পরিচিত এবং সেখান অস্থায়ী ভিত্তিতে লোক নিয়োগ করা হবে। মাহমুদুরের কেউ পরিচিত থাকলে যেন তাদের জানানো হয়। তখন মাহমুদুর রহমান তার বেকার মামাতো ভাই  সবুজের কথা জানান। তখন গ্রেফতারকৃতরা শজিমেক হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তার মাধ্যমে তার ভাইয়ের চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানায় এবং  চাকরির নিয়োগপত্র পাওয়ার পরে ৭ লাখ টাকায় চুক্তি করেন। পরবর্তীতে গত ফেব্রæয়ারি মাসের ১২ তারিখে প্রতারক চক্রের সদস্যরা সবুজ নামে সেই চাকুরি প্রত্যাশীকে নিয়ে বগুড়া শজিমেকে গিয়ে রীতিমতো প্রতারণার মাধ্যমে তাকে বিশ্বাস করায় যে তাদের সত্যিই হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে সুসম্পর্ক। সেখানে শজিমেক এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া গ্রেফতার রাজ্জাক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সব রকম অফিসিয়াল কাগজ পত্র যাচাই বাছাই করেন এবং পরের দিনে কাজে যোগ দিতে বলেন। পাশাপাশি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চুক্তির ৭ লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানানো হয়। টাকা সব পরিশোদের পরেই তাকে আইডি কার্ড ও নিয়োগপত্র দেওয়া হবে বলে জানায় প্রতারক রাজ্জাক। পরে ৭ লাখ টাকা নিয়ে চক্রের সদস্যরা সবুজকে যোগদানের দিন ভুয়া রেজিষ্ট্রারে স্বাক্ষর দিয়ে তাকে আজগুবি দায়িত্ব দেন। সবুজের মামাতো ভাই মাহামুদুর মাহমুদুর নিয়োগপত্র ও আইডি কার্ড দেওয়ার কথা বললে গ্রেফতার রাজ্জাক মার্চের ৮ তারিখে দেওয়া হবে বলে জানান। তাদের কথা অনুযায়ী সবুজ ও মাহামুদুর ৮ মার্চ নিয়োগপত্র ও আইডি কার্ড নেওয়ার জন্য শজিমেক হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তার রুমে যান। সেখানে গিয়ে তারা জানতে পারেন  রাজ্জাক নামে কোন প্রশাসনিক কর্মকর্তা সেখানে নেই। এছাড়াও শজিমেক হাসপাতালে সবুজ নামে কারও চাকুরিও হয়নি। তখন সবুজ এবং মাহমুদুর বুঝতে পারেন তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবর্তী আরো বলেন, তারা শুধু শজিমেকেই এই প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেননি তারা বগুড়ায় আরো কয়েক জনকে এমনভাবেই চাকুরি দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে। তবে অভিযান এখানেই শেষ নয় আসামীদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারেও অভিযান চালাবে জেলা পুলিশ। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলা করা হয়েছে এবং বৃহস্পতিবারেই তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। 

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন