
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে পশ্চিমা ক্রেতাদের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্যিক সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। সেটি পূরণ করতেই এবার আগ্রহী চীন। জাহাজে পরিবহনের তথ্য ও জ্বালানি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, নীরবে রাশিয়া থেকে দর কষাকষির মাধ্যমে তেল ক্রয় করছে চীন।
বিশ্বের বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশটির এ পদক্ষেপ সম্পর্কে মস্কোকে খোলাখুলিভাবে সমর্থন করার বিষয়টি এতদিন গোপন ছিল। কিছুদিন রাশিয়া তেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছিল। এর এক মাস পরে চীনের কাছে তেল সরবরাহের বিষয়টি জানা গেলো।
ভর্টেক্সা অ্যানালিটিক্সের তথ্য বলছে, সমুদ্রপথে চীনে রাশিয়ার তেল আমদানি মে মাসে প্রায় রেকর্ড ১১ লাখ ব্যারেল পরিমাণে পৌঁছেছে। বছরের প্রথম তিন মাসে তা ছিল দৈনিক ৭ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল এবং ২০২১ সালে ছিল ৮ লাখ ব্যারেল।
চীনের প্রতিরক্ষা কংগ্লোমারেট নরিনকোর শাখা ঝেনহুয়াকে সঙ্গে নিয়ে এশিয়ার শীর্ষ তেল পরিশোধন কোম্পানি সিনোপেক কর্পোরেশনের বাণিজ্যিক শাখা ইউনিপেক এই আমদানি কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, হংকং-নিবন্ধিত ফার্ম লিভনা শিপিং লিমিটেড সম্প্রতি চীনে রাশিয়ান তেলের প্রধান বহনকারী হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছে।
যদিও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে সিনোপেক। এদিকে, ঝেনহুয়া ও লিভনা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ইউক্রেন আগ্রাসনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অন্যান্য প্রধান তেল আমদানিকারক দেশ রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিষিদ্ধ করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়ার তেল ক্রয়সহ আরও একটি নিষেধাজ্ঞা চূড়ান্ত করছে। অনেক ইউরোপীয় শোধনাগার ইতোমধ্যেই নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া থেকে কেনাকাটা বন্ধই করে দিয়েছে।
বিশ্বের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্য বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠান ভিটোল ও ট্রাফিগুরা রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রোসনেফট থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। সম্প্রতি ইইউ একটি নিয়ম জারি করেছে যা গত ১৫ মে কার্যকর হয়। এতে বলা হয়, ইইউভুক্ত দেশগুলোর চাহিদা মেটানোর জন্য জরুরি নয় এমন ক্ষেত্রে রাশিয়ার তেল উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে তেল কেনা যাবে না।
একজন চীনা ব্যবসায়ী বলেন, ভিটোল ও ট্রাফিগুরা প্রস্থান করার পর পরিস্থিতি কঠোর মোড় নিতে শুরু করে। এর ফলে একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। মূল্য প্রদান করতে সক্ষম এবং রাশিয়ার কাছে বিশ্বস্ত কেবলমাত্র এমন সংস্থাগুলোই এই সংকট পূরণ করতে পারে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রুশ তেলের দাম কমে যাওয়ায় কেনাবেচা আরও বেড়েছে। আগ্রাসন শুরুর আগের তুলনায় প্রতি ব্যারেলে প্রায় ২৯ ডলার কম দামে তেল কিনতে পারছে চীনা ক্রেতারা যা মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দামের চেয়েও কম।
এমনিতেই সরকারি চুক্তি অনুযায়ী, পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৮ লাখ ব্যারেল রাশিয়ার তেল পাচ্ছে চীন। মে মাসে গড়ে প্রতিদিন রাশিয়া থেকে ২০ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করেছে দেশটি, যা মোট তেলের চাহিদার ১৫ শতাংশ।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখলের পর পশ্চিমা দেশগুলো যখন রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তখন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে ছিল চীন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বেইজিং তেল ও গ্যাস কেনা নিয়ে মস্কোর সঙ্গে চারশো বিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই করে। যেটি সে সময় রাশিয়াকে অর্থনৈতিক ভরাডুবি থেকে রক্ষা করেছিল।
সূত্র: রয়টার্স, সিএনবিসি
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন