![logo](https://dailychandnibazar.com.bd/assets/importent_images/logo.png)
আগামীতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আর্থিক সম্ভাবনার অন্যতম দেশ হতে পারতো দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। কিন্তু তেমনটি না ঘটে বরং ফল হয়েছে উল্টো। দিন দিন বাড়ছে ঋণের বোঝা। ভেঙে পড়েছে দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থা। খাদ্য সংকট, বেকার সমস্যা, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে দেশটির সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ মানুষের এই ক্ষোভ জোরালো হতে পারে রাজা পাকসে সরকারের বিরুদ্ধে।
চা উৎপাদনে অগ্রগণ্য, শিক্ষিত জনগণ, পর্যটনখাতে বিপুল পরিমাণ আয়, তা সত্ত্বেও কেন শ্রীলঙ্কার এমন আর্থিক পরিণতি তার জন্য এককভাবে কোনো কারণকে দায়ী করা মুশকিল। শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা বলছেন, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর এমন বিপর্যয়ের মুখে পড়েনি দেশটির অর্থনীতি।
দেশটির বর্তমান শাসনকাঠামোর দিকে তাকালে দেখা যায় যে, ২০ জনের বেশি একই পরিবারের সদস্য রয়েছে ক্ষমতার কেন্দ্রে। মন্ত্রিসভাতেই রাজাপাকসের পরিবারের পাঁচজন রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, সেচমন্ত্রী ও যুবমন্ত্রী তাদের পরিবারেই। এর মধ্যে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে তার ভাইদের মধ্যে তৃতীয়।
২৬ বছর ধরে সামরিক অভিযান পরিচালনার পর শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনী ২০০৯ সালের তামিল টাইগারদের পরাজিত করার মাধ্যমে গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে সক্ষম হয়। আর সেই গৃহযুদ্ধে বিজয় আসে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসের শাসনকালে। পরবর্তীতে আবারও নির্বাচনে জয়ী হয় এই পরিবার। ফলে দীর্ঘমেয়াদে শাসনভার পরিচালনার কারণে দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
উন্নয়নের নামে শ্রীলঙ্কা সরকার গত ১৫ বছরে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, মহাসড়কসহ নানা ধরনের প্রকল্প রয়েছে। চীনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে লঙ্কানরা। ফলে অনেকেই বলছেন, চীনা ঋণের জালে আটকা পড়েছে শ্রীলঙ্কা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ঋণ পুনর্গঠনের অনুরোধও জানান। গত এক দশকে চীনের কাছ থেকে ৫০০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ক্ষমতাগ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে শ্রীলঙ্কায় ভ্যাট-ট্যাক্স কমানোর ঘোষণা দেন। তার এ সিদ্ধান্তে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। সেসময় ভ্যাট প্রদানের হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আট শতাংশে আনা হয়। বলা হয়, এর মূল কারণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করা। কিন্তু সেটি আর কাজে লাগেনি।
৩ বছর আগে, ২০১৯ সালের এপ্রিলে ইস্টার সানডের দিন বোমা হামলার পর শ্রীলঙ্কায় পর্যটকদের সংখ্যা ১৮ শতাংশ কমে গিয়েছিল। ২০২০ সালে এসে আবার করোনার থাবা গ্রাস করে ফেলে দেশটির অর্থনীতিকে। করোনা মহামারিতে শ্রীলঙ্কায় খুব বেশি মানুষের মৃত্যু না ঘটালেও দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন খাত কার্যত ধসে পড়ে। ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশটির পর্যটন খাত ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো লক্ষণই ছিল না। সম্প্রতি দেশটির সরকার কোয়ারেন্টাইনের সব শর্ত তুলে নেওয়া এবং ভ্যাকসিন নেওয়া পর্যটকদের আকৃষ্ট করার কার্যক্রম শুরু হয়।
শ্রীলঙ্কার পর্যটনের সম্ভাব্য বাজার হলো বাংলাদেশ, ভারত, চীন, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি। কিন্তু পর্যটন পুনরায় চালু হওয়ার পর থেকে বহু দর্শনার্থী পূর্বাঞ্চল থেকেও দেশটিতে যাচ্ছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পর্যটক সংখ্যা ২৫ শতাংশ ছিল। তবে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার ফলে সেই অঞ্চল থেকে কমে গেছে পর্যটকদের আনাগোনা।
শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষের হাহাকার শেষ পর্যন্ত দেশটির রাজনীতির মাঠে প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও ভৌগোলিকভাবে চীন ও ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ শ্রীলঙ্কা। কিন্তু দেশটির সরকার এই অর্থনৈতিক বিপর্যয় কিভাবে কাটিয়ে উঠবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সূত্র: ডেক্কান হেরাল্ড, বিবিসি, আল-জাজিরা
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন